কিভাবে চালের গুড়া দিয়ে ফর্সা হওয়া যায়-তৈলাক্ত যত্নে চালের গুড়ার ব্যবহার জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আপনি কি চালের গুড়া দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে আসুন এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে চালের গুড়া দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায় এবং তৈলাক্ত ত্বকের চালের গুড়ার ফেসপ্যাক বানানোর পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে হলে সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
চালের গুড়া দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়
এই আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন মুখে চালের গুড়া মাখলে কি হয়, চালের গুড়া ও মসুর ডালের ফেসপ্যাক ইত্যাদি।

ভূমিকা

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজন মিটানো হয় চাল দিয়ে। এই চাল থেকে তৈরি করা হয় চালের গুড়া। আবার নানা ধরনের পিঠাপুলি তৈরি করা হয় চালের গুড়া দিয়ে। চালের গুড়া দিয়ে যেমন আমাদের খাদ্য চাহিদা মেটানো হয় তেমনি চালের গুড়া ব্যবহারে আমাদের ত্বক ফর্সা এবং উজ্জ্বল হয়।


চালের গুড়ায় রয়েছে অনন্য প্রাকৃতিক গুনাগুণ যে কারণে প্রাচীনকাল থেকে ত্বকের যত্নে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এই চালের গুড়া। এটি ব্যবহারে খুব সহজে এবং অল্প সময়ে ত্বক হয়ে উঠে দাগহীন ফর্সা এবং উজ্জ্বল । কারণ চালের গুড়ায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান যা আমাদের ত্বকের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন

চালের গুড়া ব্যবহারে ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। যারা প্রাকৃতিক উপায়ে ঘোরোয়াভাবে ফর্সা ত্বক পেতে চান তারা অবশ্যই চালের গুড়া ব্যবহার করতে পারেন। নিয়মিত চালের গুঁড়া ব্যবহার করলে ত্বক দুধের মত ফর্সা হয়ে উঠবে। আজকের এই প্রতিবেদনে মূলতঃ চালের গুড়া দিয়ে কিভাবে ফর্সা করা যায় সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

চালের গুড়া দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়

চালের গুড়া বিভিন্ন উপায়ে ব্যবহার করে ত্বক ফর্সা করা যায়। কি কি উপায় চালের গুড়া দিয়ে ত্বক ফর্সা করা যায় সে বিষয়ে আমরা আলোচনা করব। তাহলে চলুন জেনে নেই চালের গুড়া দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়গুলো-

চালের গুড়ার পেস্টেঃ চালের গুড়ার পেস্টেকে প্রাকৃতিক সানস্ক্রিন বলা হয় । চালের গুড়া ঠান্ডা দুধের সাথে মিশিয়ে ভালোভাবে পেস্ট করে নিতে হবে। তারপর সেই পেস্ট করা চালের গুড়া মুখে ও গলায় ভালোভাবে লাগাতে হবে। এরপর ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে কয়েকদিন ব্যবহার করলে ত্বকের ফর্সাভাব ধীরে ধীরে টের পাওয়া যাবে।

ডার্ক সার্কেল কমাতেঃ চালের গুড়া ত্বকের ডার্ক সার্কেল কমাতে সাহায্য করে। ডার্ক সার্কেল কমানোর জন্য চালের গুড়ার সাথে কাস্টার ওয়েল মিশিয়ে ব্যবহার করতে হবে এবং তার সাথে যুক্ত করতে হবে কলা। তারপর এটিকে ভালোভাবে পেস্ট করে নিতে হবে। পেস্ট করা হয়ে গেলে এই মিশ্রণটিকে চোখের নিচে এবং ত্বকের বিভিন্ন ধরনের কালো জায়গায় ভালোভাবে লাগাতে হবে।

অতিরিক্ত তেল শুষে নেয়ঃ চালের গুড়া ত্বকের অতিরিক্ত তেল শুষে নিতে সাহায্য করে। পরিমাণমতো চালের গুড়ার মধ্যে চকলেটের গুঁড়া, চিনি ও মধু নিতে হবে। তারপর এগুলো ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। মেশানো হয়ে গেলে এই মিশ্রণটি মুখে লাগাতে হবে। আপনি চাইলে এটি মুখ এবং হাত-পায়েও ব্যবহার করতে পারেন। মুখে লাগানোর পর টানটান ভাব হলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। মনে রাখতে হবে এটি তোলার সময় জোরে জোরে ঘষা যাবেনা। নিয়মিত এটি ব্যবহার করলে ত্বক পরিষ্কার উজ্জ্বল ও মসৃণ দেখাবে।

