বাংলাদেশের বিখ্যাত কয়েকটি মসজিদ সম্পর্কে জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আপনি কি বাংলাদেশের বিখ্যাত কয়েকটি মসজিদ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিখ্যাত কয়েকটি মসজিদ ও বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মসজিদ সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে আর্টিকেলটি আপনাকে মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।

বাংলাদেশের বিখ্যাত কয়েকটি মসজিদ
এই আর্টিকেলটি পড়লে আপনি আরও জানতে পারবেন বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরাতন মসজিদ ও সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, বাংলাদেশর বড় মসজিদ, সুন্দর মসজিদ ইত্যাদি।

ভূমিকা

মসজিদ হল আল্লাহর ঘর এবং তার কাছে সবচেয়ে প্রিয় স্থান যেখানে মুসলমানগণ একত্রে সালাত আদায় করে। মসজিদ বলতে আমরা ইসলামের সাংস্কৃত কেন্দ্রকে বুঝি। মসজিদের প্রতি সম্মান এবং এর গুরুত্ব বুঝানোর জন্য মসজিদকে আল্লাহর ঘর বলা হয়ে থাকে। আল্লাহর ইবাদত করা, জিকির করা, কোরআন তেলাওয়াত করা, কোরআন শিক্ষাসহ ইসলাম সম্পর্কে যাবতীয় আলোচনার মাধ্যমে মুসল্লিদের সঠিক দিক নির্দেশনা প্রদান করা হয় এই মসজিদে।


মসজিদ সম্পর্কে একটি হাদিস হল আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ বলেছেন আল্লাহর কোন ঘরে সমবেত হয়ে কোরআন তেলাওয়াত করে এবং পরস্পরে তা নিয়ে আলোচনা করে তখন তাদের উপর প্রশান্তি বর্ষিত হয়। ফেরেশতাগণ তাদেরকে রহমতের চাদরে ঢেকে দেয়। তাদেরকে ফেরেশতা দ্বারা ঘিরে রাখে এবং আল্লাহ তার নিকটস্থ ফেরেশতাদের কাছে তাদের প্রশংসা করে। (সহীহ মুসলিম হাদিস ১৪৫৫)।

অতএব মসজিদ যেহেতু আল্লাহর ঘর সেহেতু আল্লার ঘর কে হেফাজত করা ও ঘরগুলোর সম্মান রক্ষা করা আমাদের জন্য অপরিহার্য ও কর্তব্য। বাংলাদেশের বিখ্যাত যেগুলো মসজিদ আছে সেই মসজিদগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

বাংলাদেশের বিখ্যাত কয়েকটি মসজিদ

মসজিদ এমন একটি ঘর যেখানে গেলে মন শীতল হয়ে যায়। যে মুসলিম মসজিদের সঙ্গে সম্পর্ক করে তাকে প্রকৃত ঈমানদার বলা হয়। আমরা সবাই জানি মসজিদ আল্লাহর ঘর। যারা আল্লাহর এই ঘরের হেফাজত করে এবং সুরক্ষা দেন তারা আল্লাহর খুবই প্রিয় বান্দা। বাংলাদেশে বর্তমানে অনেক মসজিদ রয়েছে। সেগুলো হলো-

১। বায়তুল মোকাররমঃ বাংলাদেশের বিখ্যাত মসজিদের মধ্যে বায়তুল মোকাররম জামে মসজিদ অন্যতম একটি। এটি রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্র পল্টনে অবস্থিত। এটির নির্মাণকাজ ১৯৬৮ সালে সম্পূর্ণ হয়। এটিকে বাংলাদেশ জাতীয় মসজিদও বলা হয়। ৮তলা বিশিষ্ট এই মসজিদের নীচতলায় রয়েছে বিপণী বিতান ও বিশাল মার্কেট। ২য়তলা হতে ৬ষ্ঠতলা পর্যন্ত প্রতিটি তলায় সালাত আদায় করা হয়। এই মসজিদে একসাথে ৪০ হাজার মুসল্লি সালাত আদায় করতে পারেন।

মসজিদের ভেতরে মহিলাদের পাঠাগার এবং আলাদা ওজু ও নামাজের ব্যবস্থা আছে। বাংলাদেশের ১০ টাকার নোটে বায়তুল মোকাররম মসজিদের ছবি দেয়া রয়েছে। জুম্মার দিনে দূর-দূরান্ত থেকে মুসল্লিগণ আসেন দেশের এই জাতীয় মসজিদে সালাত আদায় করতে। প্রায় প্রতিদিনই দেশী-বিদেশী পর্যটক আসেন এই বিখ্যাত মসজিদ পরিদর্শন করতে।

