পাথরকুচি পাতা খাওয়ার ১৮টি উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আপনি কি পাথরকুচি পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আসুন আমরা আপনাকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে পাথরকুচি পাতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেল মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পাথরকুচি পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
এই আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন পাথরকুচি পাতা খাওয়ার নিয়ম, পাথরকুচি পাতা খাওয়ার অপকারিতা ইত্যাদি।

ভূমিকা

ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে পাথরকুচি আমরা সকলেই চিনি। সুন্দর্য বর্ধনসহ এই পাথরকুচির রয়েছে অনন্য গুনাগুণ। চিকিৎসা ক্ষেত্রে যে সকল ঔষধি গাছ প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে পাথরকুচি তাদের মধ্যে একটি। বিভিন্ন রোগের মহা ঔষধ বলা হয় পাথরকুচিকে। প্রাকৃতিক উপায়ে ঘরোয়াভাবে রোগ নিরাময় করার জন্য পাথরকুচির রয়েছে অধিক কার্যকারিতা।


আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা ক্ষেত্রে পাথরকুচির রয়েছে অনেক প্রয়োজনীয়তা। এটি শরীরের বিভিন্ন রোগের মোকাবেলা করতে সক্ষম। পাথরকুচি পাতার রস খেলে জটিল এবং কঠিন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এটি মহিলাদের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে থাকে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা পাথরকুচি পাতাকে বিভিন্ন ধরনের রোগের উল্লেখযোগ্য আয়ুর্বেদিক ঔষধ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

পাথরকুচি পাতার যেমন রয়েছে অনেক উপকারিতা তেমনি এর সামান্য কিছু অপকারিতাও রয়েছে। আমাদের আজকের এই প্রতিবেদন মূলতঃ পাথরকুচি পাতার খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা নিয়ে।

পাথরকুচি পাতা খাওয়ার উপকারিতা

পাথরকুচির পাতা খেলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা লক্ষ্য করা যায়। আপনি যদি এই উপকারিতা সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে আসুন পাথরকুচি পাতা খাওয়ার উপকারিতাগুলো জেনে নিই-

কিডনির পাথর অপসারণ করেঃ কিডনি মানবদেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যেটির সুস্থ রাখা মানব শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। বিভিন্ন কারণে কিডনিতে পাথর তৈরি হয়। পাথরকুচির পাতার রস এ কিডনির পাথর অপসারন করতে সাহায্য করে।

পাইলসের সমস্যা দূর করেঃ পাইলস এবং অর্শ রোগ অত্যন্ত পীড়াদায়ক একটি রোগ। পাথরকুচির পাতার রস গোল মরিচের গুড়ার সাথে মিশিয়ে খেলে পাইলসের সমস্যা ধীরে ধীরে কমে যায়।

লিভার সুস্থ রাখেঃ লিভার সুস্থ রাখতে পাথরকুচি পাতার রয়েছে অন্যান্য ক্ষমতা। পাথরকুচি পাতার রস খেলে বা পাতা চিবিয়ে খেলে লিভারের যে কোন সমস্যা দূর করে এবং লিভার সুস্থ রাখে

পেটের সমস্যা দূর করেঃ পাথরকুচি পাতার রস পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে। পেটের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা যেমন- ডায়রিয়া, আমাশয়, কলেরাসহ আরো অন্যান্য সমস্যা দূর করে থাকে। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য পাথরকুচি পাতার রস ৩ মিলি, ৩ গ্রাম জিরা এবং ৬ গ্রাম ঘি মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। এই মিশ্রণটি কয়েকদিন ব্যবহার করলে পেটের বিভিন্ন সমস্যা ধীরে ধীরে কমে যাবে।

শরীরে জ্বালাপোড়া দূর করেঃ মানব শরীরে বিভিন্ন কারণে জ্বালাপোড়া তৈরি হয়। পাথরকুচি পাতা শরীরের জ্বালাপোড়া দূর করতে সহায়তা করে। আধা কাপ গরম পানির সাথে পাথরকুচির পাতার রস খেলে এই জ্বালাপোড়া কমে যায়। এ সমস্যা দূর করার জন্য দিনে দুইবার এই উপায় অবলম্বন করতে হবে।

