মাথা ব্যথার কারণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

প্রিয় পাঠক,আপনি কি মাথা ব্যথার কারণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? আমরা আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে মাথা ব্যথার কারণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। আপনি যদি এই বিষয় সম্পর্কে জানতে চান এই পোষ্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
এটি পড়লে আরও জানতে পারবেন ঘন ঘন মাথা ব্যথার কারণ, মাথা ব্যথা হলে করণীয় এবং মাথা ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায়।

ভূমিকা

মাথা ব্যথার সমস্যা প্রায়ই মানুষের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়। মাথা ব্যাথার কিছু লক্ষণ দেখে বোঝা যায় যে কি কারণে মাথা ব্যথা হচ্ছে। বেশির ভাগ মাথা ব্যথা মূলতঃ দুটি কারণে হয়। কারণ দুটি হল মাইগ্রেন ও টেনশন। মাইগ্রেনের ব্যথা নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। সাধারনত ১৫ বা ১৬ বছর বয়স থেকে মাইগ্রেনের বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দেয়। লক্ষণগুলো হল, বমিবমি ভাব বা বমি হওয়া, তিব্র ব্যথা, মাথার একদিকে ব্যথা করা, আলোর দিকে তাকানো যায়না ইত্যাদি।


তবে ৪৫বা ৪৬ বছর বয়সের পর থেকে মাইগ্রেনের ব্যথার তীব্রতা কমতে থাকে। তাছাড়া আরও বিভিন্ন কারণেও মাথা ব্যথা হয়ে থাকে অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম, ধুমপান, মাদ্যপান, অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম, মানসিক চাপ, অতিমাত্রায় ঘুমের ওষুধ সেবন, ক্ষুধার্ত থাকা ইত্যাদি মাথা ব্যথার কারণ। মাথা ব্যথা দূর করতে হলে কিছু কিছু অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। তাছাড়া ব্যথানাশক ওষুধ ও প্যারাসিটামল খেলে ব্যথা দ্রত ভাল হয়ে যায়।

ঘন ঘন মাথা ব্যথার কারণ কি

নানা ধরনের দুশ্চিন্তার কারনে ঘন ঘন মাথ ব্যথা হতে পারে। ঘন ঘন মাথ ব্যথার মূল কারণ দুটি হল টেনশন ও মাইগ্রেন। ৭০ শতাংশই মানুষ টেনশনের কারণে মাথা ব্যথায় বেশি ভোগেন এবং বাকি ১১ শতাংশ মানুষ মাইগ্রেনে ভোগেন। অনেক সময় চোখের কারণে ঘন ঘন মাথ ব্যথা হতে পারে। যে পরিমাণ ঘুম দরকার সে পরিমাণ ঘুম না হলে ঘন ঘন মাথ ব্যথা হয়।

শারীরিক ও মানসিক চাপ থাকলে বা পরিমাণমত খাবার না খেলে মাথ ব্যথা হয়। এছাড়া মাথার বিভিন্ন ধরনের রোগের কারণে ঘন ঘন মাথ ব্যথা হতে পারে।

মাথা ব্যথা হলে করণীয়

মাথা ব্যথা সকল কাজে বাধা তৈরি করে থাকে। তাই মাথা ব্যথা দ্রত কমাতে চাইলে ব্যথানাশক ওষুধ যেমন প্যারাসিটামল সেবন করতে পারেন। তবে ব্যথানাশক ওষুধ যত কম খওয়া যায় ততই ভালো। কারণ এই ওষুধগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে এবং শরীরের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই মাথা ব্যথা বেশি পরিমাণে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করতে হবে।

মাথা ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায়

মাথা ব্যথার সমস্যা ছোট থেকে বড় প্রায়ই সবার মধ্যে দেখা যায় যা জীবনকে দূর্বিষহ করে তোলে। এই ব্যথা কমানোর জন্য অনেকে ব্যথানাশক ওষূধ ও চিকিৎসকের শরনাপন্ন হয়। তবে আপনি জানলে অবাক হবেন- ঘরোয়া উপায়ে খুব কম সময়ের মধ্যে মাথা ব্যথা দূর করা সম্ভব। উপায়গুলো হলো-
  • আদাা চা খেলে অল্প সময়ে মাথা ব্যথা দূর হয়ে যায়।
  • মাথা ব্যথা শুরু হলে এক গ্লাস পানি পান করলে আস্তে আস্তে মাথা ব্যথা কমে যায়।
  • হালকা গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে মাথা ব্যথা কমে।
  • বরফের প্যাক প্রদাহ দূর করে ও মাথা ব্যথা উপশম করে।
  • পুদিনা পাতা দিয়ে চা তৈরী করে খেলে মাথা ব্যথা দূর হয়।
  • মাথা ব্যথা অনুভব করলে বিশ্রাম নিন নিরিবিলি কোন ঘরে।
  • মাথা ব্যথা শুরু হওয়ার সাথে সাথে কয়েক ঘন্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন।

মাথা ব্যাথা কোন রোগের লক্ষণ

মাথা ব্যথা কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্বাভাবিক নাও হতে পারে। এই মাথা ব্যথার পেছেনে থাকতে পারে অনেক গুরুতর রোগ। যেমন সাইনাসের ব্যথা, মাইগ্রেন, টেনশন হেডেক, চোখের জন্য মাথা ব্যথা, ক্লাস্টার হেডেক ইত্যাদি। এগুলো একেক রোগের ব্যথা একেক ধরনের হয়ে থাকে। এ মাথা ব্যথার ধরণ দেখলে বোঝা যায় কোন ব্যথা কোন রোগের। যেমন-
  • মাইগ্রেনের ব্যথা মাথার একটি নির্দিষ্ট অংশে হয়
  • সাইনাসের কারণে ব্যথা হলে মাথা ব্যথার পাশাপাশি জ্বর, কান ব্যথা, নাক দিয়ে পানি পড়ে
  • কাস্টার হেডেকের কারণে ব্যথা হলে চোখ লাল হয়ে যায়, চোখ দিয়ে পানি পড়ে
  • টেনশন হেডেক এর ব্যথা ঘাড়ের সামান্য উপরে হয়ে থাকে

