কালোজিরার তেলের উপকারিতা - কালোজিরার তেল বানানোর নিয়ম

প্রিয় পাঠক, আপনি কি কালোজিরার তেলের উপকারিতা ও ব্যবহার বিধি সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? আজ এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাকে কালোজিরার তেলের উপকারিতা ও কালোজিরার তেলের ব্যবহার বিধি সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে পুরো পোস্টটি সম্পূর্ণরূপে মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

কালোজিরার তেলের উপকারিতা
এটি পড়লে আরো জানতে পারবেন কালোজিরার তেল মালিশের উপকারিতা, চুলে কালোজিরার তেলের উপকারিতা, কালোজিরার তেল বানানোর নিয়ম এবং খাঁটি কালোজিরার তেল চেনার উপায় ইত্যাদি।

ভূমিকা

কালোজিরাকে সকল রোগের মহা ঔষধ বলা হয়। কথিত আছে কালোজিরা মৃত্যু ব্যতিত সকল রোগের ঔষধ। এর গুণাগুণের কোন শেষ নেই। আমরা প্রায় সকলেই কালোজিরার পুষ্টিগুণের কথা জানি। প্রাচীন যুগ থেকে বর্তমান যুগ পর্যন্ত কালোজিরা বিভিন্ন রোগের মহা ওষুধ হিসেবে কাজ করে আসছে। কালোজিরা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনেক বেশি কার্যকরী।


অনেক সময় কবিরাজি চিকিৎসাতেও কালোজিরার তেল কার্যকরী উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কালোজিরার তেলের যে পরিমাণ উপকারিতা আছে তা অস্বীকার করার মত না। এই পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ কালোজিরার অনেক উপকারিতা রয়েছে। কালোজিরার তেল চুল ও ত্বকের পরিচর্যাসহ বিভিন্ন রোগের কার্যকারী ঔষধ হিসেবে কাজ করে। বাজারে বিভিন্ন ধরণের কালোজিরার তেল পাওয়া যায়।

বাজারের এই তেলে অনেক অসাধু ব্যবসায়ীরা ভেজাল দিয়ে বিক্রয় করে, এতে শরীরে রোগ প্রতিরোধের পরিবর্তে সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই কালোজিরার তেল ব্যবহার করলে খাঁটি কালোজিরার তেল ব্যবহার করতে হবে যাতে উপকার পাওয়া যায়।

কালোজিরার তেলের উপকারিতা

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ কালোজিরা তেল অনেক উপকারী একটি তেল। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে শরীরকে সুস্থ্য রাখতে সহায়তা করে কালোজিরার তেল ব্যবহার করার ফলে অনেক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। প্রতিদিন নিয়ম করে কালোজিরার তেল ব্যবহার করলে শরীরের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর হয়ে থাকে।

কালোজিরার তেল এক চামচ মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ জীবাণু দূর করে এবং শরীরকে সতেজ রাখে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করায় কালোজিরার তেলের অনেক উপকারিতা রয়েছে। তাদের জন্য কালোজিরা তেলের

উচ্চ রক্তচাপ কমায়ঃ কালোজিরার তেল উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। অনেকে কালোজিরার ভর্তা খান। কালোজিরা ভর্তা করে গরম ভাতের সাথে খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। যাদের হাই ব্লাড প্রেসার আছে তারা গরম পানি বা চা খাওয়ার পর কালোজিরা খেলে উচ্চ রক্তচাপ কমে।

ত্বকের বিভিন্ন সমস্যাঃ ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে কালোজিরার তেল, তিলের তেল এবং কালোজিরার গুড়া একসাথে মিশিয়ে মুখে মাখলে এক সপ্তাহের মধ্যে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয় এবং ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। কালোজিরার তেল ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। তাই ত্বক ভালো রাখতে নিয়মিত শরীরে কালোজিরর তেল ব্যবহার করা যায়।

পেটের বিভিন্ন সমস্যায়ঃ পেটের বিভিন্ন সমস্যায় কালোজিরার তেলের সাথে সমপরিমাণ মধু মিশিয়ে দুই থেকে তিনবার খেলে পেটের গ্যাসের সমস্যা এবং আমাশয় দূর হয়।

শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানি জনিত সমস্যাঃ যাদের শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানি আছে তারা নিয়ম করে কালোজিরা খেলে এ সমস্যা দ্রুত উপশম হবে। তাছাড়া প্রতিদিন খাবারের তালিকায় কালোজিরার ভর্তা যদি খাওয়া যায় তাহলে শ্বাসকষ্ট হাঁপানিজনিত সমস্যা কাছে ঘেষতে পারবে না।

