চিকেন পক্সের দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আপনি কি চিকেন পক্সের দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে আসুন আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে চিকেন পক্সের দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায় এবং পক্সের গর্ত দূর করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেল মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
চিকেন পক্সের দাগ
এটি পড়লে আরো জানতে পারবেন চিকেন পক্স সারতে কতদিন লাগে, বাচ্চাদের পক্স হলে করণীয় এবং চিকেন পক্সের লক্ষণ ইত্যাদি।

ভূমিকা

চিকেন পক্স একটি ভাইরাস জনিত রোগ। এই রোগ কমবেশি সবার মধ্যেই হয়ে থাকে। এই রোগ ভালো হতে সর্বোচ্চ সাত থেকে ১০ দিন সময় লাগে। কিন্তু পক্স ভালো হলেও এর দাগ থেকে যায়। চিকেন পক্স মুখসহ সারা শরীরে হয়ে থাকে। সেজন্য ভালো হওয়ার পরও মুখসহ সারা শরীরে দাগ থেকে যায়। এই দাগ দূর করা খুবই প্রয়োজন।


শরীরের অন্য অংশের দাগগুলো দেখা না গেলেও মুখের দাগ সব সময় চোখে পড়ে। পক্সের দাগ তোলার জন্য অনেকগুলো উপায় রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ঘরোয়া উপায়। প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে ঘরোয়া উপায়ে পক্সের দাগ তোলা খুবই ভালো কারণ এতে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকেনা।

ঘরোয়া উপায়ে এই দাগ তোলা হলে খুব সহজেই ওঠে যায় কারণ ঘরোয়া উপায় যে সকল উপাদান ব্যবহার হয় সেগুলো উপাদান অনেক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। আপনি যদি চিকেন পক্সের দাগ তুলতে চান তাহলে ঘরোয়া উপায়টি অবলম্বন করতে পারেন সে ক্ষেত্রে ভালো উপকার পাবেন।

চিকেন পক্সের দাগ তোলার ঘরোয়া উপায়

চিকেন পক্স ভালো হওয়ার পর যে দাগগুলো থাকে তোলা খুবই প্রয়োজন। কারণ দাগগুলো দেখতে অনেক খারাপ লাগে। এ দাগ তোলার জন্য কতগুলো উপায় রয়েছে আজকে আমরা সেই উপায় সম্পর্কে আলোচনা করব-

ডাবের পানিঃ বক্সের দাগ তোলার জন্য যতগুলো প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে ডাবের পানি সেগুলোর মধ্যে একটি। ডাবের পানি দিয়ে মুখ ধুলে বা দাগের উপর মাখলে দাগগুলো দূর হয়ে যাবে। আপনি ততদিন পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারবেন যতদিন দাগগুলো হালকা না হয়।

গাঁদা ফুলঃ পক্সের দাগ তোলার জন্য গাঁদা ফুল অত্যন্ত কার্যকরী। সারারাত পানিতে গাঁদা ফুল ভিজিয়ে রেখে সকালে সেটি পেস্ট করে দাগের উপর লাগাতে হবে। তাহলে ধীরে ধীরে দাগগুলো দূর হয়ে যাবে।

বেকিং সোডাঃ বেকিং সোডা হচ্ছে একটি অ্যালকালিনযুক্ত পদার্থ। এতে এসিডের পরিমাণ রয়েছে খুব কম। হাফ চামচ বেকিং সোডার সাথে এক গ্লাস পরিমাণ পানি মিশিয়ে দাগের উপর লাগাতে হবে তাহলে ধীরে ধীরে দাগ কমে যাবে। বেকিং সোডা নিয়মিত ব্যবহার করলে দাগ ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে।

লেবুর রসঃ ভিটামিন সি সমৃদ্ধ লেবুর রস পক্সের দাগ তোলার জন্য অত্যন্ত কার্যকরী। একটি লেবুর অর্ধের পরিমাণ লেবুর রস এবং দুই চা চামচ পানি সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে দাগ দ্রত দূর হয়ে যাবে।

মধুঃ মধু অধিক সমৃদ্ধ একটি খাদ্য যার শরীরে বিভিন্ন উপকারে আসে। এটি শরীর অসুস্থতার পাশাপাশি ত্বকের বিভিন্ন ধরনের দাঁগ তুলতেও অত্যন্ত কার্যকরী। চিকেন পক্সের দাগ মধু ব্যবহারের ফলে ধীরে ধীরে দূর হয়ে যায়।

