বজ্রপাত কি এবং বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় জেনে নিন

 প্রিয় পাঠক, আপনি কি বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তাহলে আর্টিকেলটি আপনার জন্য এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় এবং বজ্রপাতের দেশ কোনটি এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়

এটি পড়লে আরো জানতে পারবেন বজ্রপাত হলে কি করতে হবে বজ্রপাত কোথায় বেশি  হয় এবং বজ্রপাতের উপকারিতা কি ইত্যাদি।

ভূমিকা

প্রকৃতি সবসময় স্বাভাবিক নিয়মেই চলে আর এই প্রকৃতিরই একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হল বজ্রপাত যা আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে জানি। বজ্রপাত হচ্ছে প্রকৃতির একটি সাধারণ নিয়ম। প্রকৃতিতে সব কিছু ভারসাম্য রক্ষার জন্যই এরকম বজ্রপাত ঘটে থাকে। আমাদের এই পৃথিবীতে প্রতিবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগেই থাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে সবচেয়ে অন্যতম হলো বজ্রপাত। এই বজ্রপাতের কারণে প্রায় সর্বোচ্চ চব্বিশ হাজার মানুষ মারা যায়।


বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত ঘটে। বজ্রপাতের যদি বাৎসরিক হিসাব করা যায় তাহলে দেখা যাবে বাংলাদেশ প্রথম স্থানে। মেঘের ভিতরে ঠান্ডা ও শুষ্ক বাতাস এবং জলীয়বাষ্প যখন একত্রিত হয় ঠিক তখন বরফের কিছু কুচি ও নরম শিলায় পরিণত হয় এবং বাতাসের ধাক্কায় কুচি ও নরম শিলার ঘর্ষণ লাগে যার ফলে বরফের কুচিতে ধনাত্মক চার্জ এবং নরম শিলাই ঋণাত্মক চার্জের পরিণত হয়।

স্বাভাবিকভাবে মেঘের নিচের দিকে ঋণাত্মক চার্জ এবং মেঘের উপরের দিকে ধনাত্মক চার্জ তৈরি হতে থাকে।বিদ্যুতের এই চার্জ উচ্চ স্তর থেকে নিম্ন স্তরের দিকে চলতে চায় কিন্তু এর মাঝখানে থাকে বাতাস। সেই জন্য উচ্চ স্তর থেকে নিম্নস্তরে চলতে বাধা হয়। ফলে এই চার্জ বাড়তে থাকে বাড়তে বাড়তে ৩০ হাজার ভোল্টেজেরও বেশি হয় এবং বেশি হওয়ার পর বাতাসের মাধ্যমে এই চার্জ ছুটে যায়।

এই চার্জ ছুটে যাওয়াকে বজ্রপাত বলে। এ বজ্রপাতের তাপমাত্রা হলো ৩০ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা সূর্যের তাপমাত্রার তুলনায় বহুগুণ বেশি।

বজ্রপাত হলে কি করতে হবে

বজ্রপাত হলে কি কি করতে হবে তার কিছু নির্দেশনা আছে। বজ্রপাত হলে আমাদের প্রত্যেকেরই নির্দেশনা গুলো মেনে চলা উচিত কারণ বজ্রপাত একটি বড় ধরনের আতংকের বিষয়। বজ্রপাতের কারনে এ দেশে প্রতিবছর বহু সংখ্যক মানুষ মারা যায়। বজ্রপাতের হাত থেকে বাঁচার জন্য আমাদের প্রত্যেকেরই সচেতন থাকা জরুরী। বজ্রপাতের সময় যদি আমরা কোথাও যাই এবং সেখানে বজ্রপাত শুরু হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে আমরা উঁচু স্থান বা উঁচু গাছের নিচে দাঁড়াবো না কেননা এগুলো বজ্রপাতের জন্য খুবই বিপদজনক।

