কেন খাবেন হিমালয়ান পিংক সল্ট? এর উপকারিতা এবং পিংক সল্ট এর অপকারিতা

প্রিয় পাঠক, আপনি কি হিমালয়ের পিক সল্টের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আসুন এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে হিমালয়ের পিংক সল্টের উপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে চাইলে সম্পূণ আর্টিকেল মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
কেন খাবেন হিমালয়ান পিংক সল্ট
এটি পড়লে আরো জানতে পারবেন হিমালয়ান পিংক সল্ট এর দাম, হিমালয়ান পিংক সল্ট এর ব্যবহার এবং পিংক সল্ট কোথায় পাওয়া যায় হিমালয়ের ইত্যাদি।

ভূমিকা

লবণ রান্নাবান্না অতি প্রয়োজনে একটি মসলা। লবণ ছাড়া দৈনন্দিন জীবনের রান্নাবান্না একেবারে অচল। কিন্তু এই লবণ অতিরিক্ত খাওয়া শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকর। বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় খাবার লবণ। আপনারা যারা লবণ খাওয়া নিয়ে চিন্তিত যে লবণ খেলে বিভিন্ন সমস্যা হয় বা হতে পারে। লবণ খাওয়া নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই কারণ লবণের বিকল্প হিসেবে এখন তৈরি হচ্ছে পিংক লবণ।

যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে বা কিডনিজনিত সমস্যা আছে এবং অন্যান্য বিভিন্ন রোগ রয়েছে যে কারণে লবণ কম খাওয়া প্রয়োজন। তারা এই পিংক লবণ খেতে পারেন কারণ পিংক লবণে রোগের কোন ঝুঁকি থাকে না। পিংক লবণ অত্যন্ত উপকারী একটি লবণ কারণ এটি একটি প্রাকৃতিক লবণ। এই লবণ ৮০ ভাগের বেশি খনিজ উপাদান দিয়ে গঠিত যেগুলো প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায়।

এ লবণে রয়েছে ৮৫ ভাগ সোডিয়াম ক্লোরাইড, ১৪ ভাগ সালফেট, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, খাবার সোডা, স্ট্রনশিয়াম, বারিক এসিডের সল্ট এবং ফ্লোরাইড এর মত খনিজ পদার্থ।

পিংক সল্টের উপকারিতা

পিংক সল্ট-এ রয়েছে বিভিন্ন ধরনের খনিজ উপাদান যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। আজ আমরা এখানে পিংক সল্টের কয়েকটি উপকারী দিক নিয়ে আলোচনা করব। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক পিংক সল্টের উপকারিতা-

নিম্ন রক্তচাপ দূর করেঃ পিংক সল্টে রয়েছে সোডিয়াম ক্লোরাইড এর মত খনিজ উপাদান যা নিম্ন রক্তচাপ দূর করে রক্তচাপের মাত্রা স্বাভাবিক রাখে।

হাড় মজবুত করেঃ পিংক সল্টে রয়েছে সোডিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম এর মত খনিজ উপাদান। যা হাড় গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ লবণ হাড়কে মজবুত করতে সহায়তা করে।

ত্বকের যত্নেঃ এই গোলাপি লবণ ত্বকের যত্নে অত্যন্ত কার্যকরী। এই লবণ দিয়ে গোসল করলে ত্বক অনেক নরম ও কোমল হয়ে ওঠে। এটি ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে এবং ত্বককে মশ্চারাইজ করে তোলে।

হজম শক্তি বৃদ্ধি করেঃ পিংক সল্ট হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। গোলাপি লবণে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা খাদ্য পরিপাকে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। ফলে এসিডিটি, বদহজম এবং পেটের অন্যান্য সমস্যা হতে পেটকে ভালো রাখে।

পেশির ব্যাথা রোধেঃ শরীরের পেশির ব্যথা দূর করে থাকে পিংক সল্ট। এটি ব্যবহার করলে পেশির ব্যথাসহ অন্যান্য ব্যথা দূর হয়ে যাবে। আপনারা যারা পেশির ব্যথায় ভুগছেন তারা নিয়মিত গোলাপি লবণ ব্যবহার করতে পারেন তাহলে ভালো ফলাফল পাবেন।

মাইগ্রেনের ব্যথা দূর করেঃ গোলাপি লবণ বা পিংক সল্ট মাথাব্যথা দূর করে। এ লবণটি ঔষধের মতো কাজ করে। এক গ্লাস পানির সাথে লেবুর রস এবং গোলাপি লবণ মিশিয়ে খেলে মাথা ব্যথার দ্রুত দূর হয়ে যাবে। এটি মাইগ্রেনের ব্যথাও উপশম করে থাকে।

চুলের খুশকি দূর করেঃ পিংক সল্ট ব্যবহার চুলের জন্য অত্যন্ত ভালো। এটি মাথার ত্বক ভালো রাখতে এবং খুশকি দূর করতে সাহায্য করে। এটি নিয়মিত ব্যবহার করলে চুলের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে সহায়তা করবে।

