চিয়া সিড বেশি খেলে কি হয় - চিয়া সিড খাওয়া কি কিডনির জন্য ক্ষতিকর জেনে নিন

সুপ্রিয় পাঠক, আপনি কিচিয়া সিড বেশি খেলে কি হয় এ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে চিয়া সিড বেশি খেলে কি হয় এবং চিয়া সিড খাওয়া কি কিডনির জন্য ক্ষতিকর এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
চিয়া সিড বেশি খেলে কি হয়
এই আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন চিয়া সিড খেলে কি হয়, চিয়া সিড খাওয়ার সময় এবংচিয়া সিড ও মধু একসাথে খেলে কি হয় ইত্যাদি।

ভূমিকা

উন্নত মানের পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ চিয়া সিড। পুষ্টিবিদদের কাছে এটি সুপার ফুড বলে পরিচিত। চিয়া সিড সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত চিয়া সিড খেলে শারীরিক সুস্থতা বজায় থাকে এবং সেইসাথে শরীরের অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণ করে। চিয়া সিডের আকৃতি অনেকটা তিলের বীজের মত। চিয়া সিড স্বাদ ও গন্ধহীন একটি খাদ্য।


এটি খেতে সুস্বাদু না হলেও এর উপকারিতা রয়েছে প্রচুর। চিয়া সিডে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম যা দুধের চেয়ে অনেক গুণ বেশি। এতে ভিটামিন সি এর পরিমাণও রয়েছে অনেক যা পরিমাপ করলে লেবু এবং কমলার চেয়ে সাত গুণ বেশি। এগুলো ছাড়াও চিয়া সিডে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, পটাশিয়াম, প্রোটিন, ওমাগো থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডসহ আরো অন্যান্য পুষ্টি উপাদান।

অত্যাধিক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই খাবারটি আপনি চাইলে প্রতিদিন খেতে পারবেন। তবে এটি প্রতিদিন না খাওয়াই ভালো। কেননা পরিমিত পরিমাণ সবকিছু শরীরে সুস্থতা বয়ে আনে। অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে শরীরকে ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিতে পারে। অনেকে মনে করেন পুষ্টিগুণ বেশি হলে সে খাবার বেশি বেশি খেতে হবে।

কিন্তু বাস্তবে এই ধারণা ভুল বলে প্রমাণিত। কারণ শরীরে নির্দিষ্ট পরিমাণ পুষ্টির প্রয়োজন হয়। অতিরিক্ত পরিমাণ পুষ্টি শরীরে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করে।

চিয়া সিড খেলে কি হয়

আমরা অনেকেই চিয়া সিড এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানিনা। সেজন্য অনেকের কাছে প্রশ্ন থাকে চিয়া সিড খেলে কি হয়। চিয়া সিড খেলে কি হয় এই আর্টিকেলের মাধ্যমে সম্পূর্ণভাবে আপনাদের সামনে তুলে ধরবো। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক-

হার্ট সুস্থ রাখেঃ হার্ট সুস্থ রাখতে চিয়া সিডের রয়েছে অন্যান্য ক্ষমতা। এটি নিয়মিত খেলে শরীরের ক্ষতিকর কলেস্টেরল কমিয়ে হার্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। আপনি যদি প্রতিদিন দুই থেকে তিন চামচ চিয়া সিড খেতে পারেন তাহলে শরীরকে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ রাখবে এবং কার্যক্ষমতা দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিবে।

শারীরিক শক্তি জোগাতেঃ নিয়ম করে চিয়া সিড খেলে শরীর শক্তিশালী হয়ে ওঠে। কারণ চিয়া সিড শরীরকে সম্পূর্ণভাবে শক্তি জোগাতে সাহায্য করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ চিয়া সিডে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে খুবই কার্যকরী। এটি শরীরের মেটাবলিক সিস্টেমকে উন্নত করে শারীরিক সুস্থতা সম্পূর্ণ ভাবে বজায় রাখে।

ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ চিয়া সিড ব্লাড সুগারের মাত্রা স্বাভাবিক রাখে। যার ফলে ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি কম থাকে। এছাড়াও এটি ডায়বেটিস রোগীদের জন্য খুবই ভালো।

