হরতকি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং ব্যবহারবিধি

প্রিয় পাঠক, আপনি কি হরতকি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান। তাহলে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে হরতকি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং হরতকি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
হরতকি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
এটি পড়লে আরো জানতে পারবেন চুলের যত্নে হরতকির উপকারিতা, হরতকির অপকারিতা ইত্যাদি।

ভূমিকা

ঔষধ নিয়ে যে সকল ভেষজ উদ্ভিদ রয়েছে হরতকি তাদের মধ্যে একটি। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা শাস্ত্রে এই উদ্ভিদটি বেশি ব্যবহৃত হয়। এই উদ্ভিদটি দেশের বিভিন্ন জায়গায় যেমন ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং টাঙ্গাইল সহবনভূমি অঞ্চলের পাওয়া যায়। হরতকি বিভিন্ন রোগের মহা ঔষধ হিসেবে পরিচিত। উন্নত গুণাগুণের কারণে এই উদ্ভিদটি প্রাচীনকাল থেকে চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।


হরতকি গাছের ফল, গাছ এবং পাতা সবকিছুই বিভিন্ন ধরনের উপকারে আসে। এটি চিকিৎসার ক্ষেত্রে যেমন উপকারী তেমনি রান্নাবান্নায়ও ব্যবহৃত হয় এটি। হরতকি খাওয়ার ফলে শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দূর হয় কারণ এতে রয়েছে ভিটামিন সি, আয়রন, সেলেনিয়াম এবং কপারের মত খনিজ পদার্থ।

হরতকি চুলের সার্বিক সুস্থতা বজায় রাখতে অত্যন্ত কার্যকরী। এটি নিয়মিত ব্যবহার করলে শরীর যেমন সুস্থ থাকে তেমনি চুলেরও সুস্থতা বজায় রাখে।

হরতকি খাওয়ার উপকারিতা

বিভিন্ন ধরনের গুণাগুণ সম্পন্ন এই ভেষজ উদ্ভিদ শরীরের বিভিন্ন ধরনের উপকারে আসে। আপনি যদি হরতকির উপকারিতা সম্পর্কে না জানেন তাহলে অবশ্যই জেনে নিন হরতকি খাওয়ার উপকারিতা। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক হরতকির উপকারগুলি-

হজম শক্তি বৃদ্ধি করেঃ একজন মানুষের সুস্থ থাকার জন্য হজম ক্ষমতা ভালো থাকা প্রয়োজন। হজম ক্ষমতা কম থাকলে মানুষের শরীরে বিভিন্ন রোগের বাসা বাঁধে। সে জন্য হজম ক্ষমতা শক্তিশালী হওয়া মানব শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। প্রতিদিন রাতে খাওয়ার পর হরতকির গুড়া কুসুম গরম পানির সাথে মিশিয়ে পান করলে হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ সচরাচর মানুষের মধ্যে যে সকল সমস্যা দেখা যায় সেগুলোর মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা একটি। খাবার-দাবারের অনিয়ম বা অন্যান্য কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। হরতকির গুঁড়া কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। নিয়মিত তরকির গুড়া খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য ধীরে ধীরে কমে যাবে।

ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ হরতকি ওজন কমাতে সাহায্য করে। আপনি যদি ওজন কমানোর চিন্তা করেন তাহলে হরতকি খেতে পারেন। সঠিক নিয়মে হরতকি খেলে শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমে ওজন নিয়ন্ত্রণে আসবে।

সর্দি কাশিতেঃ সর্দি কাশিতে হরতকি রয়েছে অনন্য গুনাগুণ। অধিক গুনসম্পন্ন হরতকি সর্দি কাশিতে অত্যন্ত কার্যকরী। আমাদের শরীরের বিভিন্ন সময়ে নানা কারণে সর্দি কাশি লেগে থাকে। এ সর্দি কাশি দূর করতে হলে তুলসী ও মধুর সাথে হরতকি খেতে পারেন তাহলে দ্রুত সর্দি কাশি উপশম হবে।

ত্বকের সমস্যা দূর করেঃ হরতকি রক্ত পরিষ্কার করতে অত্যন্ত কার্যকরী। কারণ রক্ত অপরিষ্কার থাকলে ত্বক সহ শরীরের বিভিন্ন তৈরি হয়। ফলে এটি নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়।

ব্যথা উপশম করেঃ বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের শরীরে বিভিন্ন ধরনের ব্যথা শুরু হয়। হরতকি খেলে ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে। কারণ হরতকিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। হাড় মজবুত করতে হরতকি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করেঃ বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে আমাদের স্মৃতিশক্তি কমে যেতে থাকে। স্মৃতি শক্তি কমে গেলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। হরতকি চূর্ণ দিনে দুইবার খেলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ ডায়াবেটিসের সমস্যা বর্তমানে প্রত্যেক ঘরে ঘরে দেখা যায়। হরতকি রক্তে শর্করা পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। যাদের রক্তে শর্করা পরিমাণ অনেক বেশি বা ডায়বেটিসের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত হরতকি চূর্ণ খেতে পারেন তাহলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করেঃ হরতকি চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করে এবং চোখের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। আমাদের মধ্যে অনেকেরই চোখে বিভিন্ন রকম রোগ হয়ে থাকে। এ রোগের এককালীন সমাধান দিয়ে থাকে হরতকি।

হার্ট সুস্থ রাখেঃ হরতকি হার্ট সুস্থ রাখতে অত্যন্ত কার্যকরী। এটি রক্তের কোলেস্টরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। যার ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকাংশই কমে যায়। হার্ট ব্লক বা হাটের রক্ত জমাট বাধা সমস্যা দূর হয় হরতকি খেলে।

