সকালে খালি পেটে দুধ খেলে কি হয় - দুধ খাওয়ার উপযুক্ত সময় জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আপনি কি সকালে খালি পেটে দুধ খেলে কি হয় এ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। এই আর্টিকেলে আমরা খালি পেটে দুধ খাওয়ার উপকারিতা দুধ এবং দুধ খাওয়ার উপযুক্ত সময় সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে হলে কি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
সকালে খালি পেটে দুধ খেলে কি হয়
এই আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন খালি পেটে দুধ খাওয়ার অপকারিতা, রাতে দুধ খাওয়ার উপকারিতা এবং দুধ কি পরিমান খাওয়া প্রয়োজন ইত্যাদি।

ভূমিকা

পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং প্রোটিনের দুর্দান্ত উৎস হচ্ছে দুধ। দুধকে আমরা আদর্শ খাদ্য হিসেবে জানি। দুধের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানে না এমন মানুষ খুব কমই রয়েছে। আমরা প্রায় সকলেই দুধের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানি। কিন্তু দুধ কিভাবে খেলে পুষ্টিগুণ বেশি পাওয়া যায় এ সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। দুধ এমন একটি তরল জাতীয় খাদ্য যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।


দুধে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি ১২, ভিটামিন ডি, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন এবং ফসফরাস। শরীর সুস্থ রাখতে হলে এসব উপাদান থাকা খুবই জরুরী। সেজন্য পুষ্টিবিদরা প্রতিদিন কমপক্ষে এক গ্লাস দুধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে। দুধ শরীরকে সম্পূর্ণভাবে এনার্জি দিয়ে থাকে। শারীরিক দুর্বলতা দূর করে শরীরকে শক্তিশালী করতে দুধের গুরুত্ব অপরিসীম।

সকালে খালি পেটে দুধ খাওয়ার উপকারিতা

সবচেয়ে বেশি পুষ্টিগুন সম্পন্ন তরল জাতীয় খাদ্য হচ্ছে দুধ। আমরা এখানে খালি পেটে দুধ খেলে কি কি উপকারিতা হয় সে সম্পর্কে আপনাদের সামনে আলোকপাত করবো। তাহলে চলুন খালি পেটে দুধ খাওয়ার উপকারিতাগুলো জেনে নেই-

ইমিউনিটি সিস্টেমকে উন্নত করেঃ দুধ হচ্ছে প্রোটিনের সবচেয়ে ভালো উৎস যা ইমিউনিটি সিস্টেমকে উন্নত করতে সাহায্য করে। শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে উচ্চ মানের যে প্রোটিনের প্রয়োজন হয় তা দুধের মধ্যে পাওয়া যায়।

হাড় মজবুত করেঃ দুধে যে সকল পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা হারের স্বাস্থ্য উন্নত করে। দুধে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে এজন্য হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে। দুধে ক্যালসিয়াম ছাড়াও অন্যান্য উপাদান রয়েছে সেগুলো হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য খুবই জরুরী। হাড়ের সুস্থতা বজায় রাখতে হলে প্রতিদিন কমপক্ষে খালি পেটে এক গ্লাস দুধ খাওয়া প্রয়োজন।

দুর্বলতা দূর করেঃ দুধে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাসসহ শক্তিশালী পুষ্টি উপাদান রয়েছে। যা শরীরকে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। সকালে খালি পেটে এক গ্লাস দুধ পান করলে শরীর দ্রুত গতিতে শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং দুর্বলতা দূর হয়ে যায়।

হাড় শক্তিশালী হয়ে ওঠেঃ দুধে রয়েছে ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম যা হাড়কে শক্তিশালী করে তুলতে সাহায্য করে।

কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ সকালে খালি পেটে দুধ খেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। ক্ষতিকর কোলেস্টেরল দূর করে ভালোর পরিমান বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে, যার ফলে হাড় সুস্থ থাকে।

খালি পেটে দুধ খাওয়ার অপকারিতা

খালি পেটে দুধ পান করা শরীরের জন্য ভালো। তবে যাদের খালি পেটে দুধ পান করলে সমস্যা হয় না তাদের জন্য অত্যন্ত ভালো। কারণ খালি পেটে দুধ পান করলে শরীর কোন পোস্টে শোষণ করতে পারে। কিন্তু খালি পেটে দুধ পান করলে অনেকেরই সমস্যা তৈরি হয়। ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে দুধ পান করার জন্য অনেকেরই পাকস্থলী প্রস্তুত থাকে না যার ফলে দুধ পান করলে এসিডিটি বা অন্যান্য বদহজমের সমস্যা তৈরি হতে পারে।


