শাহীদানা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা বিস্তারিত জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আপনি কি শাহীদানা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আসুন আমরা আপনাকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে শাহীদানা খাওয়ার উপকারিতা এবং শাহীদানা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেল মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
শাহীদানা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
এই আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন শাহীদানার দাম, শাহীদানা খাওয়ার অপকারিতা এবং শাহীদানার গুনাগুণ ইত্যাদি।

ভূমিকা

শাহীদানা আয়রন ও প্রোটিনযুক্ত এমন একটি বীজ যার সম্বন্ধে আমরা অনেকেরই অজানা। এই শাহীদানার আরেক নাম হচ্ছে হালিম দানা। এটি দেখতে অনেক ছোট। হালিম দানা বা শাহীদানায় রয়েছে নানা ধরনের পুষ্টি উপকারিতা। এগুলো মানব শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে শরীরকে সুস্থ সবল রাখতে সহায়তা কর। এটি সাধারণত রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়।


শাহীদানায় আছে সকল পুষ্টি উপাদান যা শরীরকে বিভিন্ন ক্ষতিকর জীবাণু থেকে এবং জটিল ও কঠিন রোগ বালাই থেকে দূরে রাখে। শাহীদানা মেয়েদের পিরিয়ডের সময় যে ধরনের সমস্যা তৈরি হয় সে সমস্যা দূর করে থাকে। এটি শরীরের আয়রন ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করতে সর্বোচ্চ সাহায্য করে। কারণ শাহীদানাতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়রন ও ক্যালসিয়াম।

এছাড়াও এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন যা প্রোটিনের চাহিদা পূরণে সহায়তা করে থাকে। বিভিন্ন রান্নায় ব্যবহৃত হয় এই শাহীদানা। এটি রান্না করলে খেতে অনেক সুস্বাদু হয়। আমাদের আজকের এই প্রতিবেদন মূলত সাহীদানার উপকারিতা ও গুনাগুণ নিয়ে।

শাহীদানা খাওয়ার উপকারিতা

দেখতে অনেক ছোট হলেও শাহীদানায় রয়েছে নানা ধরনের উপকারিতা। নিয়মিত এটি খেলে শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দূর করে শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখতে সাহায্য করবে। চলুন তাহলে শাহীদানা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেই।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ শাহীদানা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার সবচেয়ে বেশি কার্যকারিতা রয়েছ। যারা কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় ভুগছেন তারা এক চামচ শাহীদানা এক গ্লাস পানিতে রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

দুগ্ধদানকারী মায়েদের জন্যঃ যেসব মায়েরা বাচ্চাদের দুগ্ধদান করে থাকেন তাদের জন্য এটি অতি প্রয়োজনীয় একটি খাবার। অনেক সময় মায়েদের দুগ্ধদানকালে দুধ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং বাচ্চারা প্রয়োজন মত দুধ খেতে পায় না। সে সকল মায়েরা নিয়মিত শাহীদানা খেলে এই সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

হজমের সমস্যাঃ হজমের সমস্যা দূর করতে শাহীদানা অত্যন্ত কার্যকরী। যাদের বদহজমের সমস্যা আছে বা পেটের অন্যান্য সমস্যা আছে তারা নিয়মিত এক গ্লাস পানিতে এক চামচ শাহীদানা ভিজিয়ে রেখে খেতে পারেন তাহলে দ্রুত এর সমাধান পেয়ে যাবেন।

আয়রনের ভালো উৎসঃ শাহীদানা বা হালিম দানাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। যা শরীরের আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে প্রয়োজনমত আয়রন সরবরাহ করে থাকে। যাদের রক্ত শূন্যতা বা রক্তস্বল্পতা সমস্যা আছে তারা এটি নিয়মিত খেতে পারেন তাহলে আয়রনের ঘাটতি কমে যাবে।

প্রস্রাবের জ্বালাপোড়াঃ বর্তমানে প্রায় মানুষের মধ্যে প্রসাবে জ্বালাপোড়ার সমস্যা দেখা দেয়। প্রসাবে জ্বালাপোড়া খুবই কষ্টদায়ক একটি সমস্যা। এই শাহিদানর মাধ্যমে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। এক গ্লাস দুধের সাথে এক চামচ শাহীদানা ভালোভাবে মিশিয়ে খেলে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর হয়ে যাবে ।