ওজন কমায়ঃ পাথরকুচি পাতা ওজন কমাতে সাহায্য করে। কুসুম কুসুম গরম পানির সাথে পাথরকুচি পাতার রস খেলে পেটের অতিরিক্ত চর্বি কমে যায় এবং ধীরে ধীরে ওজন নিয়ন্ত্রণে আসে।

ত্বকের যত্নেঃ পাথরকুচি পাতাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পানি। যা ত্বকের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। পাথরকুচি পাতা পেস্ট করে মুখে লাগালে মুখে ত্বকের ব্রণ দূর হয়ে যায়। এছাড়াও সংবেদনশীল ত্বকের জন্য এটি অত্যন্ত উপকারী।

মাথা ব্যাথা দূর করেঃ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন কারণে মাথাব্যথার সমস্যা দেখা দেয়। এ সমস্যা দূর করে থাকে পাথরকুচি পাতা। মাথা ব্যথা করলে পাথরকুচি পাতা বেটে কপালে লাগিয়ে দিলে ব্যথা অনেক ক্ষেত্রে উপশম হয়।

গলগন্ড রোগ দূর করেঃ পাথরকুচি পাতায় যে সকল উপাদান রয়েছে সেগুলো উপাদান গলগন্ড রোগের জন্য খুবই কার্যকরী। যারা গলগন্ড রোগে আক্রান্ত আপনি দুবেলা পাথরকুচি পাতা রস খেতে পারেন। তাহলে এ সমস্যার দ্রুত দূর হয়ে যাবে।

চর্মরোগ দূর করেঃ চর্ম রোগের সমস্যা থাকলে পাথর কৃষি পাতা বেটে লাগালে সমস্যা দূর হয়ে যাবে। পাথরকুচি পাতার রস এবং পাতার পেস্ট চামড়ার যে জায়গায় সমস্যা সেখানে লাগালে সে সমস্যা দূর হয়ে যায়।

চোখের ব্যাথা উপশম করেঃ অনেক সময় মাথা ব্যথার কারণে চোখের ব্যথা শুরু হয়ে যায়। পাথরকুচি পাতার রস চোখের চারপাশে লাগালে চোখে সাদা অংশের ব্যথা কমে যায়।

প্রস্রাবের ইনফেকশন দূর করেঃ প্রস্রাবের ইনফেকশন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মহিলাদের হয়ে থাকে। এ ইনফেকশন বিভিন্ন কারণে হতে পারে। পাথরকুচি পাতার রস প্রস্রাবের ইনফেকশন দূর করতে সহায়তা করে।

সর্দি কাশি নিরাময়েঃ সর্দি কাশি সমস্যা দেখা দিলে পাথরকুচি পাতা গরম করে রস করে নিতে হবে। তারপর এর সাথে এক চিমটি পরিমাণ লবণ যোগ করে খেতে হবে। দ্রুত ফলাফল পাওয়ার জন্য এটি দিনে তিনবার এক চামচ করে খেতে হবে।

টক্সিন দূর করেঃ না না কারণে আমাদের শরীরে ক্ষতিকারক টক্সিন জমে যায়। পাথরকুচি পাতার রস ক্ষতিকারক টক্সিন বের করে শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

ত্বকের এলার্জি দূর করেঃ পাথরকুচি পাতার রস গোলাপ জলের সাথে মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বকের এলার্জি দূর করতে সাহায্য করে। এটি তবে শুষ্কতা দূর করতে অত্যন্ত কার্যকরী। এছাড়াও এটি ব্যবহারে ত্বকের সুস্থতা বজায় রাখে।