অনিদ্রা দূর করেঃ অনিদ্রা জনিত সমস্যা প্রায় মানুষের মধ্যে দেখা যায়। গোলাপি লবণের সাথে মধু মিশিয়ে করে খেলে অনিদ্রা সমস্যা দূর হয়ে যাবে। এই মিশ্ররটি সেবনের ফলে ঘুম অত্যন্ত ভালো হবে এবং মানসিক চাপ থেকে দূরে রাখবে।

পুষ্টি ঘাটতি পূরণ করেঃ ডায়েট চলাকালীন সময়ে শরীরে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টির ঘাটতি পরে। হিমালয়ান পিংক সল্ট পুষ্টি ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে।

ক্ষতিকারক টক্সিন দূর করেঃ এ লবণটি খেলে শরীর ডিটক্সিফিট হবে। বিষাক্ত টক্সিন শরীর থেকে বের করে শরীরকে সুস্থ করে তুলবে। কেননা ক্ষতিকারক টক্সিন শরীরকে বিভিন্ন রোগের দিকে ঠেলে দেয়।

রক্তশূন্যতা দূর করেঃ হিমালয়ান পিংক সল্ট রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে। এটি রক্তের লোহিত কণিকার পরিমাণ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি করে।

এজমা সমস্যা দূর করেঃ এ লবণ খেলে ক্রনিক অ্যাজমার সমস্যা দূর হয়। যাদের এ ধরনের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত খেতে পারেন তাহলে ভালো ফলাফল পাবেন।

ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস পানির সাথে পিংক সল্ট মিশিয়ে খেলে অতিরিক্ত ওজন ধীরে ধীরে কমে যাবে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে আসবে।

এনার্জি বৃদ্ধি করেঃ পিংক সল্ট-এ রয়েছে পুষ্টি গুণসম্পন্ন খনিজ উপাদান যা শরীরকে পূর্ণাঙ্গরূপে এনার্জি দিয়ে থাকে। অধিক গুণসম্পন্ন হওয়ায় এটি খেলে দ্রুত শরীরের এনার্জি বৃদ্ধি পায়।

পানির ভারসাম্য বজায় রাখেঃ সুস্থ মানুষের শরীরে পানির পরিমাণ বজায় থাকা খুবই জরুরী। এক গ্লাস পানির সাথে পিংক সল্ট খেলে শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। ফলে শরীরকে সুস্থ সবল ও সতেজ রাখে।

সর্দি কাশি উপশম করেঃ সর্দি কাশি হাঁপানিসহ ঠান্ডাজনিত সকল সমস্যা দূর করতে এ গোলাপী লবণ অতুলনীয়। এ লবণ খেলে দ্রুত সর্দি কাশি উপশম করে। এক গ্লাস পানির সাথে মধু ও গোলাপি লবন মিশিয়ে খেলে ঠান্ডাজনিত সকল সমস্যা দূর হয়ে যায়।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যঃ সাধারণ লবণ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অতিরিক্ত খাওয়া বারণ করা হয়ে থাকে। কিন্তু পিংক সল্ট ডায়াবেটিস রোগীরা সাধারণ লবণের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। কারণ এতে ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে কম ঝুঁকি থাকে। এছাড়াও এটি শরীরের ক্ষতিকারক কোলেস্টরের দূর করতে সাহায্য করে। হার্ট কিডনিসহ অন্যান্য অঙ্গ ভালো রাখতে সাহায্য করে এই গোলাপি লবণ।

হিমালয়ান পিংক সল্ট দাম কত

হিমালয়ান পিংক সল্ট অত্যন্ত উপকারী একটি লবণ। কেননা এটি তৈরিতে প্রাকৃতিক উপাদান বেশি ব্যবহৃত হয়। যা শরীরের জন্য অতি প্রয়োজন। এ লবণে দূষিত পদার্থ থাকে না। হিমালয় পর্বত থেকে এ লবণ উৎপত্তি হয় বলে এজন্য এর নাম হিমালয়ান পিংক সল্ট। হিমালয়ান পিংক সল্ট ১ কেজির দাম ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।

তবে চাহিদা এবং জায়গা ভেদে এই দামের কিছুটা তারতম্য হতে পারে। এ লবণটি দামের তুলনায় গুণগত মান অনেক বেশি। সেজন্য দামের চিন্তা না করে নিয়মিত এ লবণ খাবারে ব্যবহার করতে পারেন তাতে শরীর এবং স্বাস্থ্যের যথেষ্ট উপকার পাবেন।

হিমালয়ান পিংক সল্ট খাবার নিয়ম

পিংক সল্ট সাধারণ লবণের চেয়ে অনেক বেশি উপকারী। পিংক সল্ট বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। যারা খাবারের সাথে অতিরিক্ত লবণ খেতে পছন্দ করে তারা খাবারের তালিকায় এই লবণ রাখতে পারেন। হিমালয়ান পিংক সল্ট রান্না করেও খাওয়া যায় কিন্তু এ লবণ অত্যন্ত ব্যয়বহুল বলে এটি রান্নার কাজে তেমন ব্যবহার করা হয় না।

