আদা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - সকালে আদা খাওয়ার উপকারিতা জেনে নিন

প্রিয় পাঠক আপনি কি আদা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান। তাহলে আসুন এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আপনাকে আদা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং আদা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
আদা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
এটি পড়লে আরো জানতে পারবেন আদা খাওয়ার উপকারিতা, আদার ঔষধিগুণ এবং সকালে আদা খাওয়ার উপকারিতা ইত্যাদি।

ভূমিকা

আদা একটি মসলা জাতীয় খাদ্য। বিভিন্ন ধরনের খাবার রান্না করার ক্ষেত্রে এটি ব্যবহৃত হয়। ফল এবং সবজি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী কিন্তু আমরা কি জানি মসলাও শরীরের জন্য অনেক উপকারী। কিছু কিছু মসলা আছে যেগুলো শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এগুলোর মধ্যে আদা অন্যতম। আদার মধ্যে অনেক ওষুধি গুনাগুণ রয়েছে যা বিভিন্ন রোগের মহাঔষধ হিসেবে চিহ্নিত।


আদায় প্রোটিন খনিজ পদার্থ শ্বেতসার আঁশযুক্ত এবং ৮০ ভাগ পানি রয়েছে। আদা এক ধরনের ভেষজ উদ্ভিদ। এর মধ্যে যেগুলো ঔষধি গুণ আছে সেগুলো বিভিন্ন রোগের সমাধান হিসেবে কাজ করে। পূর্ববর্তী প্রজন্ম থেকে এ আদার ব্যবহার সঠিকভাবে হয়ে আসছে।

মুখের রুচি বাড়াতে আদার গুরুত্ব অত্যাধিক। খাবারের স্বাদ ও গন্ধ ছড়াতে আদার তুলনা নেই। এছাড়াও অন্যান্য অর্থকারী ফসলের চেয়ে কৃষকদের আদা চাষ অত্যান্ত লাভজনক।

আদা খাওয়ার উপকারিতা

মসলা জাতীয় যেগুলো খাদ্যের মধ্যে স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে সেগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে আদা। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকগণ বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে আদা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে। উপকারিতা পাওয়া যায় সেগুলো হলো-

ওজন কমাতেঃ আদা হল তীক্ষ্ণ ঝাঁকযুক্ত একটি মসলা জাতীয় খাবার। এটি খাওয়ার ফলে শরীরে চর্বি ঝরিয়ে ওজন কমাতে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে। আপনি যদি অতিরিক্ত ওজন কমাতে চান তাহলে প্রতিদিন নিয়ম করে আদা খান তাহলে ওজন ধীরে ধীরে কমতে থাকবে।

হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ আদা হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক। প্রতিদিন এক টুকরা জাতীয় বিয়ে খেলে হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং মুখে রুচি ফিরে আসে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে আধার কার্যকারিতা অনেক। যারা কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় ভুগছেন তারা প্রতিদিন এক টুকরা আদা চিবিয়ে বা আদার রস খেতে পারেন তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়ে যাবে।

ব্যথা উপশম করেঃ আদা ব্যাথা নাশক ওষুধ হিসেবে কাজ করে। বিভিন্ন ধরনের ব্যথা দূর করার জন্য আদা অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপাদান।

হার্ট অ্যাটাকের ঝুকি কমায়ঃ প্রতিদিন আদার রস বা চায়ের সাথে আদা খেলে হার্টের সকল ক্রিয়া ঠিক থাকে ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে যায়।

বমি বমি ভাব দূর করেঃ বমি বমি ভাব শরীরের শান্তি বিনষ্ট করে। আবার অনেকের যাত্রাপথে বমি বমি ভাব হয়ে থাকে এরকম সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এক টুকরা আদা খেয়ে নিলে এই সমস্যা দূর হয়ে যায়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ আদাতে রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল যা শরীরের রোগ জীবাণু ধ্বংস করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হলে শরীর সবসময় সুস্থ থাকে এবং যেকোনো রোগ শরীরে ঘেঁষতে পারে না।