বজ্রপাতের সময় বাড়ির ছাদে যাওয়া বা জানালার গ্রিল স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এ সময় কোন ধরনের ধাতব পদার্থ স্পর্শ করা যাবে না। মাঠের মধ্যে বজ্রপাত শুরু হয়ে গেলে সেখানে নিচু হয়ে বসে দুই আঙ্গুল দিয়ে দুই কান বন্ধ করতে হবে। একসাথে কয়েকজন থাকলে পাশাপাশি না থাকলে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে। বজ্রপাতের সময় দালান বা সাউনির নিচে থাকতে হবে।বজ্রপাত সময় এ বিষয়গুলো সম্পর্কে আমাদের সচেতন থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 তাই আমরা বজ্রপাত হলে কি করতে হবে সেই বিষয়ে সব সময় সচেতন থাকবো এবং বজ্রপাতের বিপদ থেকে দূরে থাকবো। বজ্রপাত থেকে কিভাবে রক্ষা পাওয়া যায় সে উপায় সম্পর্কে আমরা নিচে আলোচনা করব

বজ্রপাত কোথায় বেশি হয়

বজ্রপাত প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে সবচেয়ে আতঙ্কের এবং বিপদজনক। বজ্রপাতের আতঙ্কিত হয় না এরকম লোকের সংখ্যা খুব কমই আছে।বজ্রপাত বাংলাদেশ প্রচুর পরিমাণে ঘটে সেজন্যে বজ্রপাতের দিক দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষস্থানে আছে। আবহাওয়াবিদদের তথ্য অনুসারে গত সাত বছরে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা ১ ১৫২ জন। বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলায় সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয়ে থাকে। এছাড়া সিলেট বিভাগ ও হাওর অঞ্চলেও বজ্রপাতের পরিমাণ অনেক বেশি।


বর্তমানে দেশের মধ্য আঞ্চলগুলোতেও বজ্রপাত প্রায়ই ঘটে থাকে। বাংলাদেশ বজ্রপাতের সময় হল মার্চ মাস থেকে মে মাস পর্যন্ত। বাংলাদেশ ছাড়া আরও একটি জায়গায় সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয় সেটি হল ভেনিজুয়েলা মারা কাইবো লেকে। এই জায়গায় জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বেশি বজ্রপাত হয়ে থাকে। এছাড়া ভারতের কিছু জায়গা যেমন মেঘালয় খাসি পার এলাকায় প্রচুর বজ্রপাত হয়ে থাকে। এই এলাকা গুলোতে বজ্রপাত হতে  রক্ষা পাওয়ার উপায় সম্পর্কে বেশি বেশি ধারণা থাকতে হবে।

বজ্রপাতের দেশ কোনটি

আমরা কি জানি বজ্রপাতের দেশ কোনটি? তাহলে জানা যাক -ভুটানে সারা বছর বজ্রপাত লেগেই থাকে সেজন্য ভুটানকে বজ্রপাতের দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।বিশ্বের অন্যান্য দেশে তুলনায় ভুটানে বজ্রপাত অনেক বেশি হয়। আবহাওয়া বিদরা বজ্রপাতের ধার জরিপ করে দেখেছেন যে ভুটানে সারা বছরই বজ্রপাত হয়ে থাকে। ভৌগলিক কারণের ভিত্তিতে এ দেশ থেকে বলা হয় বর্জ্য ড্রাগন।

এই বজ্রপাতের কারণে প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক মারা যায়। যে দেশে যত বজ্রপাত বেশি সেই দেশ তত আতঙ্কে কেননা বজ্রপাত একটি আতঙ্কিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ।

বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়

প্রাকৃতিক দুর্যোগ কখনো বলে আসে না। বাংলাদেশের প্রতিবছর কোন না কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগেই থাকে। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ গুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল বজ্রপাত। বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমাদের প্রত্যেকেরই সচেতন থাকা উচিত। নিজের সচেতন থেকে অন্যদের মাঝে সচেতনতা গড়ে তোলা ও আমাদের কর্তব্য  আসুন বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাওয়ার কয়েকটি উপাদান সম্পর্কে জেনে নেওয়া যায়-
  • বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দালান বাড়ির থাক বা উঁচু গাছের নিচে এবং ওষুধ খান ত্যাগ করতে হবে।
  • ফাকা জায়গায় থাকা অবস্থায় বজ্রপাত শুরু হলে দুই কানে আঙ্গুল দিয়ে নিচু হয়ে বসতে হবে
  • বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দালানের বা কংক্রিটের ছাউনির নিচে যেতে হবে এমনকি জানালার পাশেও থাকা যাবে না
  • কোন ধাতব বস্তু হাত দিয়ে স্পর্শ করা যাবে না এবং বৈদ্যুতিক সংযোগ সেসময় বন্ধ রাখতে হবে।
  • বজ্রপাতের সময় পানির সংস্পর্শ এবং পানির ব্যবহার থেকে দূরে থাকতে হবে
  • বজ্রপাতের সময় জরুরি প্রয়োজনে বাইরে যাওয়া হলে সে সময় অবশ্যই রাবারের জুতো পড়তে হবে
  • একত্রিত হয়ে অনেক জন থাকলে প্রত্যেকেরই ৫০ থেকে ১০০ ফিট দূরে চলে যেতে হবে
  • বজ্রপাতের সময় গাড়ির মধ্যে থাকলে দুই কানে আঙ্গুল দিয়ে মাথা নিচু করে গাড়ির মাঝখানে বসে থাকতে হবে গ্লাসে বা গাড়ির কোন ধাত ব বস্তুতে স্পর্শ করা যাবে না।
  • বৈদ্যুতিক ফুল বা খুঁটির নিচে দাঁড়ানো যাবে না
  • আকাশে কালো মেঘ দেখে নিরাপদ স্থানে অবস্থান করার চেষ্টা করুন পানি বা জলাশয় থেকে দূরে থাকুন
  • বিভিন্ন ধরনের টাওয়ার আছে বজ্রপাতের সময় গুলো থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন
  • বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় সম্পর্কে নিজে সচেতন থাকুন এবং অন্যদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করুন
  • শিশুদের বজ্রপাতের সময় ঘরের বাইরে যেতে বারণ করুন

বজ্রপাতের উপকারিতা কি

বজ্রপাত যে শুধুমাত্র আতঙ্কের আসলে তা ঠিক নয়। বজ্রপাতের অজানা কিছু উপকারিতা ও রয়েছে যা আমাদের জানা প্রত্যেকেরই দরকার।বজ্রপাতের সময় নাইট্রোজেন অক্সিজেনের সাথে মিশে যেয়ে উৎপন্ন হওয়ায় নাইট্রোজেন অক্সাইড। যা জলের সংস্পর্শে এসে তৈরি হয় নাইটি এসিড। এই অতিলঘব সম্পন্ন নৈতিক অ্যাসিড বৃষ্টির পানিতে মাটির সাথে।

একেবারে মাটিতে থাকা বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থ এসিডে পরিণত হয় ধাতব অক্সাইড ও এসিডের মধ্যে বিক্রিয়াজ ফলে উৎপন্ন হয় নাইট্রেট লবণ যা বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ এর জন্য খুবই পুষ্টিকর। তাই আমরা নিঃসন্দেহে বলতে পারি যে বজ্রপাত শুধু আদমজের বিষয় নয় এটি উদ্ভিদের জন্য অনেক উপকারী। বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় সম্পর্কে যেমন জানতে হবে এমনি এর উপকারিতা কেমন সেটা যেন জরুরি।

শেষ কথা

এ আর্টিকেলটি পড়ে আপনি বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেয়েছেন প্রিয় পাঠক এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি যদি উপকৃত হন এবং ভালো লাগে তাহলে আপনি আপনার বন্ধুদের এবং কাছের মানুষদের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url