সিলেট জেলার ৭টি দর্শনীয় স্থান এবং ঐতিহাসিক স্থানগুলো জেনে নিন

 প্রিয় পাঠক, আপনি কি সিলেট জেলার দর্শনীয় স্থানগুলো সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? আসুন আজকে আমরা সিলেট জেলার দর্শনীয় স্থানগুলো এবং সিলেট জেলার ঐতিহাসিক স্থান সম্পর্কে বিস্তারিত সঠিক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ বিষয়ে জানতে হলে নিচের আর্টিকেলগুলি মনযোগ সহকারে পড়ুন।

সিলেট জেলার দর্শনীয় স্থানগুলো

এই আর্টিকেল পড়লে আপনি আরও জানতে পারবেন- সিলেট বিভাগের দর্শনীয় স্থান, সিলেটের সবচেয়ে সুন্দর জায়গা, সিলেটের ঐতিহাসিক স্থান, শীতকালে সিলেটের দর্শনীয় স্থান ইত্যাদি।

ভূমিকা

বাংলাদেশের মধ্যে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বিশাল সমাহার হলো সিলেট জেলা। সিলেট জেলাকে সাজাতে প্রকৃতিও কোনো রকম কৃপণতা করেনি। পাহাড় নদী ঝর্ণা চা বাগান ইত্যাদি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বৈশিষ্ট্য সবগুলো সিলেট জেলায় আছে। সিলেট জেলাকে আমরা দুটি পাতা একটি কুড়ির দেশ বলে থাকি। ভ্রমণপিপাসু মানুষ তারা সব সময় খুঁজে বেড়ায় এই সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে অবশ্যই সিলেট ঘুরে আসা উচিত। সিলেটে দেখার মত অনেক ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এই স্থানগুলো দেখতে যেমন অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকারী তেমনি একই সাথে এটি বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটক স্থল।


সিলেট জেলার কয়েকটি দর্শনীয় স্থানগুলো দেখার জন্য প্রতিনিয়ত দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটক ঘুরতে আসে। বাংলাদেশের সুন্দর জেলাগুলোর মধ্যে সিলেট জেলা সবচেয়ে অন্যতম। সিলেট জেলাতে বিভিন্ন রকম আদিবাসী বাস করে এবং তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি ও বিভিন্ন ধরনের।

সিলেট জেলার দর্শনীয় স্থানগুলো

প্রকৃতির এক অপরূপ সৌন্দর্যে ভরা এই সিলেট জেলা। সিলেট বিভাগের দর্শনীয় স্থানগুলো যেন প্রকৃতির নিজ হাতে তৈরি করেছেন। প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্যে ভরা সিলেট জেলা বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম পর্যটক নগরী হিসেবে পরিচিত। সিলেট বিভাগের দর্শনীয় স্থানসমূহ দেশি-বিদেশি পর্যটকের কাছে খুব জনপ্রিয় একটি জায়গা। পর্যটকের মন জুড়িয়ে যাওয়ার মত জায়গা হল সিলেট। সিলেট জেলার দর্শনীয় স্থানগুলো হল-

জাফলংঃ জাফলং আমাদের সবারই পরিচিত। সিলেটের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য একটি স্থান। সিলেট শহর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে গোয়াইন হাট উপজেলায় আমাদের সবার প্রিয় এই জাফলং অবস্থিত। এই জাফলং-এ যেতে সময় লাগবে ২-৩ ঘন্টা। এখানে রয়েছে মেঘের সাথে লেগে থাকা পাহাড়, স্বচ্ছ এবং ঠান্ডা পানির নদী, বিভিন্ন রংয়ের পাথর (লাল, সাদা, কালো এবং ধূসর) ঝুলন্ত ব্রিজ, খাসিয়া পল্লী ইত্যাদি।