২। ২০১ গম্বুজ মসজিদঃ বাংলাদেশের সৌন্দর্য ও সেরা মসজিদের তালিকায় ২০১ গম্বুজ মসজিদ দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। এই মসজিদটি টাঙ্গাইলে গোপালপুর উপজেলার দক্ষিণ পাথালিয়া নামক একটি গ্রামে অবস্থিত। এই মসজিদের দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থের দিকে ১৪৪ ফুট এই মসজিদে প্রায় ১৫ হাজার মুসল্লী সালাত আদায় করতে পারবেন। এটি বিশ্বের সর্বোচ্চ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ। এ মসজিদের ছাদে ৮১ ফুট উচ্চতার একটি বিশাল গম্বুজসহ ২০১টি গম্বুজ রয়েছে। মসজিদটির কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি।

৩। সাউথ টাউন জামে মসজিদঃ সাউথ টাউন জামে মসজিদ সেরা মসজিদের তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে। এটি ঢাকার পাশে কেরানীগঞ্জের বাঘৈবরের রাজেন্দ্রপুর নামক স্থানে (কেরানীগঞ্জ কারাগারের অদূরে) অবস্থিত। এটি সৌন্দর্য দিক দিয়ে প্রথম তালিকায় রয়েছে। এই মসজিদটি অনেক বৈচিত্র্যময় ও দৃষ্টি নান্দনিক। এই মসজিদে সালাত আদায় করার জন্য এবং দেখার জন্য অনেক দর্শনার্থী আসেন।

৪। ষাট গম্বুজ মসজিদঃ ষাট গম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত। এটি একটি প্রাচীনতম মসজিদ। এই মসজিদটি ১৫০০ শতাব্দীতে খান জাহান আলী নির্মাণ করেছিলেন। মসজিদটির ষাট গম্বুজ হলেও এর সংখ্যা ৭৭টি। মিনারের চারটি গম্বুজসহ এর সংখ্যা মোট ৮১টি। মসজিদসহ এ এলাকায় বিভিন্ন স্থাপনা, সমাধি, পুকুর ও ঢিবি রয়েছে। মসজিদ এলাকায় একটি যাদুঘর রয়েছে। বাংলাদেশের ২০ টাকার নোটে ষাট গম্বুজ মসজিদের ছবি দেয়া আছে।

৫। বেলাব বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদঃ এটি নরসিংদী জেলার বেলাবো উপজেলায় অবস্থিত। জমিদাররা প্রায় ৩০০ বছর পূর্বে এই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। এই মসজিদটি দেখতে অনেক বড়। এ মসজিদে সাধারণত ৮০০০ জন একসাথে সালাত আদায় করতে পারেন যদিও রমজান মাসে তা বেড়ে ২০ থেকে ২২ হাজারে দাঁড়ায়।

৬। বাঘা মসজিদঃ বাঘা মসজিদ রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলায় অবস্থিত। এটি রাজশাহী শহর থেকে প্রায় ৩৭ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। বাঘা মসজিদ প্রাচীনতম মসজিদের মধ্যে অন্যতম। এটি ২৫৬ বিঘা জায়গা জুড়ে অবস্থিত। এই মসজিদটি দেখার জন্য দূর দূরান্ত থেকে পর্যটক আসে।

৭। ছোট সোনা মসজিদঃ বাংলাদেশের আরেকটি প্রাচীন মসজিদ হল ছোট সোনা মসজিদ উপজেলায় অবস্থিত । সোনা মসজিদের বাইরে সোনার রংয়ের আবরণ ছিল। সেজন্য মসজিদে সূর্যের আলো পড়লে সোনার মত ঝলমল করে উঠতে সেজন্য এই মসজিদের নাম রেখেছিল সোনা মসজিদ। সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন সাহেব-এর আমলে এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়।

সোনা মসজিদের সীমানার প্রাচীরের ভিতরেই দুই বীরের কবর রয়েছে সে দুজন হল ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ৭ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক মেজর নাজমুল হক।

৮। কুসুম্বা শাহী মসজিদঃ কুসুম্বা শাহী মসজিদ বাংলাদেশের একটি বিখ্যাত মসজিদ। বরেন্দ্র জনপদের নওগাঁ জেলার বৃহস্তম উপজেলা হলো মান্দা। এই উপজেলায় সুলতানী আমলের একটি ঐতিহাসিক মসজিদের নাম কুসুম্বা মসজিদ। রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের পার্শ্বে মান্দা উপজেলা সদর প্রসাদপুরের উত্তর পাশ দিয়ে প্রবাহিত আত্রাই নদীর উপর নির্মিত ফেরীঘাট নামক স্থান হতে প্রায় দুই কিলোমিটার দক্ষিণে মান্দা উপজেলার ৮ নং কুশুম্বা ইউনিয়নের কুশুম্বা গ্রামে এই মসজিদ অবস্থিত।

গ্রামের নামানুসারে এই মসজিদের নামকরণ করা হয়েছে। মসজিদটির সামনে ২৫.৮৩ একর আয়তনের একটি বিশাল পুকুর বা দিঘি রয়েছে। ৬টি গম্বুজ সম্বলিত এই মসজিদের উত্তর-পশ্চিম কোনায় স্তম্ভের উপর একটি উচু আসন রয়েছে যেখানে বসে কাজী/বিচারক যাবতীয় বিচার কার্যসম্পাদন করতেন বলে অনুমান করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের ৫ টাকার নোটে এই মসজিদের ছবি দেওয়া রয়েছে।

