বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের সেবা সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

 প্রিয় পাঠক, আপনি কি সোনালী ব্যাংকের সেবা সমূহ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকের সেবা সমূহ এবং সোনালী ব্যাংক থেকে লোন সমূহ সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেল মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

সোনালী ব্যাংকের সেবা সমূহ
এটি পড়লে আরো জানতে পারবেন সোনালী ব্যাংক অনলাইন সেবা সমূহ, সোনালী ব্যাংক অনলাইন একাউন্ট চেক করার উপায় এবং সোনালী ব্যাংকের লোন নেওয়ার নিয়ম ইত্যাদি।

ভূমিকা

সোনালী ব্যাংক বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রাষ্ট্রীয় মালিকানধীন একটি বণিজ্যিক ব্যাংক। বাংলাদেশর রাষ্ট্রায়ত্ব ৬টি ব্যাংকগুলোর মধ্যে এটি সর্ববৃহৎ ব্যাংক। সোনালী ব্যাংক ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় যা ২০০৭ সালের ৩জুন সোনলী ব্যাংক লিমিটেড নামে নিবন্ধিত হয়। পরবর্তীতে সোনালী ব্যাংকের নাম পুনরায় পরিবর্তীত হয়ে ২৮.০২.২০২৩ তারিখ হতে সোনালী ব্যাংক পিএলসি নামে কার্যক্রম শুরু করে। ঢাকার মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় সোনালী ব্যাংক-এর প্রধান কার্যালয় অবস্থিত।


দেশজুড়ে ব্যাংকটির সর্বমোট শাখার সংখ্যা ১২২৮টি তারমধ্যে পল্লী শাখা ৭২৭টি এবং নগর শাখা ৫০১টি। এছাড়াও প্রধান কার্যালয়ে ১টি ও দেশের বাইরে ২টি (কলকাতা ও শিলিগুড়ি) শাখা রয়েছে। ১৮১১৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে ব্যাংকটি পরিচালিত হচ্ছে। সোলালী ব্যাংকে গ্রাহকগণকে সকল প্রকার ব্যাংকিং সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে।

সোনালী ব্যাংকের সেবা সমূহ

সোনালী ব্যাংক হচ্ছে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক। সোনালী ব্যাংক গ্রাহকদের বিভিন্ন ধরনের ব্যাংকিং সেবা দিয়ে থাকে। যেকোনো ধরনের ব্যাংকিং সেবা পাওয়ার জন্য অবশ্যই সোনালী ব্যাংকে যাওয়া উচিত। সোনালী ব্যাংকের সেবা গুলো কি কি সেগুলো জানা যাক-
  • গ্রাহকদের সাথে নগদ টাকা লেনদেন করা (টাকা প্রদান ও টাকা জমা নেয়া)
  • নতুন হিসাব খোলা
  • নিরাপত্তার সাথে যাবতীয় ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করা
  • সকল প্রকার লোন/ঋণ প্রদান
  • বিভিন্ন ধরণের আমানত সংগ্রহ করা (চলতি হিসাব, সঞ্চয়ী হিসাব, বিভিন্ন প্রকার ডিপিএস ইত্যাদি)
  • চেক প্রদান
  • চেক কালেকশন করা
  • পাসপোর্ট এন্ডোর্স করা
  • প্রদানযোগ্য ব্যাংকিং সংক্রান্ত তথ্য প্রদান করা ইত্যাদি।

সোনালী ব্যাংক থেকে লোন সমূহ

সোনালী ব্যাংকের সেবা গুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান সেবা হলো গ্রাহকদের লোন বা ঋণ প্রদান করা। ঋণ প্রদান করে দেশের মানুষদের আর্থিক সহায়তা করে ব্যাংকের মুনাফা অর্জন করাই হলো ব্যাংকের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে। সোনালী ব্যাংক থেকে লোন সমূহ বিভিন্ন প্রকারের। এ ব্যাংক থেকে যে লোন প্রদান করা হয় সেগুলো হলো-

কৃষি ঋণঃ দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে কৃষির ভূমিকা অপরিসীম। তাই কৃষি কাজ ও কৃষি ভিত্তিক শিল্প কারখানায় সোনালী ব্যাংক কর্তক কৃষি ঋণ প্রদান করা হয়।

সিসি ঋণঃ দেশের সকল ছোট বড় শিল্প কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মৎস্য চাষ, গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্প, ডেইরী ফার্মসহ আরো অনেক প্রকল্পে সোনালী ব্যাংক সিসি ঋণ প্রদান করে থাকে। সিসি ঋণই ব্যাংকের প্রাণ। মূলতঃ এ ঋণের মুনাফা দিয়েই ব্যাংকের সকল কার্যক্রম চালিত হয়।