রাতারগুলঃ সিলেট জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রাতারগুলো অন্যতম। এটি সিলেট শহর থেকে ২১ কিলোমিটার দূরে বোয়ানহাট উপজেলায় ফতেপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। এখানে পৌঁছাতে প্রায় ১-২ ঘন্টা সময় লাগবে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের একেবারেই কাছাকাছি যেতে চাইলে এখানে যাওয়া প্রয়োজন। সেখানে রয়েছে বিরল প্রজাতির বিভিন্ন ধরনের গাছ। এছাড়া নৌকা ভ্রমণের সময় দেখা যায় বানর, সাপ, কাঠবিড়ালি, কচ্ছপ এবং বিভিন্ন ধরনের পাখি।

বিছনাকান্দিঃ বিছনাকান্দি নাম শুনলেই যেন মনটা জুড়িয়ে যায়। এই নামের মধ্যে যেন সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে। সিলেট জেলা সদর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে জৈন্তাপুর উপজেলায় রুস্তমপুর ইউনিয়নে এই বিছানাকান্দি অবস্থিত। এখানে যাওয়ার জন্য সময় লাগবে প্রায় ২ ঘন্টা। এখানে গেলে দেখতে পাবেন মেঘ যেন পাহাড়ের গায়ে লেগে আছে ,নদীর ধারে আছে ছোট ছোট কিছু দ্বীপ এবং সেখানে রয়েছে সারি সারি বাড়ি ঘর ইত্যাদি।

লালখানঃ সিলেট থেকে ৪৪ কিলোমিটার দূরে এই লালখান অবস্থিত। লালখান আমাদের সবার পরিচিত একটি পর্যটক এলাকা। এখানে রয়েছে গার ও নীল রঙের পানির নদী। সিলেট জেলার কয়েকটি দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে আরো আছে মেঘালয় পাহাড়, চা বাগান, দ্বীপ ইত্যাদি।

ভোলাগঞ্জ সাদা পাথরঃ ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর প্রাকৃতিক বৈচিত্রের এক মন মুগ্ধকর স্থান। যেখানে গেলে মন এমনি এমনি জুড়িয়ে যায়। মন জুড়ানো এমন স্থান দেখার জন্য দেশ এবং দেশের বাইরের অনেক পর্যটক সব সময় ভিড় করে। সৌন্দর্যে ভরা এই জায়গাটি সিলেট শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এখানে যেগুলো মানুষকে আকর্ষণ করে সেগুলো হল পরিষ্কার এবং স্বচ্ছ পানির নিচে থাকা সাদা পাথর, সাদা বালি এবং খেলতে থাকা উড়ন্ত মেঘ ইত্যাদি।

হযরত শাহজালাল (রহঃ) এর মাজারঃ বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব জেলা সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহঃ) এর মাজার শরিফ অবস্থিত। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশ-বিদেশ থেকে মানুষ আসেন এই মাজার জিয়ারতের জন্য। দরবেশ ও পীর হিসেবে বিখ্যাতদের মধ্যে অন্যতম একজন হলো হযরত শাহজালাল (রহঃ)। তাঁর মাজারের উত্তর দিকের পুকুরে রয়েছে বিরাটকায় অসংখ্য গজাড় মাছ। পূণ্য অর্জনের আশায় আসা দর্শনার্থীগণ এগুলো মাছকে শুভ মনেকরে তাদের ছোট ছোট মাছ খেতে দেয় এবং এদের পানির উপর ভাসতে দেখে আনন্দ পায়।

মালনিছড়া চা বাগানঃ সিলেট জেলা চা বাগানের জন্য বিখ্যাত। সিলেট আসবেনা চা বাগান দেখবেন না এটা কি সম্ভব। সবুজে ভরা এই চা বাগানে গেলে মন ভরে শান্তির নিঃশ্বাস নেওয়া যায়। প্রকৃতির যে এত রূপ এবং বৈচিত্র এই স্থানগুলোতে না গেলে তা বোঝার উপায় নাই।

