ত্বকের যত্নে এবং চুলের যত্নে এলোভেরার অনন্য গুণাগুন জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আপনি কি অ্যালোভেরা দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে আসুন এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে অ্যালোভেরা দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায় এবং অ্যালোভেরা ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে হলে সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
অ্যালোভেরা দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়
এই আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন শুধু অ্যালোভেরা মাখলে কি হয়, অ্যালোভেরা খাওয়ার উপকারিতা, অ্যালোভেরা দিয়ে চুলের যত্ন ইত্যাদি।

ভূমিকা

অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী একটি ভেষজ উদ্ভিদ। ঔষধি গুণাগুণসম্পন্ন যে সকল উদ্ভিদ রয়েছে তাদের মধ্যে অ্যালোভেরা একটি। এতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান যেমন- সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, জিংক, পটাশিয়াম, ফলিক অ্যাসিড, অ্যামিনো অ্যাসিড, ভিটামিন এ, বি২ ও বি৬ ইত্যাদি।


অ্যালোভেরায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এন্টি ইনফ্লেমেটরি এন্টি ব্যাকটেরিয়াল গুণসম্পন্ন বৈশিষ্ট্য তাই অ্যালোভেরা শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। অ্যালোভেরার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। অ্যালোভেরা যেমন শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে তেমনি রূপচর্চায় এর অত্যন্ত ভূমিকা রয়েছে

ত্বকের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা দৈনন্দিন জীবনে প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে অ্যালোভেরাকে বেছে নেই। অ্যালোভেরা সঠিক নিয়মে ব্যবহার করলে এর ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। আমরা অ্যালোভেরা ব্যবহার করার সঠিক নিয়ম অনেকেই জানিনা। অ্যালোভেরা ব্যবহারে ভালো ফলাফল পেতে হলে অ্যালোভেরা ব্যবহার করার সঠিক নিয়ম জানা অত্যন্ত প্রয়োজন।

এছাড়াও অ্যালোভেরা ব্যবহারের ফলে ত্বকের রং ফর্সা হয়। আপনি যদি ঘরোয়া উপায়ে ফর্সা হতে চান তাহলে অবশ্যই নিয়মিত অ্যালোভেরা ব্যবহার করুন।

অ্যালোভেরা দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়

প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে ঘরোয়া ভাবে ফর্সা হওয়ার যেগুলো উপায় রয়েছে তার মধ্যে অ্যালোভেরা দিয়ে ফর্সা হওয়া অন্যতম একটি। কিভাবে অ্যালোভেরা দিয়ে ফর্সা হওয়া যায় সেই উপায় গুলো আমরা জেনে নেই-
  • অ্যালোভেরা সরাসরি মুখে লাগানো যায়। সরাসরি মুখে লাগালে এর অনেক উপকার পাওয়া যায়। সরাসরি মুখে লাগানোর জন্য প্রথমে অ্যালোভেরা কে পরিষ্কারভাবে ধুয়ে নিতে হবে তারপর শক্ত অংশ কেটে ফেলে দিতে হবে আর নরম অংশটি নিয়ে নিতে হবে। সেই অংশটি মুখে ব্যবহার করা যেতে পারে। অ্যালোভেরার জেল মধুর সাথে মিশে ব্যবহার করলে ত্বক অনেক ফর্সা এবং মসৃন দেখায়।
  • অ্যালোভেরা জেল লেবুর সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়। এভাবে ব্যবহার করলে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর হয় এবং বিভিন্ন ধরনের দাগ দূর হয়ে যায়।
  • ত্বকের গাঢ় দাগ দূর করার জন্য এটি টমেটোর সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়। টমেটোর সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে ত্বক দ্রুত উজ্জ্বল হবে এবং ত্বকের গাঢ় দাগ দ্রুত দূর হয়ে যাবে।
  • দুই চামচ অ্যালোভেরার রস, শুকনা কমলালেবুর খোসার গুঁড়া এবং চালের গুড়া একসাথে মিশিয়ে ভালোভাবে পেস্ট করে নিতে হবে তারপর মুখে মাখতে হবে। ১৫ থেকে ২০ মিনিট রাখার পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ফেলতে হবে। তাহলে মুখ কোমল এবং মসৃন হবে।
  • অ্যালোভেরা জেল এর সাথে গোলাপ জল মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়। এভাবে ব্যবহার করলেও ত্বকের জন্য ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
  • দুই চামচ অ্যালোভেরা রসের সাথে একটি ডিমের সাদা অংশ এবং এক চামচ লেবুর রস ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর সেটি মুখে মাখতে হবে তাহলে ত্বকের শুষ্কতা দূর হবে।
  • অ্যালোভেরার সাথে মুলতানি মাটি এবং চন্দনের গুড়া মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়। এভাবে ব্যবহার করলেও ত্বক ফর্সা হয়
  • দ্রুত ভালো ফলাফল পেতে চাইলে অ্যালোভেরা সাথে চন্দন, দুধ, মসুর ডালের গুড়া একসাথে মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে ব্যবহার করতে হবে। এভাবে কয়েকদিন ব্যবহার করলে দ্রুত মুখের ত্বক ফর্সা হবে।

