এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের উদ্দেশ্য এবং কার্যাবলী - বাংলাদেশের উন্নয়নে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ভূমিকা জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আপনি কি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (Asian Development Bank) এডিবি এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং কার্যাবলী সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনাকে সাহায্য করবে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং কার্যাবলী ও বাংলাদেশের উন্নয়নে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (Asian Development Bank) এডিবি এর ভূমিকা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং কার্যাবলী
এই আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন কখন থেকে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের লেনদেন শুরু হয়, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের বর্তমান সভাপতি কে এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের বর্তমান সদস্য সংখ্যা কত ইত্যাদি।

ভূমিকা

১৯ ডিসেম্বর ১৯৬৬ সালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (Asian Development Bank) এডিবি আঞ্চলিক উন্নয়ন ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এশিয়া মহাদেশের অন্তর্গত দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এই ব্যাংক গঠিত হয়। এই ব্যাংক যখন প্রতিষ্ঠা করা হয় তখন এর সদস্য দেশের সংখ্যা ছিল ৩১টি। যা পরবর্তী সময়ে সদস্য দেশের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ৬৮টি ।


এডিবি ব্যাংক প্রাথমিক পরিকল্পনাকারী দেশ হচ্ছে জাপান। কিছু সংখ্যক জাপানীয়দের আগ্রহের ভিত্তিতে এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করার চিন্তা করা হয়। ১৯৬২ সালে তারা ব্যাংকের মাধ্যমে আঞ্চলিক উন্নয়নের উদ্দেশ্যে বেসরকারি পরিকল্পনা বা চিন্তাধারা গ্রহণ করে। পরবর্তী সময়ে সরকার সরাসরি এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠা উদ্যোগে জড়িয়ে পড়ে ।

১৯৬৬ সালে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠার পর শীর্ষস্থানীয় পদ লাভ করে জাপান। এই ব্যাংকটির সভাপতির আসন্ন দখল করে জাপান। পরবর্তীতে ঋণ সহায়তা কার্যক্রমে দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দনেশিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং ফিলিপাইন কে সম্পৃক্ত করে। এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে এশীয় দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়ন।

কেননা বিশ্ব ব্যাংকের মাধ্যমে অনেক সময় এই দেশগুলোর উন্নয়ন নাও হতে পারে কিংবা এই দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশ্ব ব্যাংক ভূমিকা নাও পালন করতে পারে। মূলত সে লক্ষ্যে করা হয় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

আঞ্চলিক উন্নয়নের লক্ষ্যে এই ব্যাংক ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এটি এশীয়া ও প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে অবস্থিত দেশগুলোর আর্থিক উন্নয়ন এবং আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করার লক্ষ্যেই এই ব্যাংক গঠিত হয়। এডিবি সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ঋণ প্রদান, প্রযুক্তিগত উন্নয়নে সহায়তা, অনুদান এবং ইকুইটি বিনিয়োগ সরবরাহ করে তার সদস্য এবং অংশীদারদের সাহায্য করে থাকে।

অর্থনৈতিক অবকাঠামো শক্তিশালী করার লক্ষ্যে এ ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অর্থাৎ এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নকে আরো দ্রুত বেগবান এবং সহজ করাই হচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মূল উদ্দেশ্য। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এর মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে অব্যাহত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করার মাধ্যমে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলগুলোর সদস্য দেশসমূহের দরিদ্র বিমোচন করা এবং এসব অঞ্চলের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা।

এই ব্যাংকটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সহযোগী সংস্থা হিসেবে পরিচিত। ঋণ প্রদান এবং অনুদান প্রদানের মাধ্যমে দরিদ্র দেশগুলোকে সাহায্য করে থাকে এই ব্যাংক। এ ব্যাংক ঋণ ও অনুদান প্রদান ছাড়াও প্রযুক্তি ও আন্তঃবাণিজ্য সহজতর করার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কার্যক্রম