হাড় মজবুত করেঃ চিয়া সিডে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম যা হাড় মজবুত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সক্ষম।

বিষাক্ত টক্সিন দূর করেঃ আমাদের শরীরে প্রতিনিয়ত বিষাক্ত টক্সিন তৈরি হচ্ছে। যা শরীরের জন্য অনেক সমস্যা তৈরি করে। নিয়মিত চিয়া সিড খাওয়ার ফলে শরীর থেকে বিষাক্ত টক্সিন বের হয়ে যায়। যার ফলে শরীর সম্পূর্ণভাবে সুস্থ থাকে।

হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ চিয়া সিডে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা খাদ্য পরিপাকে সহায়ক। এটি কষ্টকাঠিন্য দূর করতে খুবই কার্যকরী। পরিমাণ মতো চিয়া সিড খেলে পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়ে যায়।

ত্বকের সুস্থতাঃ ত্বকের সুস্থতা বজায় রাখতে চিয়া সিডের রয়েছে অনন্য ক্ষমতা। এটি ব্যবহারে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় সে সাথে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে।

অনিদ্রা দূর করেঃ চিয়া সিড ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে। যাদের ঘুমের সমস্যা আছে তারা নিয়ম করে চিয়া সিড খাবেন তাহলে মস্তিষ্ক শান্ত থাকবে এবং ঘুম ভালো হবে।

ক্যান্সার প্রতিরোধকঃ চিয়া সিড ক্যান্সার প্রতিরোধে সক্ষম। এটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চিয়া সিড খাবার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় এবং কোলোন পরিষ্কার হয়ে যায়। কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কম থাকে।

এসিডিটি দূর করেঃ প্রতিদিন সকালে খালি পেটে চিয়া সিড ভিজানো পানি পান করলে পেট পরিষ্কার থাকে। যার ফলে এসিডিটির সমস্যা দূর হয়ে যায়। হজমকার্য স্বাভাবিকভাবে করে।

জয়েন্টের ব্যথা দূর করেঃ বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের শরীরে বিভিন্ন ধরনের ব্যথা অনুভব হয়। বিশেষ করে জয়েন্টের ব্যথা। এটি এমন পর্যায়ে যায় যে চলাফেরা অস্বাভাবিক হয়ে যায়। চিয়া সিড জয়েন্টের ব্যথা দূর করতে খুবই কার্যকরী।

চিয়া সিড খাওয়ার সময়

চিয়া সিড সব সময় সকালে খালি পেটে খেলে ভালো উপকারিতা পাওয়া যায়। পুষ্টিবিদরা বলেন আপনি যদি শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে চান তাহলে প্রতিদিন সকালে নিয়ম করে এক গ্লাস পানির সাথে দুই চামচ চিয়া সিড ভিজিয়ে খান। সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খেলে খুবই ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। এতে শরীরের ওজন ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে আসে।


এছাড়াও এই খাবারটি আপনি যেকোনো সময় খেতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে এটি রান্নার সাথে মিশিয়েও খাওয়া যায়। সেজন্য বলা যেতেই পারে এটি খাওয়ার নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। তবে ভালো উপকারিতার জন্য ঘুম থেকে উঠে সকালে খালি পেটে খাওয়া সবচেয়ে বেশি উত্তম।

চিয়া সিড খাওয়া কি কিডনির জন্য ক্ষতিকর

অনেকেই প্রায় প্রশ্ন করে থাকেন চিয়া সিড খাওয়া কিডনির জন্য ক্ষতিকর কিনা। চিয়া সিড কিডনির জন্য কোন ভাবে ক্ষতি কর নয় বরং কিডনির জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি খাদ্য। কেননা চিয়াসিডে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগণ যা শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বের করে শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। নিরামিষ এবং বিটামিন মিনারেল সম্পন্ন।

এছাড়া চিয়া সিডে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং ফাইবার যা শরীরকে সম্পূর্ণভাবে শক্তি যোগায় এবং কিডনিকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। যতগুলো নীরব ঘাতক রোগ পৃথিবীতে রয়েছে সেগুলোর মধ্যে কিডনি রোগ অন্যতম একটি। সেজন্য এখন থেকে সচেতন হন কোন কোন খাবারে আপনার কিডনি ভালো থাকবে এবং কোন কোন খাবারে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সে বিষয় সম্পর্কে।