শুধু অ্যালোভেরা মাখলে কি হয়

অ্যালোভেরা যে সকল উপাদান রয়েছে তা মুখের ত্বকের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। মুখের ত্বক ফর্সা করার জন্য এমন অ্যালোভেরা ব্যবহার করা হয়। অ্যালোভেরা নিয়মিত ব্যবহার করলে মুখে সকল সমস্যা দূর হয় এবং ত্বকের সুস্থতা বজায় রাখে। আমাদের প্রত্যেকের ত্বক আলাদা আলাদা। সেজন্য ত্বক অনুযায়ী অ্যালোভেরা জেল বা রস অন্য কোন উপাদানের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

এছাড়াও অনেক কারণে ত্বকের বিভিন্ন ধরনের ড্যামেজ হয়ে থাকে। এই ড্যামেজের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য অ্যালোভেরা অত্যন্ত কার্যকরী। সেজন্য আপনি যদি সুন্দর ঝকঝকে ও উজ্জ্বল এবং সুস্বাস্থ্য ত্বক পেতে চান তাহলে সঠিক নিয়মে অ্যালোভেরা ব্যবহার করুন।

অ্যালোভেরা ব্যবহারের নিয়ম

আমরা যে সকল উপাদান মুখের ত্বকে ব্যবহার করে থাকি তা প্রত্যেকটির উপাদানের ব্যবহারের নিয়ম বিদ্যমান। সে সকল নিয়ম মেনে ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। অ্যালোভেরা ব্যবহারের ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনি। অ্যালোভেরা মুখের ত্বকে সঠিক নেমে ব্যবহার করলে ত্বক উজ্জ্বল ও ফর্সা দেখায়। তাহলে চলুন অ্যালোভেরা ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেই -
  • ত্বকের তৈলাক্ততা দূর করতে চাইলে অ্যালোভেরা রসের সাথে লেবু মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। তাহলে ত্বকের অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব দূর হয়ে যাবে।
  • শসার রস, অ্যালোভেরা রস এবং মসুরের ডালের গুড়া একসাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে ত্বক মসৃণ হয় এবং বিভিন্ন ধরনের কালো দাগ দূর হয়ে যায়।
  • অ্যালোভেরা রস মধুর সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়। এভাবে ব্যবহার করলে মুখে ত্বকের শুষ্কতা দূর হয়ে যায়।
  • এছাড়াও অ্যালোভেরা সরাসরি ব্যবহার করা যায়। সরাসরি ব্যবহার করলে মুখের ত্বকের জন্য ভালো উপকার পাওয়া যায়।

অ্যালোভেরা খাওয়ার উপকারিতা

রূপচর্চায় অ্যালোভেরার যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখার জন্য এর উপকারিতাও অনেক। তাহলে চলুন অ্যালোভেরা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক -
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ অ্যালোভেরায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। নিয়মিত অ্যালোভেরা খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দূর করে থাকে।

হজমে সহায়তাঃ হজমের সমস্যা সবচেয়ে বড় সমস্যা বলে গণ্য হয়। কেননা হজম প্রক্রিয়া সঠিকভাবে না হলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ বাসা বাঁধে। নিয়মিত অ্যালোভেরা খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী অ্যালোভেরা। এটি রক্তের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত অ্যালোভেরা শরবত খেতে পারেন তাহলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

কলেস্টরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকেঃ অ্যালোভেরায় অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান রয়েছে যা কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। কারণ কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে শরীরের বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হয়।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ অ্যালোভেরা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সক্ষম। যাদের কোষ্ঠকাঠিনের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত অ্যালোভেরা সরবত খালি পেটে খাবেন তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