মাথা ব্যাথা দূর করেঃ মাথা ব্যথার সমস্যা যাদের প্রায় লেগেই আছে তাদের জন্য কালোজিরার তেল অনেক উপকারী। মাথাব্যথা শুরু হলে কালোজিরার তেল মাথায় দিলে মাথা ব্যথা দূর হয়। এছাড়া মধুর সাথে সমপরিমাণ কালোজিরা তেল দুই থেকে তিনবার খেলে মাথা ব্যথার সমস্যা একেবারেই দূর হয়ে যায়।

সর্দি কাশি দূর হয়ঃ মধু ও কালোজিরার তেল সর্দি ও কাশির জন্য খুবই উপকারী। মধু ও কালোজিরার সাথে তুলসী রস মিশিয়ে খেলে খুবই দ্রুত সর্দি কাশি দূর হয়ে যায়।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ সকালে খালি পেটে এক চিমটি পরিমাণ কালোজিরার গুড়া এক গ্লাস পানির সাথে মিশিয়ে খেলে শরীরের গ্লুকোজ এর মাত্রা ঠিক থাকে ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ থাকে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কালোজিরার তেল ১০০ ভাগ কার্যকরী উপাদান।

লিভার সুস্থ রাখেঃ কালোজিরা লিভার সুস্থ্য রাখতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। তাই লিভারকে সুস্থ্য রাখার জন্য নিয়মিত কালোজিরা বা কালোজিরার তেল খাওয়া যেতে পারে। এ সমস্ত রোগের ক্ষেত্রে কালোজিরার তেল যথেষ্ট পরিমাণ উপকারিতা রয়েছে।

কালোজিরার তেল মালিশের উপকারিতা

কালোজিরার তেল শরীরে বিভিন্ন ধরনের ব্যথা উপশম করে। শরীরের যে অংশে ব্যথা অনুভব হয় সে অংশে কালোজিরার তেল মালিশ করলে অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়
  • কালোজিরা তেল মালিশের ফলে শরীরের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয়
  • মাথা ব্যথা করলে মাথায় কালোজিরা তেল মালিশ করলে মাথা ব্যথার দ্রুত দূর হয়ে যায়
  • কালোজিরার তেল মালিশের ফলে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ দূর হয়ে যায়
  • কালোজিরার তেল শরীরের প্রতিটি অঙ্গ কে সতেজ করে এবং সম্পূর্ণভাবে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে
  • কালোজিরার তেল ত্বকের ব্রণ দূর করে ত্বককে সুস্থ রাখে এবং তারুণ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে ইত্যাদি।

চুলে কালোজিরার তেলের উপকারিতা

চুল মানুষের সৌন্দর্যের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। মাথায় চুল কম থাকলে বা চুল না থাকলে পরিপূর্ণ সৌন্দর্য হয় না। কালোজিরার তেল চুলের জন্য উপকারী। কালিজিরার তেল ব্যবহার করলে চুল পড়া কমে যায়, নতুন চুল গজায়, চুল সিল্কি করে এবং চুল বহু গুণবৃদ্ধি করে। এ তেল ধৈর্য সহকারে ব্যবহার করলে টাক মাথায়ও চুল গজাবে।


কালোজিরার তেলের সাথে আপেল সিডার ভিনেগার একসাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে চুলের সুস্থতা বজায় থাকে। এছাড়াও আপেল সিডার ভিনেগার ও কালোজিরা তেল ব্যবহার ফলে চুলের খুশকি দূর হয় এবং চুল স্বাস্থ্যজ্জল হয়।

