বোম্বাই মরিচ খাওয়ার উপকারিতা - বোম্বাই মরিচের আচার বানানোর নিয়ম

প্রিয় পাঠক, আপনি কি বোম্বাই মরিচ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনাকে সাহায্য করবে। এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমরা আপনাকে বোম্বাই মরিচ খাওয়ার উপকারিতা এবং বোম্বাই মরিচ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
বোম্বাই  মরিচ খাওয়ার উপকারিতা

এ আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন বোম্বাই মরিচের আচার তৈরি করার নিয়ম, বোম্বাই মরিচ খাওয়ার নিয়ম এবং বোম্বাই মরিচের অপকারিতা ইত্যাদি।

ভূমিকা

মরিচের কয়েকটি প্রজাতি রয়েছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে বোম্বাই মরিচ। এই বোম্বাই মরিচ খেতে অনেক ঝাল। নাগাসহ এর আরো অন্যান্য নাম রয়েছে। এই মরিচটি এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশ যেমন বাংলাদেশ শ্রীলংকা এবং ভারতের অনেক জায়গায় চাষ করা হয়। বর্তমানে এটি বাংলাদেশের সিলেট ও বরিশালে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়ে থাকে।


বোম্বাই মরিচ তীব্র ঝাল হওয়ার কারণে এটি অনেকেই পছন্দ করে। এ মরিচে রয়েছে নানা ধরনের উপকারিতা যা জানলে আপনি অবাক হবেন। অসুস্থতার কারণে মুখে রুচি চলে গেলে এই মরিচ খাওয়া হয় রুচি ফিরিয়ে আনতে। এছাড়াও এই মরিচটি খেলে শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এটি বিভিন্ন ধরনের জটিল ও কঠিন রোগ থেকে শরীরকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

বোম্বাই মরিচ খাওয়ার উপকারিতা

বোম্বাই মরিচ খেতে অনেক ঝাল হলেও এটি অনেক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। এ মরিচ খেলে নানা ধরনের উপকারিতা পাওয়া যায়। তাহলে চলুন উপকারিতাগুলো জেনে নেওয়া যাক-

মুখের রুচি বৃদ্ধি করেঃ বোম্বাই মরিচ মুখে রুচি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। অনেক সময় অসুস্থ বা বিভিন্ন কারণে আমাদের মুখে রুচি চলে যায়। এই মরিচটি ঝাল হওয়ার কারণে এটি মুখে রুচি বৃদ্ধি করে সেই সাথে খাবার খাওয়ার চাহিদা বাড়িয়ে দেয়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ বোম্বাই মরিচে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করেঃ বোম্বাই মরিচ ক্যান্সার প্রতিরোধে সক্ষম। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধিতে বাধা তৈরি করে। সেজন্য এই মরিচ খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক অংশে কমে যায়।

ত্বকের সুস্থতা বজায় থাকেঃ ত্বকের সুস্থতা বজায় রাখতে বোম্বাই মরিচের গুরুত্ব অপরিসীম। বোম্বাই মরিচে রয়েছে ভিটামিন ই যা ত্বকে প্রাকৃতিক তেল তৈরি করতে সাহায্য করে। সেজন্য ত্বক সুস্থ থাকে।

ক্যালোরি মুক্তঃ বোম্বাই মরিচ ক্যালরি মুক্ত। এতে রয়েছে জিরো ক্যালরি। এটি খেলে শরীরে মেটাবলিজম এর পরিমাণ ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারীঃ বোম্বাই মরিচ রক্তে সুপার নিউটনের সাহায্য করে। সেজন্য এটি ডায়বেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত খেতে পারেন।

হজম শক্তি বৃদ্ধি করেঃ বোম্বাই মরিচে রয়েছে ফাইবার যা হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। বোম্বাই মরিচ খেলে খুব সহজে খাদ্য পরিপাক হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়ে যায়। কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিলে এই মরিচ খেতে হবে তাহলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।

শরীর চাঙ্গা রাখেঃ বোম্বাই মরিচ খাওয়ার ফলে মস্তিষ্ক থেকে এনডোরফিন্স নিশ্চিহ্ন হয় যার ফলে মন মেজাজ চাঙ্গা হয়ে ওঠে। মন মেজাজ ভালো হয়ে উঠলে শরীর অটোমেটিক চাঙ্গা হয়ে যায়।

ত্বকের ইনফেকশনজনিত সমস্যা দূর করেঃ মুম্বাই মরিচ ত্বকের ইনফেকশনজনিত সমস্যা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে শরীরের যে কোন অংশের ইনফেকশন দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

আয়রনের ঘাটতি পূরণ করেঃ যাদের শরীরে আয়রনের পরিমাণ কম রয়েছে তারা নিয়মিত বোম্বাই মরিচ খেতে পারেন। কারণ এটি আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে।

চোখ সুস্থ রাখেঃ ভিটামিন সি এর পাশাপাশি এই মরিতে রয়েছে বিটাকারোটিন। যা চোখের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি চোখের বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হওয়া থেকে চোখকে মুক্ত রাখে।