প্রোটিনের উৎসঃ শাহীদানাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন আছে। এদের প্রোটিনের ভালো উৎস বলা হয়ে থাক। এটা নিয়মিত খেলে শরীরের প্রোটিনের চাহিদা সম্পূর্ণভাবে পূরণ হয়ে যায়।

মাসিক চক্র নিয়ন্ত্রণ করেঃ শাহীদানার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইটো কেমিক্যাল উপাদান যা এস্ট্রোজেনের সমতুল্য হরমোন উপাদান যা মহিলাদের শরীরের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে থাকে। শাহীদানা খেলে মেয়েদের মাসিক চক্র স্বাভাবিকভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখে

হাঁপানি দূর করেঃ হাঁপানির সমস্যা দূর করতে সক্ষম শাহীদানা। যাদের হাঁপানি সমস্যা আছে তারা নিয়মিত এটি খেলে হাঁপানি দূর হয়ে যাবে। এছাড়া এটি সর্দি-কাশি নিরাময় করে এবং ঠান্ডাজনিত সব সমস্যা দূর করে।

ওজন কমাতেঃ যারা অতিরিক্ত ওজন নিয়ে ভাবছেন তাদের জন্য মুখ্য উপায় হচ্ছে শাহীদানা। এক গ্লাস পানির সাথে এক চামচ শাহীদানা সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে পান করলে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমে যাবে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে আসবে। যদি এর সাথে লেবুর রস যুক্ত করতে পারেন তাহলে দ্রুত ভালো ফল পাওয়া যাবে।

এনার্জি বৃদ্ধিঃ নিয়মিত শাহীদানা খেলে শরীরের সকল দুর্বলতা কাটিয়ে প্রচুর পরিমাণে এনার্জি বৃদ্ধি এনে দিবে। এটি শরীরকে শক্তিশালী করে তোলে এবং সুস্থ সবল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিঃ স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে শাহীদানার রয়েছে অনন্য ভূমিকা। এটি খাওয়ার ফলে দুর্বল স্মৃতি শক্তি উন্নত করে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে। খালি পেটে পানির সাথে এটি মিশিয়ে খেলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ শাহীদানাতে রয়েছে সকল পুষ্টি উপাদান যা শরীরকে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। নিয়মিত শাহীদানা বা হালিম দানা খেলে শরীরের সমস্যা দূর করার পাশাপাশি শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি ঘাটতি পূরণ করে।

চুল ও ত্বকের যত্নেঃ শাহীদানা ত্বক ও চুলের জন্য অনেক উপকারি একটি উপাদান। এটি গুড়া বা পাউডার করে পানির সাথে মিশিয়ে পেস্ট করে মুখে মেখে কিছুক্ষণ পরে ধুয়ে ফেলুন, দেখবেন ত্বক অনেকটা মসৃণ ও উজ্জল দেখাবে। এটি চুলে দিতে চাইলে এর গুড়ো পানি দিয়ে পাতলা করে মিশিয়ে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর ধুলে চুল ঝলমলে উজ্জল দেখাবে।

ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করেঃ ৩০ বছর পার হতে না হতেই ক্যালসিয়ামের ঘাটতি শুরু হয়ে যায়। আর ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হলে হাড়ের বিভিন্ন রকম সমস্যা তৈরি হয়। এই ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করার জন্য আপনি নিয়মিত শাহীদানার শরবত খেতে পারেন। তাহলে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ হয়ে যাবে এবং হাড় মজবুত হবে।

ফুসফুসের সমস্যা দূর করেঃ ফুসফুসের সমস্যা থাকলে শরীরে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ফুসফুসের ছোটখাটো সমস্যা থেকে জটিল সমস্যায় রূপ ধারণ করে। নিয়মিত শাহীদানা খাওয়ার পরে ফুসফুসের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে এবং বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হওয়া থেকে বাধা প্রদান করে।

শাহীদানার দাম

শাহীদানা কেনার জন্য প্রথমে যে বিষয়টি জরুরী সেটি হল এর দাম জানা। দামের ধারণা না থাকলে অনেক সময় ধোকার মধ্যে পড়ে যেতে হয়। তাহলে চলুন শাহীদানার দাম কেমন সে বিষয়ে কিছুটা ধারণা নেই-
  • ১ কেজি শাহীদানার দাম= ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা
  • ৫০০ গ্রাম শাহীদানার দাম= ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা
  • ২৫০ গ্রাম শাহীদানার দাম= ২০০ টাকা
  • ১০০ গ্রাম শাহীদানার দাম= ৮০ থেকে ১০০ টাকা
এছাড়াও এর দাম গুণগত মান এবং জায়গা ও চাহিদা অনুযায়ী কম বা বেশি হতে পারে। তবে শাহীদানা কেনার সময় অবশ্যই দেখে শুনে বুঝে কিনতে হবে। কারণ ভালোভাবে দেখে না কিনলে নিম্নমানের শাহীদানা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে বা নিম্নমানের শাহীদানা কিনে ঠকতে পারেন।