সংক্রমণজনিত রোগ থেকে দূরে রাখেঃ এমন অনেক রোগ আছে যেগুলো একজনের হলে আরেকজনের সংক্রমিত হতে পারে। আদাতে এন্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান রয়েছে যেগুলো সংক্রমণজনিত রোগ থেকে দূরে রাখে।

মস্তিষ্ককে শান্ত রাখেঃ আদা মস্তিষ্ককে শান্ত রাখতে সহায়তা করে। এক কাপ চায়ের সাথে আদা বা আদার রস মিশিয়ে খেলে মস্তিষ্কের মধ্যে ফ্রেশ অনুভূতি হয় এবং শরীর ঝরঝরে থাকে।

ক্যান্সার প্রতিরোধে সক্ষমঃ আদতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং কঠিন রোগ থেকে শরীরকে দূরে রাখে। এই আদা আবার ক্যান্সার প্রতিরোধে সক্ষম। নিয়মিত আদা খেলে শরীরে ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধি হতে দেয় না।

সর্দি কাশি এবং হাঁপানি উপশম করেঃ আদার সাথে মধু মিশিয়ে খেলে সর্দি কাশি এবং হাঁপানির জন্য খুবই উপকার পাওয়া যায়। সর্দি কাশি সহ বিভিন্ন ধরনের ঠান্ডা জনিত রোগ দূর করার জন্য আদা খুবই কার্যকরী।

পেটের সমস্যা দূর করেঃ আদা পেটের বিভিন্ন রোগের সমাধান হিসেবে কাজ করে। যেমন পেট ব্যথা, আমাশয়, গ্যাসটিক, আলসার ইত্যাদি।

সকালে আদা খাওয়ার উপকারিতা

আমরা জানি আদার অনেক উপকারিতা রয়েছে। সকালে খালি পেটে আদা খেলে এর উপকারিতা অনেক বেশি পাওয়া যায়। ঘুম থেকে উঠে সকালে খালি পেটে আদা খাওয়ার যে সকল উপকারিতা রয়েছে সেগুলো হলো-
  • বমি বমি ভাব দূর করে এবং মুখের স্বাদ বহু গুনে বারিয়ে দেয়
  • শরীরের যে সকল প্রদাহ তৈরি হয় আদা সেগুলো দূর করতে সক্ষম
  • ক্ষতিকর কোলেস্টরের শরীরকে ক্ষতির দিকে ঠেলে দেয় সকালে খালি পেটে আদা খেলে শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টরে জমতে দেয় না।
  • সকালে ঘুম থেকে উঠে আদা খেলে হজম ক্ষমতা প্রচুর পরিমাণে বাড়িয়ে দেয়
  • আর তার মধ্যে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকায় মুখের জীবাণু ধ্বংস করে
  • হজম ক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে পেটের গ্যাস বা এসিডিটি দূর করে
  • মহিলাদের পিরিয়ডের ব্যথা সহ অন্যান্য ব্যথা উপশম করতে আদা অনেক কার্যকরী
  • প্রতিদিন সকালে খালি পেটে আদা খেলে শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে

আদার ঔষধিগুণ

আপনি কি আদার সম্পূর্ণ ওষুধিগুণ সম্পর্কে জানেন। আদার ওষুধিগুণ জানলে আপনি অবাক হবেন। যেহেতু আদায একটি মসলা জাতীয় ভেষজ উদ্ভিদ সেহেতু আদা আমরা বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করতে পারি। নিয়মিত আদা খেলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের মরণব্যাধি বা জটিল রোগ থেকে শরীরকে মুক্ত রাখে।


শরীরকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখতে চাইলে প্রতিদিন এক টুকরা আদা খেতে হবে তাহলে শরীর সুস্থ সতেজ থাকবে। আদার মধ্যে এমন কিছু পুষ্টিগুণ রয়েছে যেগুলো শরীরে বার্ধক্যের ছাপ পড়তে দেয় না এবং ত্বক কুঁচকানো দূর করে।

আদার উপকারিতা সম্পর্কিত কয়েকটি প্রশ্ন এবং উত্তর

প্রশ্নঃ খালি পেটে আদা খেলে কি হয়?