মাথা ব্যথা কমানোর কয়েকটি ঔষধের নাম

মাথা ব্যথার তিব্রতা অনেক সময় এত বেশী হয় যে, সে সময় আমাদের ঔষুধ সেবন করতে হয়। অতি মাত্রায় মাথা ব্যথা করলে আমরা সাধারণত যেগুলো ঔষুধ সেবন করে থাকি সেগুলো হলো- টাফনিল (Tufnil) 200 mg, মাইগান (Mygan) 200 mg, লজরিন (Lograin) 200 mg, মিগরেক্স (Migrex) 200 mg, আরিন (Arian) 200 mg, এই ঔষুধগুলো খেলে খুবই দ্রুত মাথা ব্যথাা কমে যায়।

তবে ব্যথা নাশক ঔষুধ সেবন করার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে, কারণ ব্যথা নাশক ঔষুধ দীর্ঘ মেয়াদি নেতিবাচক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রভাব ফেলতে পারে।

মাথার ডান পাশে ব্যাথা হলে কি করনীয়

মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা মাথা ব্যথার অন্যতম প্রধান কারণ। অতিরিক্ত মানসিক চাপ থাকলে মাথা সবদিকে ব্যথা করতে পারে। মাথা ডান পাশে ব্যথা হওয়ার এটি একটি কারণ হতে পারে। অনেক সময় চোখের কারণেও মাথা ব্যথা হয়ে থাকে। এগুলো ছাড়াও বিভিন্ন রোগের কারণে এ ব্যথা হয়ে থাকে।

মাথার ডানপাশে ব্যথা করলে ঘরোয়া ভাবে এটি উপশম করার জন্য আদা দিয়ে চা তৈরি করে খেতে পারেন তাহলে ধীরে ধীরে মাথা ব্যথা কমে যাবে। আবার অনেক সময় ডিহাইডেশনের কারণে মাথাব্যথা হতে পারে সে ক্ষেত্রে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিতে পারেন তাহলেও ব্যথা কিছুটা উপশম পাওয়া যাবে।

এগুলো উপায় যদি ব্যথা তীব্রতা না কমে তাহলে বসে না থেকে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। কারণ তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে মাথার রোগ নির্ণয় করতে পারবেন এবং চিকিৎসা দিতে পারবেন

মাথার বাম পাশে ব্যাথা হলে কি করনীয়

মাথা ব্যথা প্রত্যেক মানুষের জন্য অনেক বড় সমস্যা। যাদের মাথা ব্যাথার সমস্যা রয়েছে তারা প্রায় দিন মাথা ব্যথায় ভোগেন। মাথার বাম পাশে ব্যথা করলে বুঝে নিতে হবে এটি মাইগ্রেনের ব্যথা। কারণ এ ব্যথা পুরো মাথা জুড়ে হয় না। এই ব্যথা যখন শুরু হয় তখন যেকোনো একপাশে হয়। সেটা ডান পাশে হতে পারে বা বাম পাশে।

মাইগ্রেনের সমস্যা প্রায় মানুষের মধ্যে দেখা যায়। এ সমস্যায় নারীরা বেশি ভোগে থাকেন। মাইগ্রেনের সমস্যা একবার শুরু হলে এটি একেবারে ভালো হয় না। নিয়ম মেনে চললে কিছুটা কমে যায়। সেজন্য মাইগ্রেনের ব্যথা থাকলে সব সময় নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে যাতে করে এই ব্যথা কমে যায়।

মাথার তালুতে ব্যথা হলে করণীয়

মাথাব্যথা সমস্যা প্রত্যেক মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী। মাথা ব্যাথার করার পিছনে রয়েছে অনেক কারণ। মাথা ব্যথার ধরন বিভিন্ন জনের বিভিন্ন রকম। মাথা ব্যাথা কোন দিকে বা কোথায় এই ধরণ দেখে বুঝে নেওয়া যায় মাথা ব্যাথা করার কারণ। বিভিন্ন ধরনের মাথা ব্যথার মধ্যে একটি হচ্ছে মাথার তালুতে ব্যথা। এই ব্যথা সাধারণত মানসিক বা শারীরিক চাপের কারণে হয়ে থাকে।

অতিরিক্ত মানসিক চাপ হলে এ ধরনের ব্যথা হয়। এই ব্যথা সাধারণত তীব্র থেকে মাঝারি হতে পারে। এছাড়াও এ ব্যথা ঘুম কম হওয়ার কারণে ও হয়ে থাকে। মাথার তালুতে যদি ব্যথা করে তাহলে প্রাথমিক অবস্থায় চিন্তার কোন কারণ নেই মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমালে এ ব্যথা সেরে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

তারপরেও না কমলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে ব্যথার কারণে নির্ধারণ করে চিকিৎসা নিতে হবে।

মন্তব্য

উপরের আলোচনা পর্যালোচনার পর আমার মনে হয় যে কোন ধরনের ব্যথানাশক ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়া উচিত। প্রিয় পাঠক, আপনি যদি এই আর্টিকেল পড়ে উপকৃত হন এবং আপনার ভাল লাগে তাহলে দয়া করে আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url