চন্দনের তেলঃ ত্বকের বিভিন্ন উপকারে আমরা নানা ধরনের পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ তেল ব্যবহার করে থাকি। সেই পুষ্টিগুণ তেলগুলোর মধ্যে চন্দনের তেল একটি। চন্দনের তেল ব্যবহারে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় সেই সাথে বিভিন্ন ধরনের দাগ ও দূর হয়ে যায়। চিকেন পক্সের দাগ দূর করার জন্য চন্দনের তেল ব্যবহার করতে পারেন।

নিয়মিত এটি ব্যবহার করলে ধীরে ধীরে দাগ দূর হয়ে যাবে। এর ফলাফল বেশি পাওয়ার জন্য ভিটামিন ই অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। তাহলে ভালো ফলাফলের সাথে পক্সের দাগ দ্রুত সেরে যাবে।

গাজর ও ধনেপাতাঃ ১০০ গ্রাম গাজরের সাথে ৬০ গ্রাম ধনেপাতা একসাথে মিশিয়ে স্যুপ বানিয়ে সেবন করলে পক্সের দাগ দূর হয়ে যাবে ।

রসুনঃ চিকেন পক্স দাগের উপর প্রতি রাতে নিয়ম করে রসুন লাগিয়ে রাখলে এ দাগ দূর হয়ে যায়। রসুন ভ্রমণের দাগ দূর করতে অত্যন্ত কার্যকরী।

নারিকেল তেলঃ নারিকেল তেল বহু পুরনো দাগ তোলার ক্ষেত্রেও অধিক কার্যকরী। দাগের উপর নিয়মিত নারিকেল তেল মালিশ করলে দাগ ধীরে ধীরে দূর হয়ে যাবে। কারণ নারিকেল তেল ত্বকের জন্য খুবই উপকারী যা সরাসরি ব্যবহার করলেও ভালো ফল পাওয়া যায়।

এলোভেরাঃ ওষুধি গুণ সম্পূর্ণ ভেষজ উদ্ভিদের মধ্যে অ্যালোভেরা একটি। অ্যালোভেরা জেল নিয়মিত মুখে মাখলে মুখের বিভিন্ন ধরনের দাগ দূর হয়ে যায়। এলোভেরা পাতা থেকে বের হওয়া লিকুইড বা জেল দাগের উপর ব্যবহার করলে দাগ ধীরে ধীরে দূরে হয়ে যাবে।

ওটমিলঃ এক কাপ গরম পানির সাথে আধা কাপ ওটমিল নিতে হবে। তারপর সেই পানি ঠান্ডা করে দাগে লাগাতে হবে। তাহলে চিকেন পক্সের দাগ দূর হবে এবং পক্স হলে যে চুলকানিভাব হয় সেটিও কমে যাবে।

পেঁপে ও মধুর পেস্টঃ পেঁপে ও মধু একসাথে মিশিয়ে পেস্ট করে দাগের উপর লাগালে দাগ খুব সহজে দূর হয়ে যায়। ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য এটি দিনে দুইবার ব্যবহার করতে হবে। এটি ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধি করতে অত্যন্ত কার্যকরী।

পক্সের গর্ত দূর করার উপায়

পক্স ভালো হওয়ার সাথে সাথে দাগের সাথে গর্ত থেকে যায়। সেজন্য চেহারার লাবণ্য অনেক ক্ষেত্রে নষ্ট হয়ে যায়। আমরা এখানে পক্সের ক্ষত দূর করার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করব। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক-

অ্যালোভেরা ও মধুঃ মধু এবং এলোভেরা এই দুটো রয়েছে এন্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান। যা ত্বকের গভীরে গিয়ে মশ্চারাইস করে এবং অল্প দিনেই দাগ ও গর্ত দূর হয়ে যায়।

বেকিং সোডাঃ ত্বকের পি এইচ ব্যালেন্স রক্ষা করতে বেকিং সোডার গুরুত্ব অত্যাধিক। এটি ব্যবহার করলে ত্বকের দাগ দূর করার সাথে সাথে গর্ত মিশিয়ে দেয়। ২ টেবিল চামচ পানির সাথে এক টেবিল চামচ বিকিং সোডা মিশিয়ে ভালোভাবে পেস্ট করে নিতে হবে তারপর সেটি মুখে মাখতে হবে এবং পাঁচ মিনিট রেখে তা ধুয়ে ফেলতে হবে।

সানস্ক্রিন ব্যবহার করাঃ পক্স হওয়ার পর সরাসরি রোদে যাওয়া যাবেনা। সরাসরি রোদে গেলে পক্সের দাগ আরো গাঢ়ো হতে পারে। সেজন্য রোদে গেলে সানস্ক্রিন ব্যবহার করে যেতে হবে যাতে পক্সের দাগ বেশি না হয়।