এশিয়া মহাদেশের দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহযোগিতা করায় উদ্দেশ্যে এই ব্যাংক গঠিত হয়। এই ব্যাংকের যেসব কার্যক্রম পরিচালিত হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সহজে ঋণ প্রদান, অনুদান, প্রযুক্তিগত ও কারিগরি সহায়তা প্রদানসহ আরো অন্যান্য পরামর্শ। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক উন্নয়নশীল সদস্য দেশগুলোর সরকার এবং ওইসব দেশের উদ্যোক্তাদের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি প্রকল্পকে আর্থিক ঋণ প্রদান, কারিগরি সহায়তা, ইকুইটি বিনিয়োগের ব্যবস্থা এবং নিশ্চয়তা প্রদান করে থাকে।

সেজন্য বৃহৎ পরিসরে অর্থনৈতিক অবকাঠামো উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হয়। যার প্রেক্ষিতে সেইসব অঞ্চলগুলোতে জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়। এগুলো ছাড়াও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক নিয়মিতভাবে পরামর্শ দাতা সংস্থা হিসেবে এবং যেকোনো পলিসি নির্ধারণের ক্ষেত্রে কাজ করে থাকে। এডিবি আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার এবং বিশ্ব ব্যাংকের কার্যক্রমের সাথে সমন্বয় বজায় রেখে কার্যক্রম পরিচালিত করে থাকে।

তাই বলা যেতে পারে আঞ্চলিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এডিবি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে।

কখন থেকে এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের লেনদেন শুরু হয়

১৯৬৬ সাল থেকে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের লেনদেন শুরু হয়। এসে দেশগুলোর অর্থনৈতিক অবকাঠামো দ্রুত গতিতে উন্নয়ন বেগবান ও সহজ করার উদ্দেশ্যে ১৯শে ডিসেম্বর ১৯৬৬ সালে এই ব্যাংকটি গঠিত হয়। এশিয়ার এমন কতগুলো দেশ রয়েছে যাদের জীবনযাত্রার মান অনুন্নত। তারা বেশিরভাগই দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে।

এইসব দেশগুলোর দারিদ্রতা দূর করার জন্য এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প যেমন সরকারি বেসরকারি সংস্থাগুলোকে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে উন্নয়ন সাধিত করা। দারিদ্রতা নিরসন করে বিভিন্ন দেশের বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে এই ব্যাংকটির কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

বাংলাদেশের উন্নয়নে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ভূমিকা

১৯৭৩ সালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সদস্য পদ লাভ করে বাংলাদেশ। ঢাকায় এডিবির প্রথম কার্যালয় স্থাপিত হয় ১৯৮২ সালে। এডিবি বাংলাদেশের উন্নয়নে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করে থাকে। সেজন্য বাংলাদেশকে এডিবির উন্নয়ন তহবিলের অন্যতম গ্রাহক বলে বিবেচনা করা হয়। প্রথমদিকে বাংলাদেশকে খাদ্যে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনে সহায়তা করার জন্য ঋণ প্রদান করেছে।

পরবর্তী সময়ে শিক্ষা, অর্থবাজার, পানি সরবরাহ এবং পানি নিষ্কাশন বিভিন্ন ধরনের সহায়তা প্রদান করে। এরপর এডিবির সহায়তা বিভিন্ন দিকে সম্প্রসারিত হয়। এরপর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, দক্ষতা বৃদ্ধি, জ্বালানি খাতে দক্ষতা, নগরগুলোকে বসবাসের জন্য আরো উপযোগী করে তোলা, অর্থবাজার ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, পানি সম্পদ ব্যবস্থার উন্নয়ন বৃদ্ধি ইত্যাদি সহায়তা বাংলাদেশ সরকারকে দিয়ে যাচ্ছে এডিবি।

এ সহায়তার ফলে বাংলাদেশের দারিদ্রতা হ্রাস করতে সক্ষম হয়েছিল এবং এর সফলতা হারও ছিল অনেক। ধীরে ধীরে দারিদ্রসীমার নিচে থাকা মানুষের সংখ্যা ক্রমে কমে যেতে থাকে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এডিবি’র ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান খাতগুলোর প্রায় সবগুলো ক্ষেত্রেই সহায়তা দিয়ে থাকে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক।