ত্বক উজ্জ্বল ও ফর্সা করতেঃ ত্বক উজ্জ্বল ও ফর্সা করতে চাইলে এই মিশ্রণটি ব্যবহার করতে পারেন। মিশ্রণ তৈরি করার জন্য নিয়ে নিতে হবে চালের গুড়ার সাথে মধু ও টক দই। এগুলো নেয়ার পর একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর এই মিশ্রণটি ত্বকে ভালোভাবে লাগাতে হবে। ভালো ফলাফলের জন্য এই মিশ্রণটি সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন ব্যবহার করতে পারেন।

পিম্পল ও বয়সের ছাপ দূর করতেঃ বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ত্বকে বিভিন্ন ধরনের পিম্পল ও বয়সের ছাপ দেখা দেয়। এগুলো দূর করার জন্য চালের গুড়া ও শসার রস একসাথে মিসিয়ে ভালোভাবে পেস্ট করে নিতে হবে। তারপর এই পেস্ট করা মিশ্রণটি ত্বকে লাগাতে হবে। এটি ব্যবহারে ত্বকে বয়সের ছাপ কমিয়ে তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি নিয়মিত ব্যবহার করলে মুখে ত্বকের পিম্পল দূর হয়ে যায়। এ ফেসপ্যাক ব্যবহারের ফলে ত্বকের রোদে পোড়া দাগও দূর হয়ে যায়।

ব্রণ ও ফুসকুড়ির দাগ দূর করতেঃ অনেকের ত্বকে ব্রণ এবং ফুসকুড়ি দেখা যায়। ব্রণ এবং ফুসকুড়ি দূর হলেও থেকে যায় এগুলোর দাগ। এ দাগগুলো দূর করার জন্য তিন চামচ চালের গুড়ার সাথে দুই চামচ হলুদের গুড়া এবং কিছুটা লেবুর রস মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। এই মিশ্রণটি মুখের ত্বকে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে হবে। তাহলে ত্বকের এই দাগগুলো ধীরে ধীরে কমে যাবে।

তৈলাক্ত ত্বকের চালের গুড়ার ফেসপ্যাক

তৈলাক্ত ত্বকের জন্য চালের গুড়া অত্যন্ত উপকারী। যাদের ত্বকের অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব থাকে তারা নিয়মিত চালের গুড়া দিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করে ব্যবহার করলে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর হয়ে যাবে।

ফেসপ্যাক তৈরির প্রক্রিয়া

পরিমাণ মতো চালের গুড়া একটি পরিষ্কার পাত্রে নিয়ে নিতে হবে। তারপর চালের গুড়ার সাথে লেবুর রস বা শসার রস দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এভাবে চালের গুড়ার প্যাক তৈরি করে ব্যবহার করলে মুখের অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব দূর হয়ে যাবে। এছাড়াও সরাসরি চালের গুড়া ব্যবহার করা যায় এভাবে ব্যবহার করলেও মুখের তৈলাক্ত ভাব দূর হয়।

মুখে চালের গুড়া মাখলে কি হয়

চালের গুড়া খাদ্যের চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি ত্বকের যত্ন অত্যন্ত কার্যকরী। মুখে চালের গুড়া মাখলে ত্বকের বিভিন্ন ধরনের উপকার হয়। সারাদিনের বিভিন্ন কারণে মুখের ত্বকের অবস্থা অনেক খারাপ হয়। মুখে চালের গুড়া মাখলে কি কি উপকার হয় চলুন জেনে নেওয়া যাক-
  • চালের গুড়া খুব উঁচ্চমানের সানস্ক্রিন হিসেবে কাজ করে। চালের গুড়া নিয়মিত ব্যবহার করলে সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি হতে ত্বককে রক্ষা করে।
  • চালের গুড়ায় রয়েছে অ্যালেনশান নামক উপাদান যা রোদে পুড়ে যাওয়া ত্বককে ভালো করে এবং ক্ষতি হয়ে যাওয়া ত্বককে সুন্দর করে তুলে।
  • মেলোনিনের উৎপাদনের হার কমায় চালের গুড়া । কারণ এতে রয়েছে tyrosinase নামক উপাদান যা ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
  • চালের গুড়াতে রয়েছে ভিটামিন বি যা ত্বকের মৃত কোষগুলোকে সরিয়ে ফেলে এবং ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলো স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে।
  • ত্বকে কোলাজেন উপাদান বৃদ্ধি করতে অত্যন্ত কার্যকরী চালের গুড়া। এটি ব্যবহারে ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না।