ভিটামিন যুক্ত খাবারঃ ভিটামিন যুক্ত খাবার ত্বক ও শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। পক্স হওয়ার পর ভিটামিনযুক্ত খাদ্য ও ফলমূল খেতে হবে। তাহলে ত্বকের দাগ দ্রু দূর হয়ে যাবে এবং গর্ত মুছে যাবে।

ডাবের পানিঃ ডাবের পানি পক্সের দাগ ও গর্ত দূর করার জন্য অধিক কার্যকরী। ক্ষত দূর হওয়া পর্যন্ত ডাবের পানি দাগে বারবার ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।

চিকেন পক্স সারতে কতদিন লাগে

চিকেন পক্স সাধারণত একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এই রোগ ভালো হওয়ার জন্য কোন ওষুধের প্রয়োজন হয় না। ভালোভাবে নিয়ম কানুন মেনে চললে আপনা আপনি ভালো হয়ে যায়। চিকেন পক্স বের হওয়ার সময় থেকে ৫ দিন পর্যন্ত এটি বের হতে থাকে। সাত দিন থেকে এর ঘা শুকাতে শুরু হয়। সম্পূর্ণভাবে ভালো হতে ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগে। কিন্তু অনেকেরই ধারণা পক্স হলে মাছ মাংস খাওয়া যাবে না। কিন্তু চিকেন পক্স হলে আমিষ জাতীয় খাবার খেতে বলেন ডাক্তাররা। কারণ পক্স বের হলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিনের ঘাটতি পড়ে এবং দুর্বল হয়ে পড়ে সে ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়। তাই ডাক্তাররা মাছ মাংস ডিম ইত্যাদি খাবার খেতে বলেন। অতীতের পক্স ভালো করার জন্য কোনরকম ওষুধ ব্যবহার করা হতো না কিন্তু বর্তমানে এ পক্স ভালো করার জন্য কিছু এন্টিবেটিক বের হয়েছে। এটি ব্যবহার করলে দ্রুত পক্স ভালো হয়ে যায়।

বাচ্চাদের পক্স হলে করণীয়

চিকেন পক্স একটি ছোঁয়াচে রোগ। এ ধরনের রোগের সংস্পর্শে আসলে সংক্রমণ হয়ে থাকে। চিকেন পক্স বাচ্চাদের বেশি হয়ে থাকে। বয়স্কদের এই রোগ হলে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। আমরা এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে শিশুদের পক্স বা বসন্ত হলে কি করনীয় তা নিয়ে আলোচনা করব। তাহলে চলুন জেনে নেই বাচ্চাদের পক্স হলে করণীয় কি কি-
  • আক্রান্ত শিশুদের ঠান্ডা থেকে দূরে রাখতে হবে
  • পরিষ্কার কাপড়-চোপড় ব্যবহার করাতে হবে
  • ভিটামিন যুক্ত খাবার খাওয়াতে হবে
  • আমি জাতীয় খাবার ও খাওয়াতে হবে
  • এলার্জি বা চুলকানি জাতীয় খাবার হাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে
  • রাষ শোকাতে শুরু হলে মরা চামড়াগুলো যেখানে সেখানে ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে
  • পক্স এর খোসা নখ দিয়ে তোলা থেকে বিরত থাকতে হবে
  • নিম পাতা দিয়ে পানি গরম করে পক্স বের হওয়ার পাঁচদিন পর থেকে গোসল করাতে হবে
  • পক্স আক্রান্ত শিশুদের বিছানায় ঘুমাবে সেই বিছানা পরিষ্কার রাখতে হবে
  • পক্সে আক্রান্ত শিশুর কাপড়-চোপড় অন্যান্যদের ব্যবহারযোগ্য কাপড় থেকে আলাদা রাখতে হবে

চিকেন পক্সের লক্ষণ

পক্স বের হওয়ার প্রথম দিন থেকে এ লক্ষণ দেখা দেয। শুরু হওয়ার প্রথম দিন জ্বর ও ব্যথা অনুভব হয়। তারপর সমস্ত শরীরের গুটি গুটি দানা বের হয় পরবর্তীতে এটি চারিপাশ লাল হয় এবং মুখে পানি জমে। দুই তিন দিন পর থেকে এগুলো চুলকানো শুরু হয়।

লেখকের মন্তব্য

চিকেন পক্স সাধারণত একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এই রোগ ভালো হওয়ার জন্য কোন ওষুধের প্রয়োজন হয় না। ভালোভাবে নিয়ম কানুন মেনে চললে আপনা আপনি ভালো হয়ে যায়। প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে ঘরোয়া উপায়েও পক্সের দাগ তোলা যায়। প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url