৯। তারা মসজিদঃ পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় আবুল খইরাত সড়কে বিখ্যাত তারা মসজিদ অবস্থিত। এটি ১৮ শতকের প্রথম দিকে নির্মিত হয়। ৩৩ ফুট দৈর্ঘ্য ১২ ফুট প্রস্থের এ মসজিদকে কেউ কেউ সিতারা মসজিদন নামেও বলে থাকেন আবার কেউ কেউ বলে গোলাম পীরের মসজিদ। মসজিদের উপরে গোলাকার ৩টি গম্বুজে খোদাই করা অসংখ্য নীল রঙের তারার মোটিফ রয়েছে।

মূলত এই তারার কারণেই এ মসজিদ তারা মসজিদ (Star Mosque) নামে পরিচিত। বাংলাদেশের ১০০ টাকার নোটে এই তারা মসজিদের ছবি দেয়া আছে। এই মসজিদগুলো কিন্তু ঘুমাচ্ছেন দেখার জন্য দূর দূরান্ত থেকে পর্যটক আসে।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মসজিদ

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মসজিদ হল ২০১ গম্বুজ মসজিদ। এই মসজিদটি টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলার নগদা শিমলা ইউনিয়নের দক্ষিণে পাথালিয়া গ্রামে অবস্থিত। ২০১ গম্বুজ মসজিদ হল পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ। প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয় করে এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। ৪৫১ ফুট উচ্চতার একটি মিনার রয়েছে, যা প্রায় ৫৭ তলার সমান। এটি দেখতে দূর দূরান্ত থেকে মানুষ এসে ভিড় করে। এই মসজিদটি দেখতে অনেক সুন্দর।

বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর মসজিদ

বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর মসজিদ হল সাউথ টাউন মসজিদ। বাংলাদেশের সুন্দর মসজিদ গুলোর  মধ্যে এটি সবচেয়ে সুন্দর। এ মসজিদটি ঢাকার কেরানীগঞ্জে অবস্থিত। বাংলাদেশের সবচেয়ে সৌন্দর্যের দিক দিয়ে এই মসজিদটি প্রথম, এবং দ্বিতীয়টি হল ২০১ গম্বুজ মসজিদ যা টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলার নগদা ইউনিয়নের দক্ষিণে গ্রামে অবস্থিত। 


২০১ গম্বুজ মসজিদ হল বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ। ২০১ গম্বুজ মসজিদে ৯ টি মিনার রয়েছে। তন্মধ্যে মধ্যে সবচেয়ে উচু মিনার ৫৭ তালার সমান। এই মিনার প্রায় ৪৫১ ফুট উঁচু ।

বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরাতন মসজিদ

বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রথম ও পুরাতন মসজিদ হল হারানো মসজিদ। যেটা রংপুর বিভাগের লালমনিহাট জেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নে অবস্থিত। ৬৯ হিজরী সনে এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। এই মসজিদটি স্থানীয়ভাবে হারানো মসজিদ নামে পরিচিত। এই মসজিদটি উঁচু মাটির টিলা ও জঙ্গল দ্বারা ঘেরা ছিল। স্থানীয় লোকজন জঙ্গল পরিষ্কার করতে গিয়ে এই আশ্চর্যজনকভাবে সন্ধান পান এই মসজিদের। বাংলাদেশের যে মসজিদগুলো আছে তার মধ্যে এটি সবচেয়ে পুরাতন।

বাংলাদেশের সবচেয়ে ছোট মসজিদ

বাংলাদেশের সবচেয়ে ছোট মসজিদ হল কাদের বক্স মন্ডল মসজিদ। এই মসজিদটি গাইবান্ধা জেলার পলাশ বাড়িতে অবস্থিত। ছয় ফুট দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ জমির উপর দাঁড়িয়ে আছে এই মসজিদটি। এই মসজিদ যেন এক প্রাচীনকালের নিদর্শন। ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদের সম্পর্কে অনেকের কৌতূহলে শেষ নেই।এই এলাকার অনেক মানুষ জানে না যে এটা একটি মসজিদ। বর্তমানে এই মসজিদটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এই মসজিদটিকে এলাকাবাসী ঐতিহ্যের এক নিদর্শন হিসাবে দেখতে চায়।বাংলাদেশের মধ্যে এটি সবচেয়ে ছোট।

মন্তব্য

এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি নিশ্চই বাংলাদেশের মধ্যে বিখ্যাত কয়েকটি মসজিদ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেয়েছেন। প্রিয় পাঠক এই আর্টিকেল যদি আপনার ভালো লাগে এবং এটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার পরিবার ও বন্ধুদের সাথে এটি শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url