শরীরভেদে এর প্রবণতা ভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। কারণ প্রত্যেকের শরীরে আলাদা আলাদা প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সেজন্য চিকিৎসকরা বলেন যাদের খালি পেটে দুধ খেলে সমস্যা হয় না তারা খেতে পারেন কিন্তু যাদের সমস্যা হয় তাদের খালি পেটে দুধ খাওয়ায় না খাওয়াই ভালো। দুধের সাথে কোন কিছু মিশিয়ে খাওয়া সবচেয়ে বেশি উত্তম।

দুধ খাওয়ার উপযুক্ত সময়

দুধ কখন খেলে পরিপূর্ণ পুষ্টি পাওয়া যাবে এবং দুধ খাওয়ার উপযুক্ত সময় কখন এ সম্পর্কে অনেকেরই প্রশ্ন থাকে। দুধ খাওয়ার উপযুক্ত সময় হচ্ছে ঘুমানোর এক ঘন্টা আগে। ঘুমানোর এক ঘন্টা আগে যদি গরম দুধ পান করা হয় তাহলে রাতের খাবার সহজে হজম হয়ে যায়। যা শরীরের জন্য অত্যন্ত ভালো। খাবার সাথে সাথে দুধ পান করা উচিত নয়।

কারণ খাবার পরপরই দুধ পান করলে পেটের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের গলোযোগ দেখা দিতে পারে। এজন্য চিকিৎসকরা খাবার খাওয়ার ৪০ থেকে ৫০ মিনিট পর দুধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

প্রতিদিন কি পরিমান দুধ খাওয়া উচিত

শরীরকে সুস্থ রাখতে হলে প্রতিদিন দুধ খাওয়া উচিত। কিন্তু কি পরিমান দুধ খেলে শরীর সুস্থ থাকবে সে বিষয়ে অনেকে ধারণা রাখেন না। আমরা এখানে এ বিষয়ে আপনাদের সামনে আলোকপাত করবো। তাহলে চলুন জেনে নেই-

বয়স ভেদে দুধ খাওয়ার পরিমাণ সম্পূর্ণ আলাদা। কারণ শরীরকে সুস্থ রাখতে শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবাই দুধ পান করে। কারণ দুধে রয়েছে ভিটামিন, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাসসহ আরো অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। প্রাপ্তবয়স্ক থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত প্রতিদিন একগ্লাস বা ২০০ মিলি দুধ পান করতে পারবে।

কারণ বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে শরীরে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি এর ঘাটতি দেখা দিতে থাকে। সেজন্য প্রতিদিন অন্তত এক গ্লাস দুধ ঘুমাতে যাওয়ার আগে খাওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণের জন্য।

রাতে দুধ খাওয়ার উপকারিতা

দুধে নানা ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। তবে বেশিরভাগ মানুষ সকালে নাস্তার সাথে খেয়ে থাকেন। কিন্তু রাতে দুধ খেলে বেশি উপকারিতা পাওয়া যায়। রাতে দুধ খেলে কি কি উপকারিতা পাওয়া যায় সেগুলো জেনে নেওয়া যাক-

  • প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাশ খেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে লো ফ্যাটযুক্ত দুধ খাওয়া উচিত।
  • বর্তমান সময়ে ঘুমের সমস্যা বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে দেখা যায়। সেজন্য ঘুমাতে যাওয়ার আগে চিকিৎসকরা এক গ্লাশ গরম দুধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ঘুমাতে যাওয়ার আগে দুধ খেলে ট্রেস কমিয়ে ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে।
  • ওজন কমাতে দুধ এর ভূমিকা অতুলনীয়। ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস গরম দুধ খেলে শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমতে বাধা তৈরি করে। যার ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণ থাকে।
  • দুধে রয়েছে ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম। যা হাড়ে সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং হাড় মজবুত করে। তবে এর পরিপূর্ণ উপকার পাওয়া যায় রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে দুধ খেলে।

মন্তব্য

দুধ সর্বাধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি তরল খাদ্য। দুধে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ যা শরীরকে শক্তিশালী করে এবং রোগ প্রতিরোধ  ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। একজন মানুষকে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ থাকতে হলে প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ নিয়মিত খাওয়া উচিত। প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url