উত্তরঃ সকালে খালি পেটে আদা খেলে শরীরের মধ্যে তৈরি হওয়া কিছু রোগ দূর হয় বা নিয়ন্ত্রণে থাকে। যেমন- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে, পেট ব্যথা দূর করে, হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, হার্ট সুস্থ রাখে, ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখে ইত্যাদি।

প্রশ্নঃ আদা কখন খাওয়া ভালো?

উত্তরঃ সকালে খালি পেটে আদা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন সকালে উঠে এক কাপ চা খাওয়ার চেয়ে এক কাপ আদার রস মিশানো পানি খেলে শরীরের সারাদিনের এনার্জি বজায় থাকে।

প্রশ্নঃ আদার রস আর মধু একসাথে মিশিয়ে খেলে কি হয়?

উত্তরঃ আদার রস এর সাথে মধু মিশিয়ে খেলে সর্দি-কাশি এবং ঠান্ডা জনিত সমস্যা দূর হয়। এছাড়াও এই দুইটি উপকারী খাদ্য মিলে বিভিন্ন ধরনের গোপন রোগের সমাধান হতে পারে।

আদার খাওয়ার নিয়ম

আদা খাওয়ার নির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই। আমরা সবাই জানি আদা মসলা জাতীয় খাদ্য সেজন্য এটি রান্নার কাজে বেশি ব্যবহৃত হয়। রান্নার স্বাদ বৃদ্ধি করার জন্য আদা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এছাড়াও আদায় রয়েছে সুন্দর একটি ঘ্রাণ যা খাবারের গন্ধ ছড়ায়। তবে আদা শরীরের কিছু সমস্যা দূর করার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে।


সেজন্য কিছুটা নিয়ম করে আদা খেতে হবে তাহলে সে সকল সমস্যা দ্রুত দূর হয়ে যাবে। সকালে খালি পেটে আদা খেলে অনেক বেশি উপকার পাওয়া যায় সেটি চিবিয়ে খেতে পারেন, রস করেও খাওয়া যায় এবং চায়ের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়। আবার সর্দি কাশি নিরাময় করার জন্য মধুর সাথে মিশিয়েও আদার রস খাওয়া যায়।

কারণ আধা একটি তীব্র ঝাল যুক্ত মসলা অনেকেই সহ্য করতে পারেনা সেজন্য মধু বা চিনি মেশালে সহজে খাওয়া যায়। নিয়ম করে আদা খেলে শরীরের বিভিন্ন পীড়াদায়ক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

আদা খাওয়ার অপকারিতা

আদা খেলে যেমন উপকার পাওয়া যায় তেমনি আদা খাওয়ার কিছুটা অপকারিতা রয়েছে। কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে আদা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে। যেমন যাদের অনিদ্রা সমস্যা আছে তারা চায়ের সাথে মিশিয়ে আদা খেলে এ সমস্যা আরও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। গর্ভাবস্থায় খালি আদা খাওয়া উচিত না এতে করে গর্ভের বাচ্চার সমস্যা তৈরি হতে পারে বা গর্ভের বাচ্চা প্রিম্যাচিউট হতে পারে।

অতিরিক্ত আদা খেলে উচ্চ রক্তচাপ নিম্ন রক্তচাপে পরিণত হতে পারে এবং পেটের হজমের সমস্যা তৈরি হতে পারে। এছাড়াও অতিরিক্ত আদা খেলে যে কোন মানুষের শরীরে সমস্যা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যেহেতু এটি একটি ভেষজ উদ্ভিদ এবং মসলা জাতীয় খাবার সেহেতু এটি নিয়ম মেনে খাওয়া সবার জন্যই জরুরী।

শেষ কথা

আদার যে সকল গুনাগুন রয়েছে সেগুলো শরীরের জন্য বিশেষভাবে প্রয়োজন। শরীরকে সুস্থ রাখতে চাইলে নিয়ম করে আধা খান তাহলে ধীরে ধীরে ভালো উপকার পেতে পারেন । প্রিয় পাঠক এই আর্টিকেল পড়ে আপনার যদি ভালো লাগে বা উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url