এসএমই ঋণঃ ক্ষুদ্র কুটির শিল্পে সোনালী ব্যাংক ঋণ প্রদান করে থাকে। ছোট উদ্যোক্তাগণ তাদের বিভিন্ন ছোট ছোট কারখানায় উন্নয়নমূলক কাজ করে থাকে। সাধারণত তারা ব্যাংক থেকে স্বল্প পরিমাণে ঋণ নিয়ে তাদের কারখানার কর্মীদের দ্বারা কাজ করিয়ে লাভবান হয়।

মুক্তিযোদ্ধা ঋণঃ মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাঁরা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছে বলেই আমরা আজ স্বাধীন বাংলাদেশ বসবাস করছি। তাঁদেরকে আমাদের যথাযোগ্য সম্মান করা উচিত। তাই সরকার তাদের বিভিন্ন ভাতার পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের বিনা সুদে ঋণের ব্যবস্থা করেছেন। তাই সরকারী সিদ্ধান্ত অনুসারে অন্যান্য ব্যাংকের মত সোনালী ব্যাংকেও মুক্তিযোদ্ধাদের বিনা সুদে ঋণ প্রদান করা হয়।

প্রবাসী ঋণঃ সোনালী ব্যাংক প্রবাসীদের জন্য প্রবাসী লোন প্রদান করে থাকে। অনেক সময় দেখা যায় বিদেশে যাওয়ার জন্য সম্ভাব্য প্রবাসীরা তাদের জমি বন্ধক রেখে বা বিক্রয় করে বিদেশ যায়। সাধারণত তাদের জন্য সোনালী ব্যাংকের এ প্রবাসী লোন চালু করেছে। অনেকে দালাল ধরে বিদেশে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয় এবং সর্বশান্ত হয়ে দেশে ফিরে আসে। সোনালী ব্যাংক তাদের স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে ঋণ দিয়ে থাকে।

স্টুডেন্ট লোনঃ শিক্ষা জাতীর মেরুদন্ড। আর এ শিক্ষার বিস্তাল লাভ করতে সোনালী ব্যাংক অসচ্ছল মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের ঋণ প্রদান করে থাকে। এ ঋণ নিয়ে গরীব ছাত্র-ছাত্রী নিশ্চিন্তে তাদের লেখাপড়া করতে পারছে।

পারসোনাল লোনঃ ব্যক্তিগতসহ সংসারের বিভিন্ন প্রয়োজনে টাকার দরকার হয়। যথাযথ শর্তানুসারে সোনালী ব্যাংক তাদের পাসোনাল লোন দিয়ে থাকে।

চাকুরীজীবি লোনঃ সরকারী বা বেসরকারী চাকুরী করে এমন যে কেউ তাদের প্রয়োজনে সোনালী ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারে।সোনালী ব্যাংকের  অনেক ভালো আর্থিক সেবা পাওয়া যায়।

স্যালারী লোনঃ স্যালারী লোন নামে একটি লোন সোনালী ব্যাংকে চালু আছে। যেসকল চাকুরীজীবির বেতন সোনালী ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে সাধারণত তারাই এ লোন নিতে পারে।

স্টাফ লোনঃ ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে অনেকেই অনেক কিছু করছে আর ব্যাংকে চাকুরী করে লোন নিবেনা তাই হয় নাকি। এজন্য সকল ব্যাংকের ন্যায় সোনালী ব্যাংকেও স্টাফদের লোন দিয়ে থাকে।

সোনালী ব্যাংক অনলাইন একাউন্ট চেক করার উপায়

বর্তমানের ডিজিটাল যুগে ব্যাংক একাউন্ট চেক করার জন্য সরাসরি আর ব্যাংকে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ইচ্ছা করলে আপনি ঘরে বসে অনলাইনে অ্যাকাউন্ট চেক করতে পারবেন। সবগুলো ব্যাংক এখন অনলাইন ভিত্তিক হওয়ায় ঘরে বসে একাউন্ট চেক করা খুবই সহজ ব্যাপার। সোনালী ব্যাংক ও এখন অনলাইন ভিত্তিক হয়ে যাওয়ায় এ ব্যাংকের একাউন্টে ঘরে বসে চেক করা যায়।


সোনালী ব্যাংকের যে সকল সেবা রয়েছে  তার মধ্যে সোনালী ব্যাংক অনলাইন একাউন্ট চেক করার উপায় এটিও অন্যতম। সোনালী ব্যাংক অনলাইন একাউন্ট চেক করার দুটি উপায় রয়েছে। যেমন-