চুলের যত্নেঃ পাথরকুচি পাতার রস চুলের যত্নে অত্যন্ত কার্যকরী। এটি চুলের অকালপক্কতা রোধ করতে সাহায্য করে। পাতা নিয়মিত ব্যবহার করলে মাথার ত্বক ভালো থাকে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ পাথরকুচি পাতা শুকিয়ে গুড়া করে নিয়ে চায়ের সাথে মিশিয়ে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হয়ে যায়। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আছে তারা নিয়মিত এই উপায়টি অবলম্বন করতে পারেন।

কৃমি দূর করেঃ পাথরকুচি পাতা পেস্ট করে মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে কৃমি দূর হয়ে যায়। পাথরকুচি পাতার রস মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে আমাশয়ের সমস্যা দূর হয়ে যায়।

পাথরকুচি পাতা খাওয়ার নিয়ম

পাথরকুচি পাতা যেকোনো উপায় খাওয়া যায়। তবে নিয়ম অনুযায়ী খেলে এর উপকারিতা অনেক বেশি পাওয়া যায়। আপনি যদি পাথরকুচি পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে অবশ্যই জেনে নিন। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক পাথরকুচি পাতা খাওয়ার নিয়ম -
  • পাথরকুচি পাতা ভালোভাবে পেস্ট করে মধুর সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়। এতে শরীরেবিভিন্ন ধরনের জ্বালাপোড়া কমে যায়।
  • পাথর পাথরকুচি পাতার রস করে লেবুর সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়। এভাবে খেলে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি ঝরিয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
  • পাথরকুচি পাতার রস গোল মরিচের গুড়ার সাথেও খেতে পারেন। এ নিয়মে খেলে কিডনির জন্য অত্যন্ত উপকার বয়ে আনবে।
  • পাথরকুচি পাতা শুকিয়ে গুড়া করে চায়ের সাথেও খাওয়া যায়। এভাবে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করবে এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করবে।
  • পাথরকুচি পাতার রস মুখে ও মাথার ত্বকে ব্যবহার করা যায় ফলে ত্বকের ও চুলের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
  • এছাড়াও আপনি সরাসরি পাথরকুচি পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন। তাহলে এর সম্পূর্ণ উপকারিতা পাওয়া যাবে।

পাথরকুচি পাতা সম্পর্কিত কয়েকটি প্রশ্ন এবং উত্তর

প্রশ্নঃ সকালে খালি পেটে পাথরকুচি পাতার রস খেলে কি হয়?

উত্তরঃ সকালে খালি পেটে পাথরকুচি পাতার রস খেলে পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়ে যায়। এছাড়াও শরীরের অন্যান্য সমস্যা দূর করে পাথরকুচি পাতার রস।

প্রশ্নঃ পাথরকুচি কিভাবে বংশবিস্তার করে?

উত্তরঃ পাথরকুচি পাতা থেকে চারা উৎপাদন করা অত্যন্ত সহজ। চারা উৎপাদনের জন্য একটি পাতা নিয়ে মাটিতে রেখে দিলে পাথর প্রতিটি ভাঁজে ভাঁজে চারা বের হবে।

পাথরকুচি পাতার অপকারিতা

পাথরকুচি পাতার রয়েছে অনেক উপকারিতা তবে এর সামান্য কিছু অপকারিতাও রয়েছে। তাহলে চলুন জেনে নেই পাথরকুচি পাতার অপকারিতাগুলো-
  • পরিমাণ মতো পাথরকুচি পাতা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে পেটের বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করতে পারে।
  • বেশি পরিমাণ পাথরকুচি পাতা বা রস খেলে মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
  • দীর্ঘদিন ধরে পাথরকুচি পাতা খেলে ক্ষুধামন্দার সমস্যা তৈরি হয়।
  • অতিরিক্ত পরিমাণ পাথরকুচি পাতার রস খাওয়ার ফলে পিত্তথলিতে সমস্যা তৈরি হতে পারে।

শেষ কথা

ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে পাথরকুচি আমরা সকলেই চিনি। সুন্দর্য বর্ধনসহ এই পাথরকুচি পাতার রয়েছে অনন্য গুনাগুণ। চিকিৎসা ক্ষেত্রে যে সকল ঔষধি গাছ প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url