এটি বেশিরভাগ শরবত করে খাওয়া হয়ে থাকে। একগ্লাস পানির সাথে লেবুর রস পরিমাণ মতো হিমালয়ান পিংক সল্ট মিশিয়ে খেলে ওজন কমাতে সাহায্য করবে। প্রতিদিন খালি পেটে পানির সাথে হিমালয়ান পিংক সল্ট মিশিয়ে খেলে শরীরের নানা ধরনের উপকার পাওয়া যায়।

যেমন শরীরকে ডিহাইড্রেড রাখে, পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখে, পেশির ব্যথা কমায়, হাড় ভালো রাখে এছাড়াও বিভিন্ন রোগের সমাধান হিসেবে কাজ করে থাকে এ লবণ।

আসল পিংক সল্ট চেনার উপায়

হিমালয়ান পিংক সল্টে নানা ধরনের উপকারিতা রয়েছে, যদি সেটি হয় আসল। আজ আমরা এখানে আসল হিমালয়ান পিংক সল্ট কিভাবে চেনা যায় সে বিষয়ে আলোকপাত করবো। তাহলে চলুন আসল হিমালয়ান পিংক সল্ট চেনার উপায়গুলো জেনে নেই-
  • রং দেখে হিমালয় পিংক সল্ট চেনা যায়। আসল হিমালয়ান পিংক সল্টের রং হালকা গোলাপি হয়ে থাকে। কেননা এতে রয়েছে বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান।
  • হিমালয়ান পিংক সল্ট বড় বড় দানাযুক্ত হয় এটি দেখতে বড় বড় ক্রিস্টাল পাথরের মত হয়ে থাকে।
  • আসল হিমালয়ান পিংক সল্ট নকল হিমালয়ান পিংক সল্টের চেয়ে একটু বেশি লবণাক্ত। আসল হিমালয়ান সল্টে সোডিয়াম থাকার কারণে একটু বেশি লবণাক্ত হয়।

পিংক সল্ট এর ব্যবহার

পিংক সল্ট বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যায়। যাদের সাধারণ লবণ খেলে সমস্যা হবে তাদের বিকল্প হিসেবে এ লবণ ব্যবহার করা যায়। এটি রান্নার কাজে ব্যবহার করা যায়। এ লবণ দিয়ে শরবত বানিয়ে খাওয়া যায়। গোলাপি লবণ পানির সাথে মিশিয়ে গোসল করলে তো অনেক ভালো হয়। চুলের খুশকি দূর করার জন্য এ লবণ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

যারা সরাসরি লবণ খেতে পছন্দ করেন তারা এ লবণ সরাসরি খেতে পারবে। এ লবণ ব্যবহারে নানা ধরনের উপকারিতা পাওয়া যাবে।

হিমালয়ান পিংক সল্ট কোথায় পাওয়া যায়

হিমালয়ান পিংক সল্ট পাকিস্তানের পাঞ্জাব অঞ্চলে পাওয়া যায়। এটি নামে হিমালয়ান হলেও এটি হিমালয় হতে আসে না। এটি বিশ্বের দ্বিতীয় লবণ খনি পাকিস্তানের পাঞ্জাব অঞ্চলের খেওড়া লবণ খনি থেকে উত্তোলন করা হয়। পাকিস্তান সাধারণত প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদের দেশ। পাকিস্তানিরা এ লবন ক্ষনিকে আল্লাহর নেয়ামত বলে মনে করেন।

এই লবণ দেখতে গোলাপি রঙের। এই লবণকে হোয়াইট গোল্ড বলা হয়ে থাকে। এছাড়াও এই লবণ ভারতের কিছু কিছু জায়গায় হাতে তৈরি করে থাকে। আপনি এ লবণ নিতে চাইলে দেশের যেকোন ই-কমার্স ওয়েবসাইটে খোঁজ করতে পারেন। তাহলে অবশ্যই পেয়ে যাবেন।

পিংক সল্ট এর অপকারিতা

পিংক সল্ট প্রাকৃতিক লবণ যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন উপকার করে থাকে। এ লবণের উপকারিতা রয়েছে অনেক তবে রয়েছে সামান্য কিছু অপকারিতাও। সাধারণ লবণের চেয়ে হিমালয়ান পিংক লবণে আয়োডিনের মাত্রা কম রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে আমরা যদি এ লবণ খাই তাহলে শরীরে আয়োডিনের মাত্রা কমে যেতে পারে।

এছাড়াও এই লবণ অনেক ব্যয়বহুল যা সবার পক্ষে খাওয়া সম্ভব নয়। গোলাপি লবণ দীর্ঘদিন খেলে শরীরে আয়োডিনের ঘাটতি দেখা যাবে যার ফলে তৈরি হবে গলগন্ড, থাইরয়েড ইত্যাদি রোগ।

লেখকের মন্তব্য

হিমালয়ান পিংক সল্ট শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কারণ এটি প্রাকৃতিক লবণ হিসেবে চিহ্নিত। আপনার যদি সাধারণ লবণ খাওয়া নিষিদ্ধ হয়ে থাকে তাহলে বিকল্প হিসেবে আপনি এই লবণটি নিয়ম মেনে খেতে পারেন। আশা করছি ভালো ফলাফল পাবেন। প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেল পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয় স্বজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url