এলার্জি দূর করেঃ এলার্জি দূর করতেও হরতকি অনেক উপকারী। হরতকি পানিতে দিয়ে সে পানি ফুটিয়ে ব্যবহার করলে এলার্জি দূর হয়ে যায়।

চুলের যত্নেঃ নারিকেল তেলের সাথে মিশিয়ে হরতকি ব্যবহার করলে চুল পড়া কমে যায় এবং চুল স্বাস্থ্যজ্জল হয়। এটি ব্যবহার করার ফলে মাথার খুশকি দূর হয়ে যায়।

দাঁতের ব্যথা দূর করেঃ হরতকি দাঁতের বিভিন্ন ধরনের ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে। দাঁতের ব্যথা শুরু হলে ব্যথা স্থানে হরতকির গুঁড়া লাগালে ব্যথা ধীরে ধীরে কমে যায়। যেকোনো ব্যথা দূর করতে অধিক কার্যকরী।

ত্বকের যত্নেঃ হরতকির গুড়া পানির সাথে মিশিয়ে খেলে ত্বক ফর্সা হয় এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও এটি ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা যেমন ব্রন, মেস্তা, ত্বকের ফুসকুড়ি ইত্যাদি দূর করতে সাহায্য করে ।

হরতকি খাওয়ার নিয়ম

প্রতিটি জিনিস খাওয়ার এটি নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। হরতকির ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনি। নিয়ম মেনে হরতকি খেলে উপকার অনেক বেশি পাওয়া যায়। তাহলে চলুন হাতটা কি খাওয়া নিয়মগুলো জেনে নিই-
  • হরতকির গুড়া কুসুম কুসুম গরম পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়।
  • গরমকালে হরতকি অল্প পরিমাণ খাটি গুড়ের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়।
  • মিশ্রির সরবতের সাথে হরতকির গুড়া মিশিয়ে খাওয়া যায় তাহলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
  • হরতকির গুড়া মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে শীতকালে ভালো ফল পাওয়া যায়।
  • আদার কুচি গোলমরিচের গুঁড়ার সাথে মিশে খাওয়া যায়।

চুলের যত্নে হরতকির উপকারিতা

চুলের যত্ন হরতকির উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যাবে না। হরতকি ব্যবহারের ফলে চুলের সুস্থতা বজায় থাকে। এছাড়াও হরতকি ব্যবহার করলে চুলের নানা ধরনের উপকারিতার লক্ষ্য করা যায় যেমন -
  • চুল ঘন ও লম্বা করে
  • নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে
  • চুল পড়া কমায়
  • চুলের অকালপক্কতা রোধ করে
  • মাথার খুশকি দূর করে
  • চুলের গোড়া শক্ত ও মজবুত করে
  • প্রাকৃতিক শ্যাম্পু হিসেবে কাজ করে
  • চুলের আসল রঙ ধরে রাখতে সাহায্য করে
  • চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং সিল্কি করে

ব্যবহারবিধি

হরতকির গুড়া সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে এই প্যাকটি মাথায় ব্যবহার করা যায়। ব্যবহার করে কার্যকারিতা ভালো পাওয়া যায়। এটি নারিকেল তেলের সাথে ভিজিয়ে রেখে ব্যবহার করা যায়। টক দই এবং ডিমের সাথে মিশিয়ে হরিতকী পাউডার ব্যবহার করে যায়। আমলকি গুড়া, মেথির গুড়া একসাথে মিশে ব্যবহার করলে চুল ঘন মজবুত হয়।

হরতকির অপকারিতা

হরতকির নানা ধরনের উপকার রয়েছে সেগুলো আমরা উপরের আলোচনায় জেনেছি। কিন্তু এই হরতকির সামান্য কিছু অপকারিতাও রয়েছে। চলুন সে বিষয়ে এখন জেনে নেওয়া যাক-
  • হরতকি নিয়মমত খেতে হবে অতিরিক্ত পরিমাণ হরতকি খেলে সর্দি কাশি বেড়ে যেতে পারে।
  • গর্ভাবস্থায় হরতকি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে তাছাড়া এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
  • কাটা বা পাকা স্থানে হরতরিক পাউডার দেওয়া যাবে না কারণ এতে কাটা স্থানে সমস্যা তৈরি হতে পারে।
  • অধিক পরিমাণে হরতরিক গুড়া খেলে পেটের বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হতে পারে।
  • হরতকি খাওয়ার পর অবশ্যই কুসুম কুসুম গরম পানি খেতে হবে তাছাড়া হজমে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে।

লেখকের মন্তব্য

ঔষধ নিয়ে যে সকল ভেষজ উদ্ভিদ রয়েছে হরতকি তাদের মধ্যে একটি। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা শাস্ত্রে এই উদ্ভিদটি বেশি ব্যবহৃত হয়। হরতকি বিভিন্ন রোগের মহা ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। উন্নত গুণাগুণের কারণে এই উদ্ভিদটি প্রাচীনকাল থেকে চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। হরতকি গাছের ফল, গাছ এবং পাতা সবকিছুই বিভিন্ন ধরনের উপকারে আসে।

এটি চিকিৎসার ক্ষেত্রে যেমন উপকারী তেমনি রান্নাবান্নায়ও ব্যবহৃত হয় এটি। প্রিয় পাঠক, আপনার যদি আর্টিকেল পড়ে ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধুদের এবং কাছের মানুষদের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url