মুম্বাই মরিচ চাষ পদ্ধতি

মুম্বাই মরিচ কিভাবে চাষ করা হয় এ সম্পর্কে অনেকের ধারণা নেই। আমরা এখানে বোম্বাই মরিচ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করব। বোম্বাই মরিচ শীত ও গ্রীষ্ম উভয় ঋতুতে চাষ করা যায়। এটি চাষ করার জন্য অতিরিক্ত বৃষ্টি বা অতিরিক্ত খরা এ ধরনের আবহাওয়া কোনোটিই ভালো নাই। এই মরিচটি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হলেও এটি বাসার ছাদে টবেও চাষ করা যায়।
টবে চাষ করতে হলে প্রয়োজন উপযুক্ত মাটি। এ মরিচের একটি গাছ থেকে অনেক মরিচ পাওয়া যায়। বোম্বাই মরিচের গাছ দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে। বোম্বাই মরিচ তবে চাষ করতে হলে যে নিয়মগুলো মানতে হবে সেগুলো হচ্ছে উপযুক্ত মাটি, জৈব সার, নিমখোল, বালি আরো অন্যান্য উপাদান একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে সেগুলো টবে ঢেলে দিতে হবে।

তারপর সেখানে মরিচের গাছ লাগাতে হবে। এভাবে টবে এই গাছ লাগালে দীর্ঘদিন ধরে সে গাছ থেকে মরিচ খেতে পারবেন। তবে খেয়াল করতে হবে মরিচের গাছে অতিরিক্ত পানি দেওয়া যাবে না বা একেবারে শুকিয়ে রাখা যাবে না। তাহলে গাছ ভালো হবে না।

বোম্বাই মরিচার আচার বানানোর নিয়ম

মুখের রুচি বাড়াতে বোম্বাই মরিচের আচার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মরিচের আচার বেশিরভাগ মানুষের অনেক পছন্দের। আমরা এখানে বোম্বাই মরিচের আচার বানানোর নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করব।

প্রয়োজনীয় উপকরণ

  • বোম্বাই মরিচ ৫০০ গ্রাম
  • তেতুল গুলানো পানি এক কাপ
  • মেথি ও পাঁচফোড়ন দুই টেবিল চামচ
  • আদা বাটা এক চা চামচ
  • রসুন বাটা দেড় চা চামচ
  • হলুদের গুঁড়া আধা চা চামচ
  • মরিচের গুঁড়া দুই চা চামচ
  • চিনি এক কাপ
  • ভিনেগার এক কাপ
  • সরিষার তেল দুই কাপ
  • রসুনের কোয়া ১৫ থেকে ২০টি
  • কাঁচা আমের টুকরো পরিমাণ মতো

প্রস্তুত প্রণালীঃ প্রথমে মরিচগুলোকে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে এবং পানি ঝরিয়ে নিতে হবে। তারপর মরিচগুলোকে মাঝখান থেকে কেটে ভিনেগার দিয়ে পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। সরিষা ধনে ও পাঁচফোড়ন একসাথে ভিজে গুড়ো করে নিতে হবে। এরপর সবগুলো উপকরণ একসাথে মিশিয়ে অল্প আঁচে কিছুক্ষণ জ্বাল দিতে হবে এবং ভালোভাবে কষিয়ে নিতে হবে।

জাল দেওয়া হয়ে গেলে পুরো মসলাগুলো দিয়ে ভালোভাবে নেড়ে নামিয়ে ফেলতে হবে। তারপর চার থেকে পাঁচ দিন রোদে সুখে নিতে হবে এবং কাঁচের বোতলে ভালোভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। এভাবে তৈরি করা হয় কাঁচা মরিচের আচার।

বোম্বাই মরিচ খাওয়ার নিয়ম

বোম্বাই মরিচ বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। বিশেষ করে এটি বাঙালিরা তরকারি রান্নার কাজে বেশি ব্যবহৃত করে থাকে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ভাজা তৈরিতে এই মরিচ ব্যবহার করা হয়। যারা ভাতের সাথে মরিচ খেতে পছন্দ করেন তারা এটি সরাসরি খেয়ে থাকেন। বোমায় মরিচের আচার বর্তমানে বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

এ মরিচ দিয়ে আচার তৈরি করলে সে আচার অনেক সুস্বাদু হয়। এগুলো ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ভর্তা তৈরিতে এই মরিচ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

বোম্বাই মরিচ খাওয়ার অপকারিতা

বোম্বাই মরিচে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ তা আমরা সবাই জানি। তবে এই মোড়ে অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে কি কি অপকারিতা হয় সে সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা।বোম্বাই তীব্র স্বাদ ওতীব্র তাপমাত্রার কারণে মানবদেহে বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করতে পারে। অতিরিক্ত পরিমাণ মরিচ খাওয়ার ফলে পেটে ব্যথাসহ হজমের সমস্যা তৈরি হতে পারে।

এটি ডাইজেস্টিভ সিস্টেমকে অসুস্থতায় পরিণত করতে পারে। সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ মরিচ খাওয়ার নির্দিষ্ট পরিমাণ মরিচ খাওয়াই প্রয়োজন। অতিরিক্ত মরিচ খেলে পেটে ঘা সহ অন্যান্য সমস্যা তৈরি হতে পারে। সেজন্য পরিমাণমতোমরিচ খাওয়া শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

লেখক এর মন্তব্য

বোম্বাই মরিচে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যা খেলে শরীরে ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। তবে ভিটামিন সি চাহিদা পূরণের জন্য অতিরিক্ত মরিচ খাওয়া শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। সেজন্য আপনার শরীরের চাহিদা এবং সহ্যকর ক্ষমতা অনুযায়ী মরিচ খাওয়া উচিত। প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু বান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url