চিয়া সিড বেশি খেলে কি হয়

অতিরিক্ত কোন কিছু খাওয়াই স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো নয়। চিয়া সিড অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হলেও অতিরিক্ত খাওয়া শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে। চিয়া সিড অতিরিক্ত পরিমাণ খাওয়ার ফলে সমস্যা তৈরি হতে পারে। যেমন পেটে ফোলা ভাব, বমি বমি ভাব, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি। পরিমাণ মতো সবকিছু খাওয়া সুস্বাস্থ্যের অন্যতম শর্ত।

আপনি যদি একজন স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তি হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই খাবার খাওয়া বিষয়ে সচেতন। কেননা স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তি কখনো শরীরকে হুমকির দিকে ঠেলে দিবে না।

চিয়া সিড সম্পর্কিত কয়েকটি প্রশ্ন এবং উত্তর

প্রশ্নঃ চিয়া সিড কি রাতে খাওয়া যায়?

উত্তরঃ রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে চিয়া সিড খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। চিয়া সিডের সম্পূর্ণ উপকারিতা পাওয়ার জন্য পুষ্টিবিদরা সকালে খালি পেটে এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে খাওয়ার কথা বলেন।

প্রশ্নঃ চিয়া সিড খেলে কি গ্যাস বাড়ে?

উত্তরঃ স্বাভাবিক নিয়মে চিয়া সিড খেলে পেটের গ্যাস দূর হয়ে যায়। কিন্তু এই খাদ্যটি অতিরিক্ত পরিমাণ খাওয়ার ফলে পেটে গ্যাসের সমস্যা তৈরি হয়। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার।

প্রশ্নঃ চিয়া সিড কি দুধের সাথে খাওয়া যায়?

উত্তরঃ চিয়া সিড গরম দুধের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়। তবে গরম দুধে মিশানোর পর ১৫ মিনিট রেখে খেতে হবে। এর বেশিক্ষণ রাখলে এই খাবারের মান ঠিকঠাক থাকবে না।

চিয়া সিড ও মধু একসাথে খেলে কি হয়

সুপারফুড হিসেবে আমরা চিয়া সিডকে চিনি। এটি অনেক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি খাদ্য। এটি শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে খুবই কার্যকরী। অপরদিকে মধুকেও সর্ব রোগের মহৌষধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কারণ মধুর মধ্যেও এমন অনেক গুণ আছে যেগুলো শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজন। এই দুইটি খাবার অধিক পুষ্টিগণ সম্পন্ন হওয়ার কারণে একসাথে খেলে দ্বিগুণ উপকারিতা পাওয়া যায়।

প্রতিদিন এক চামচ করে চিয়া সিড খেলে শরীরের শক্তি বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। সেই সাথে মধু যুক্ত করলে তা আরো দ্বিগুণ উপকার পাওয়া যায়। মধুর সাথে চিয়া সিড মিশিয়ে খেলে শরীরের অতিরিক্ত ওজনও দ্রুত কমে যায়। এ দুটি একসাথে খেলে শরীরের ক্লান্তি ও অবসাদ খুব সহজে দূর হয়ে যায়। সেজন্য আপনি শরীরকে শক্তিশালী এবং চিকন দেখাতে চাইলে নিয়ম করে এই দুটি উপাদান খেতে পারেন। তাহলে আশা করছি ভালো ফলাফল পাবেন।

লেখকের মন্তব্য

উপরের আলোচনার মাধ্যমে আমরা চিয়া সিড এর গুনাগুণ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেয়েছি। চিয়া সিড পুষ্টিগণ সমৃদ্ধ এটি সত্য কিন্তু এর পরিপূর্ণ পুষ্টি পাওয়ার জন্য নিয়ম করে এবং পরিমাণ মতো খাওয়া প্রয়োজন। পুষ্টি বেশি পাওয়ার আশায় অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। কেননা অতিরিক্ত যেকোন খাবার স্বাস্থ্যের জন্য হানিকর।

প্রিয় পাঠক, এ আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু বান্ধব এবং পরিবারের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url