এই সহায়তার ৩৭ ভাগ ব্যবহার করা হয়ে থাকে কৃষি ও প্রাকৃতিক সম্পদ থাকে। বাংলাদেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এডিবি। বাংলাদেশের দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন মিটানোর জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে পরিপূর্ণ সাজানোর উদ্দেশ্যে ৫০০ মিলিয়ন ডলার কৃষিভিত্তিক অর্থ অনুমোদন করেন।

এডিবি হচ্ছে বাংলাদেশের প্রধান এবং অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী। এ পর্যন্ত এডিবি বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য ২৯ হাজার ৬৬৬৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারঋণ প্রদান করে সহায়তা করে এবং অনুদান সহায়তা করে ৫৫৩.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশের করোনা মহামারী সময়ও অর্থনৈতিক অনুদান প্রদান করে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করেছে এডিবি।

এডিবির ভাইস প্রিন্সিপাল জানিয়েছেন করোনা মহামারীর পর বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক পুনরুদ্ধার ক্ষেত্রেও সহযোগিতার মাধ্যমে সব সময় বাংলাদেশের পাশে থেকেছে। বাংলাদেশের উন্নয়নের সহায়তার ক্ষেত্রে এডিবি যে সকল বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েছে সেগুলো হল বিদ্যুৎ, প্রাণি সম্পদ, স্থানীয় সরকার, শিক্ষা, পরিবহন, জ্বালানি, সুশাসন এবং আর্থিক ও বেসরকারি খাত ইত্যাদি।

দেশকে ক্ষতিকর প্রভাব থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে সহায়তার জন্য বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী ধন্যবাদ জানায় এডিবিকে।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের বর্তমান সদস্য সংখ্যা কত

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৬৮টি। ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এডিবি। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে এর সদস্য দেশের সংখ্যা ছিল ৩১টি। ২০২০ সালে ২৬ শে আগস্ট পর্যন্ত এডিবি সদস্য দেশের সংখ্যা দাঁড়ায় ৬৮টি। এগুলোর মধ্যে ৪৮টি দেশই হচ্ছে এশিয়া ও উপমহাসাগরীয় এলাকা এবং বাকি ২০টি দেশ হচ্ছে বর্হিবিশ্বের।

এই ব্যাংকটি এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় সামাজিক ও অর্থনৈতিক কমিশনের অঞ্চলের সদস্য এবং অন্যান্য উন্নত দেশগুলোর সমন্বয়ে গঠন করা হয়। বাংলাদেশ এই ব্যাংকের সদস্য পদ লাভ করে ১৯৭৩ সালে যা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে। বিশ্ব ব্যাংকের মতই এডিবি বা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক গঠন করা হয়।

এ ব্যাংকের ভোট প্রদানের সীমারেখা নির্ধারণ করা হয়েছে সদস্যভুক্ত দেশগুলোর অর্থনৈতিক বুনিয়াদের উপর নির্ভর করে যা বিশ্ব ব্যাংকের সমস্তরের।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের বর্তমান সভাপতি

ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করা হয়ে থাকে মূলতঃ বোর্ড অফ গভার্নেস থেকে। তিনি ব্যাংক পরিচালনা করে থাকেন পরিচালনা পরিষদের সভাপতি হিসেবে। এই প্রেসিডেন্ট পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়ে থাকেন এবং পরবর্তী সময়ে তিনি আবারও নির্বাচিত হতে পারেন। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের বর্তমান সভাপতির নাম মাসাত সুগু আসাকাওয়া। জাপানিরা এডিবির সর্ববৃহৎ মালিকানা হওয়ায় তাদের মধ্য থেকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়ে থাকে।

প্রতিবেদকের মন্তব্য

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এডিবি এশিয়ার দেশগুলোর এবং প্রশান্ত মহাসাগর এলাকাগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের ঋণ দিয়ে সহায়তা প্রদান করে থাকে। ফলে যে সকল দেশের জীবনযাত্রার মান দারিদ্র সীমার নিচে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হতে থাকে। এসব ক্ষেত্রে এডিবি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এছাড়াও বাংলাদেশের উন্নয়নে এডিবির গুরুত্ব অনেক। প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনি আপনার আত্মীয়-স্বজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url