কালোজিরার তেলের ব্যবহার বিধি

  • মাথাব্যথা হলে কালোজিরা তেল মাথায় দিয়ে মালিশ করলে মাথা ব্যথা সেরে যায় এবং কালোজিরার তেলের ব্যবহার বিধি ভালোভাবে জানলে এই সমস্যা দ্রুত সমাধান হয়ে যায়
  • সর্দি কাশিতে এক চা চামচ কালোজিরার তেলের সাথে সম পরিমাণ মধু মিশিয়ে খেলে সর্দি কাশি দূর হয়
  • কালোজিরার তেল শরীরে ব্যথা হলে যে জায়গায় ব্যথা হয় সেই জায়গায় মালিশ করলে ব্যথা দূর হয়ে যায়
  • কালোজিরার ভর্তাও খাওয়া যায়, কালোজিরার ভর্তা খেলে শরীরের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয়
  • কালোজিরার তেল চুলে ব্যবহার করা যায় তাতে চুল অনেক ভালো হয়
  • এক গ্লাস পানির সাথে এক চিমটি পরিমাণ কালোজিরা খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে
  • মধুর সাথে কালোজিরা বেশি ব্যবহার করা হয় তাতে শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়ে যায়
  • গরম চায়ের সাথেও কালোজিরা খাওয়া যায় এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে খুবই কার্যকরী ইত্যাদি।

খাঁটি কালোজিরার তেল চেনার উপায়

কালোজিরার তেলের একটি নিজস্ব বর্ণ আছে যা পানিতে মিশে না। তেলের বিশুদ্ধতা পরীক্ষা করতে হলে একটি কাঁচের গ্লাসে অর্ধেক পরিমাণ পানি নিন। এখন এতে ১ চামচ কালোজিরার তেল দিয়ে কিছুক্ষণ ভালোভাবে নাড়াচাড়া করুন। লক্ষ করুন পানির রঙের কোন পরিবর্তন হয়েছে কিনা। রঙের পরিবর্তন না হলে বুঝবেন তেলটি খাঁটি।

কালোজিরার তেলের দাম

গুণে মানে বিচার করে কালোজিরার তেলের দাম কিছুটা তারতম্য থাকতে পারে ১০০ গ্রাম তেলের দাম ২০০ টাকা করে ২০০ গ্রাম ৪০০ টাকা ৫০০ গ্রাম তেলের দাম ১০০০ টাকা এবং ১০০০ গ্রাম বা ১ লিটার তেলের দাম ১৯০০ থেকে ২০০০ টাকা। তবে কালোজিরার তেলের দাম যেমনই হোক না কেন কালোজিরার তেলের উপকারের তুলনায় এটি কিছুই নয়।

কালোজিরার তেল কোথায় পাওয়া যায়

কালোজিরার তেল শরীরের জন্য অনেক উপকারী। কালোজিরার তেল কোথায় পাওয়া যায় সে সম্পর্কে আমরা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। মসজিদের সামনে অনেক সময় এই তেল বিক্রি করতে দেখা যায়। হোমিওপ্যাথিক ও আয়ুর্বেদিক ওষুধের দোকানেও এই তেল পাওয়া যায়। বিভিন্ন ফার্মেসিতে কালোজিরার তেল পেতে পারেন। এছাড়া মুদিখানার দোকানেও কালোজিরার তেল পাওয়া যায়।
 

কালোজিরার তেল কিনতে গেলে অবশ্যই দেখে শুনে বুঝে কিনতে হবে। খাঁটি তেলের পরিবর্তে অনেক সময় অসাধু বিক্রেতাগণ ভেজাল তেল বিক্রি করে থাকে। খাঁটি কালোজিরা তেল হলে সম্পূর্ণরূপে  উপকারিতা পাওয়া যায়।

কালোজিরার তেল বানানোর নিয়ম

ঘরোয়া উপায়েও কালোজিরার তেল তৈরি করা যায়। পরিমাণ মতো কালোজিরা নিয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। তারপর সেগুলো গুড়ো করতে হবে। গুড়ো করা হয়ে গেলে এক চা চামচ চিনি কালোজিরা গুড়ার সাথে মিশিয়ে হালকা তাপে নাড়তে হবে। কয়েক মিনিট নাড়ার পরে আস্তে আস্তে তেল বের হওয়া শুরু হবে। এভাবেই ঘরোয়া উপায়ে কালোজিরার তেল তৈরি হয়।

এছাড়া আর একটি উপায় হল কালোজিরার গুড়া আর মেথির গুড়া একসাথে নারিকেল তেলের সাথে মিশিয়ে কয়েকদিন রোদে রাখলে খাঁটি কালোজিরার তেল তৈরি হয়ে যাবে।

মন্তব্য

উপরের আলোচনায় কালোজিরার তেলের উপকারিতা ও ব্যবহার বিধি সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা পেয়েছেন
পরিশেষে বলা যায়, কালোজিরার তেল সবচেয়ে উপকারী একটি তেল। প্রিয় পাঠক এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে এবং যদি উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার পরিবার ও বন্ধুদের সাথে এটি শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url