হার্ট সুস্থ রাখেঃ অ্যালোভেরা হার্ট সুস্থ রাখতে সহায়তা করে কারণ অ্যালোভেরায় রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও আন্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান।

মানসিক চাপ কমায়ঃ নিয়মিত অ্যালোভেরা খেলে মানসিক চাপ কমে যায়। মানসিক চাপ শরীরের বিভিন্ন ধরনের রোগের কারণ হয়ে থাকে। সে জন্য আমাদের মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকা জরুরী।

দাঁতের ব্যথা দূর করেঃ অ্যালোভেরার রস দাঁতের বিভিন্ন ধরনের ব্যথা দূর করতে সক্ষম। যেকোনো ধরনের ব্যথায় উপশম এনে দেয় অ্যালোভেরার রস।

হাড় মজবুত করেঃ অ্যালোভেরা রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম যা হাড়ের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। এটি খাওয়ার ফলে হাড় সুস্থ থাকে এবং হাড় মজবুত হয়।

ওজন কমাতেঃ অ্যালোভেরা অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে। যাদের অতিরিক্ত ওজন রয়েছে তারা নিয়মিত অ্যালোভেরা খেতে পারেন তাহলে ওজন নিয়ন্ত্রণে আসবে।

শরীর শান্ত থাকেঃ অ্যালোভেরার রসের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান যা শরীরকে শক্তিশালী করে তোলে এবং শরীরের শান্তি বয়ে নিয়ে আসে।

অ্যালোভেরার অপকারিতা

অ্যালোভেরার অত্যন্ত উপকারী এটি ভেষজ উদ্ভিদ। অ্যালোভেরার অনেক উপকারিতা রয়েছে তবে এর সামান্য কিছু অপকারিতাও রয়েছে। তাহলে চলুন অ্যালোভেরার অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
  • অ্যালোভেরা কেটে নেওয়ার পর সরাসরি মুখে ব্যবহার না করাই ভালো কারণ অনেকে ত্বকে এলার্জি রয়েছে সে ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হতে পারে।
  • অ্যালোভেরা কাটার কিছুক্ষণ পর ব্যবহার করা উচিত। কারণ অ্যালোভেরা কাটার পর যে হলুদ অংশটি বের হবে সেগুলো পরিষ্কার করে ব্যবহার করা উচিত। তা না হলে মুখে এলার্জি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • অতিরিক্ত অ্যালোভেরার রস খেলে পেটের বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হতে পারে যেমন ডায়রিয়া, আমাশয় পেট ব্যথা ইত্যাদি।
  • পরিমাণের অধিক অ্যালোভেরা রস খেলে কিডনিসহ অন্যান্য অঙ্গের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে।

অ্যালোভেরা দিয়ে চুলের যত্ন

চুলের যত্নে অ্যালোভেরা ব্যবহার হয়ে আসছে অনেক দিন থেকে। এটি ব্যবহারে চুল মজবুত ও লম্বা হয়। অ্যালোভেরায় জীবাণুনাশক ও ছত্রাকবিরোধী উপাদান থাকায় মাথার খুশকি দূর করে ও মাথার ত্বকে চুলকানি হতে দেয় না। এছাড়াও অ্যালোভেরা একটি ময়েশ্চারাইজার সমৃদ্ধ ভেজষ উদ্ভিদ যা চুলের আর্দ্রতা বজায় রাখে।

এটিকে চুলের জন্য একটি উৎকৃষ্ট মানের কন্ডিশনার মনে করা হয়। অ্যালোভেরায় অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপদান থাকায় চুল পড়া বন্ধ করতে ও চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে অধিক কার্যকর।

লেখক এর মন্তব্য

অ্যালোভেরায় রয়েছে অনন্য প্রাকৃতিক গুনাগুণ। তাই এটি প্রাচীনকাল থেকেই ত্বকের যত্নে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অ্যালোভেরা সঠিক নিয়মে ব্যবহার করলে এর ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। অ্যালোভেরা অত্যন্ত উপকারী এটি ভেষজ উদ্ভিদ। অ্যালোভেরার অনেক উপকারিতা রয়েছে তবে এর সামান্য কিছু অপকারিতাও রয়েছে।

তাই অ্যালোভেরা ব্যবহারের পূর্বে এর সঠিক নিয়মগুলো অবশ্যই জেনে নিতে হবে। প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব আত্মীয় স্বজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url