শাহীদানা খাওয়ার নিয়ম

প্রতিটি জিনিস খাওয়ার একটি নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। তেমনি শাহীদানা খাওয়ার কিছু নিয়ম আছে। নিয়ম মেনে খেলে উপকার ভালোভাবে পাওয়া যায়। তাহলে চলুন শাহীদানা কিভাবে খেতে হয় জেনে নেই-
  • শাহীদানা খাওয়ার জন্য প্রথমে এটিকে ভেজে কন্টেইনারে বা এয়ার টাইট বক্সে রেখে দিতে হয়। তারপর সেটি যখন তখন সুপ, পাস্তা এবং স্যান্ডউইচ এর উপর ছিটিয়ে খেতে পারেন।
  • এক গ্লাস পানির সাথে এক চামচ শাহিদানা মিশিয়ে সারারাত ভিজিয়ে সকালে খালি পেটে খাওয়া যায় এতে ভালো উপকার পাওয়া যায়।
  • দুধ ও চিনির সাথে সিদ্ধ করে ভালোভাবে মিশিয়ে শরবত বানিয়ে খাওয়া যায় এই শাহীদানা। এভাবে খেলে শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়।
  • ওজন কমানোর জন্য একগ্লাস পানিতে এক চামচ শাহীদানা ভিজিয়ে রেখে তার সাথে লেবুর রস যুক্ত করে খাওয়া যায়। তাহলে শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমে যাবে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে আসবে।
  • এছাড়া হালিম দানা বিভিন্ন রেসিপি তৈরি করে রান্না করে খাওয়া যায়।

শাহীদানার গুনাগুণ

শাহীদানা রয়েছে প্রচুর পরিমাণে গুনাগুণ যেগুলো আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজন। শাহীদানায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং প্রোটিন। সেজন্য এটি খেলে শরীরের বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাই দূর হয়ে যায়। বিশেষ করে মেয়েদের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে শাহীদানার রয়েছে এক অনন্য অবদান।

মেয়েদের পিরিয়ডের সময় যে সমস্যাগুলো দেখা দেয় তা দূর করতে শাহীদানা অত্যন্ত কার্যকরী। এছাড়াও এটি অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যা স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে। সাহীদানায় প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকায় এটি শিশুর হাড় ও দাঁত মজবুত করতে সাহায্য করে।

শাহীদানার অপকারিতা

অতিরিক্ত কোন খাবার খাওয়াই উচিত নয়। হালিম দানার ক্ষেত্রেও নিয়ম ঠিক একই। অতিরিক্ত হালিম দানা বা শাহীদানা খেলে উপকারের পরিবর্তে ক্ষতিকর হতে পারে। যারা হরমোনের ওষুধ খাচ্ছেন হরমোনের সমস্যায় ভুগছেন তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে হালিম দানা বা শাহীদানা খাওয়া শুরু করবেন। এছাড়া অল্প বয়স্ক মেয়েদের হালিম দানা খাওয়ার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।


অতিরিক্ত হালিম দানা খেলে পেটের বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হতে পারে। পেট ব্যথা বমি বমি ভাব মাথা ঘোরা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পার। হালিম নানা এমন একটি পুষ্টিকর খাদ্য যা নিয়মানুসারে খেলে শরীরে পুষ্টি পাওয়া যাবে কিন্তু অতিরিক্ত খেলে পুষ্টির পরিবর্তে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা তৈরি হতে পারে।

শেষ কথা

শাহীদানাকে অনেকে হালিম দানা বলে চিনে। এটির যেমন অনেক উপকারিতা রয়েছে তেমনি অল্প কিছু অপকারিতাও রয়েছে। শরীরের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য নিয়মিত ও পরিমিত শাহীদানা খাওয়া যেতে পারে। আপনি যদি নিজেকে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ রাখতে চান তাহলে এই শাহীদানা নিয়মিত খেয়ে দেখতে পারেন। প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url