চালের গুড়া ও মসুর ডালের ফেসপ্যাক

চালের গুড়া ও মসুর ডাল ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকার। এই দুই উপাদান ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে ত্বকের সুস্থতা বজায় রাখে। চালের গুড়া ও মসুর ডাল একসাথে মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করলে ত্বকের উজ্জলতা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়। তাহলে চলুন এবার জেনে নেই মসুরের ডাল চালের গুড়া দিয়ে কিভাবে ফেসপ্যাক তৈরি করে -

ফেসপ্যাক তৈরি করার জন্য প্রথমে নিয়ে নিতে হবে চালের গুড়া ও মসুর ডালের গুড়া, হলুদের গুঁড়া, চন্দনের গুড়া ইত্যাদি। এগুলোর সাথে আরও যুক্ত করতে হবে মধু ও গোলাপজল। এই সবগুলো উপাদান একসাথে নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। ভালোভাবে মেশানো হয়ে গেলে এই মিশ্রণটির মুখের ত্বকে মাখতে হবে। মুখের ত্বকে মাখার পর ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে হবে।

এই ফেসপ্যাক ব্যবহারের ফলে ত্বক কুঁচকিয়ে যাওয়া এবং ত্বকের তারুণ্যে ধরে রাখে। এছাড়াও এটি নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় এবং ফর্সা করে তোলে। আরো একটি উপায়ে চালের গুড়া ও মসুরের ডাল ফেসপ্যাক তৈরি করা যায়। সেজন্য নিয়ে নিতে হবে চালের গুড়া, মসুর ডালের গুড়া এবং হলুদের গুড়া ও লেবুর রস।

এগুলো একসাথে মিশিয়ে ভালোভাবে পেস্ট করে নিতে হবে। তারপর এটি মুখে লাগাতে হবে এবং ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি ব্যবহারের ফলে মুখে ফুসকুড়ি ও ব্রণ দূর হয়ে যায়। নিয়মিত ব্যবহার করলে দাগও দূর হয়ে যায় এবং ত্বক মসৃন এবং কমল দেখায়।

চালের গুড়া ব্যবহারে সতর্কতা

চালের গুড়া ব্যবহার করলে মুখের ত্বকে খুব ভালো ফল পাওয়া যায়। কিন্তু চালের গুড়া সতর্কতার সাথে ব্যবহার করতে হবে। সে সতর্কতাগুলো নিচে দেওয়া হল -
  • চালের গুড়া ব্যবহার করার পর সেটি জোরে জোরে ঘষে তোলা যাবে না তাহলে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
  • বাজার থেকে কিনে নিয়ে সেই চালের গুড়া মুখে ত্বকে ব্যবহার করা যাবে না। কারণ বাজারের চালের গুড়াতে অনেক সময় ভেজাল মিশানো হতে পারে।
  • সবার আগে যে বিষয়টি জানতে হবে সেটি হলো আতপ চালের এবং কালোজিরা চালের চালের গুড়া সবচেয়ে বেশি ত্বকের জন্য উপকারী।
  • চাল গুড়া করার পর সেটি ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে হবে। তাছাড়া সেটি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • চালের গুড়া কিছু দিন রাখার পর হলুদ হয়ে গেলে সেটি মুখের ত্বকে ব্যবহার করা যাবে না। সেটি ব্যবহার করলে ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে।
  • যাদের ত্বক শুষ্ক তারা নিয়ম মেনে ব্যবহার করবেন। বেশি ব্যবহার করলে ত্বকের শুষ্কতা আরো বেড়ে যাবে এবং ত্বকের ক্ষতি হবে।

লেখক এর মন্তব্য

চালের গুড়ায় রয়েছে অনন্য প্রাকৃতিক গুনাগুণ যে কারণে প্রাচীনকাল থেকে ত্বকের যত্নে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এই চালের গুড়া। চালের গুড়ায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান যা আমাদের ত্বকের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। যারা প্রাকৃতিক উপায়ে ঘোরোয়াভাবে ফর্সা ত্বক পেতে চান তারা অবশ্যই চালের গুড়া ব্যবহার করতে পারেন। প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব আত্মীয় স্বজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url