সোনালী ব্যাংকের অ্যাপস ব্যবহার করেঃ সোনালী ব্যাংকের একটি নিজস্ব অ্যাপস আছে যার নাম সোনালী ই ওয়ালেট। এই এ্যাপস ব্যবহার করে খুব সহজেই এখন চেক করা যায়। প্রথমে আপনার অ্যাকাউন্টটি এই অ্যাপস এর সাথে কানেক্ট করতে হবে তারপর-লেনদেন অপশনে গিয়ে -ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স অপশন এ ক্লিক করলেই আপনারে ব্যালেন্স সম্পর্কে জানতে পারবেন।

এস এম এস এর মাধ্যমে ব্যালেন্স চেকঃ সোনালী ব্যাংকের একাউন্ট এসএমএসের মাধ্যমে চেক করা যায় সেজন্য প্রথমে আপনার মোবাইলের মেসেজ অপশনে যেতে হবে। তারপর টাইপ করতে হবে
SLB<space>BAL লিখার পর ২৬৯৬৯ নাম্বারে সেন্ড করতে হবে।

সোনালী ব্যাংক অনলাইন সেবা সমূহ

আমরা জানি সোনালী ব্যাংক দেশের একটি বৃহত্তম ব্যাংক। বৃহত্তম ব্যাংক হওয়ায় এই ব্যাংকের কার্যক্রম ও অনেক বর্ধিত বা প্রসারিত।সোনালী ব্যাংকের সেবা সমূহ বর্তমানে অনলাইন ভিত্তিক। সোনালী ব্যাংক শুধু সরাসরি সেবা দেয় না এটি অনলাইনের মাধ্যমেও বিভিন্ন ধরনের সেবা দিয়ে থাকে। সোনালী ব্যাংকের অনলাইন সেবা সমূহ অতীতের তুলনায় বর্তমানে বৃদ্ধি পেয়েছে ভবিষ্যতে ও দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাবে।

ব্যাংকিং কার্যক্রম অনলাইন ভিত্তিক হওয়ার কারণে মানুষ এখন ঘরে বসেই খুব সহজে লেনদেন করতে পারছে।লেনদেন ছাড়াও আরো অনেক সেবা অনলাইনের মাধ্যমে দিয়ে থাকে। সোনালী ব্যাংকের অনলাইন সেবা সমূহ হলো-
  • সোনালী ই-সেবা ব্যবহার করে ঘরে বসে সহজেই একাউন্ট খোলা
  • একাউন্ট ব্যালেন্স চেক করা
  • এক একাউন্ট থেকে অন্য একাউন্টে ব্যালেন্স ট্রান্সফার করা
  • BEFTN এর মাধ্যমে সোনালী ই-একাউন্ট থেকে দেশের যেকোন ব্যাংকে খরচ ছাড়াই টাকা পাঠানো যায়
  • RTGS এর মাধ্যমে স্বল্প খরচে দেশের যেকোন ব্যাংকে মুহুর্তেই টাকা পাঠানো যায়
  • সকল প্রকার মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (MFS) এর মাধ্যমে (বিকাশ, রকেট, নগদ ইত্যাদি) টাকা ট্রান্সফার করা যায়
  • খরচ ছাড়াই সকল মোবাইলে রিচর্জ করা যায়

সোনালী ব্যাংকের লোন নেওয়ার নিয়ম

জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় আমাদের আর্থিক সমস্যা হয়ে থাকে। এই আর্থিক সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমরা লোন নিয়ে থাকি এবং বিভিন্ন ব্যাংক আমাদের এই আর্থিক সমস্যা দূর করার জন্য লোন দিয়ে সহায়তা করে। ব্যাংক লোন নেওয়ার জন্য কিছু নিয়ম থাকে এগুলো নিয়ম মেনে আমাদের লোন নিতে হয়। সোনালী ব্যাংকে লোন নেওয়ার নিয়ম গুলো জেনে নিই-
  • ঋণগ্রহীতাকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে
  • লোন নেওয়ার জন্য সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন এবং বয়সআঠারো বছরের উর্ধেও হতে হবে
  • লোন নেওয়ার জন্য লোনির জাতীয় পরিচয় পত্র থাকতে হবে
  • যে ধরনের লোন নিতে চাই লোনের নিয়ম অনুযায়ী সমস্ত ডকুমেন্ট ব্যাংকে পেশ করতে হবে
  • লোন নেওয়ার যোগ্যতা আছে কিনা এ বিষয়ে ব্যাংক ততটুকু করবে এবং লোন নেওয়ার যোগ্যতা না থাকলে লোন পাওয়া যাবে না
  • এছাড়া যতটুক লোন নেওয়ার যোগ্যতা আছে ঠিক সে পরিমাণে লোন পাওয়া যাবে

পরিশেষে

উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সোনালী ব্যাংকের সেবা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেয়েছেন। প্রিয় পাঠক এ আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হন এবং আপনার যদি ভালো লাগে তাহলে দয়া করে আপনি আপনার কাছের মানুষ ও বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url