সিলেটের সবচেয়ে সুন্দর জায়গা

সিলেট জেলা প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্যে ভরা একটি জেলা। এ জেলায় কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এই স্থানগুলোর সৌন্দর্যের বৈশিষ্ট্য দিক বিচার করলে একেক স্থানে একেক রকম সুন্দর্য।এই স্থানগুলোর সৌন্দর্য তুলনা করা খুব কঠিন। এই স্থানগুলোতে প্রকৃতি যেন অপরূপ সৌন্দর্য ঢেলে দিয়েছে। আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্যের কারণে প্রতিটি স্থান আমরা অনেক সুন্দর স্থান বলে জানি। সিলেটের সবচেয়ে সুন্দর জায়গাগুলো হল জাফলং, বিছানাকান্দি, লালখান, সাদা পাথর, হযরত শাহজালালের মাজার, রাতারগুল ইত্যাদি।

এই প্রতিটি স্থানগুলো অনেক বৈচিত্র্যময় যেখানে মন ভরে দেখার মত অনেক কিছুই আছে। ভ্রমণ প্রিয় মানুষরা সব সময় এই জায়গাগুলোতে বেড়াতে যায়। আপনিও চাইলে এই জায়গাগুলো ঘুরে আসতে পারেন।

সিলেট জেলার ঐতিহাসিক স্থান

সিলেট জেলা শুধু প্রকৃতির বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্যে ভরা জেলা নয় বরং এটি একটি ইতিহাস সমৃদ্ধ একটি জেলা। এই সিলেট জেলাকে ঘিরে অনেক ইতিহাস রয়েছে। এছাড়াও সিলেট জেলার ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে যেগুলো জানা প্রয়োজন।

স্ত্রী চৈতন্য দেবের বাড়িঃ বৈষ্ণব পদাবলীর প্রবর্তক শ্রী চৈতন্য দেবের বাড়ি গোপালগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। যদিও এ বাড়িটি তার পূর্বপুরুষের কিন্তু এটি তার নামেই পরিচিত।

ক্রিনব্রিজঃ ছেলেদের ঐতিহাসিক স্থানের মধ্যে অন্যতম একটি স্থান হল ক্রিনব্রিজ। এই ব্রিজের সাথে যুক্ত আছে ইতিহাসে নানা ধরনের নিদর্শন। এই ব্রিজটিকে সিলেট শহরের প্রবেশদ্বার বলা হয়।

মনিপুরী রাজবাড়ীঃ আদি সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর নাম মনিপুরী। মনিপুরের রাজবাড়ী হল প্রাচীন স্থাপত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ নিদর্শন। এটি সিলেট শহরের মির্জা জঙ্গল নামক স্থানে ঊনবিংশ শতাব্দীতে মনিপুরী রাজবাড়ীটি স্থাপিত হয়।
সিলেট সার্কিট হাউসঃ সিলেট সার্কিট হাউস সুরমা নদীর উত্তরদিকে এবং ক্রিম ব্রিজ এর ডান দিকে অবস্থিত। এই সার্কিট হাউস টি প্রায় ১. ৮৭ এর জায়গা জুড়ে অবস্থিত। সিলেট সার্কিট হাউজ যেখানে রয়েছে সেখানকার পরিবেশ অনেক মনোরম।

শীতকালে সিলেটের দর্শনীয় স্থান

বাংলাদেশের ছয়টি ঋতু। প্রতিটি ঋতু ভিন্ন ভিন্ন রূপ নিয়ে হাজির হয় প্রকৃতিতে। ঠিক সেরকমই দর্শনীয় স্থান একেক ঋতুতে এক এক রকম সৌন্দর্য তুলে ধরে। আজ এখানে আমরা শীতকালে দেখার মত দর্শনীয় স্থান কোনগুলো সে বিষয়ে তুলে ধরব। শীতকালে সিলেটে দেখার মত তিনটি উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান হল ডিবির হাওর, জাফলং ও লালখান। শীতকালে আপনি যদি এই স্থানগুলোতে যান তাহলে অনেক বেশি আনন্দ পাবেন। লাল শাপলার বিখ্যাত জায়গা হল এই ডিবির হাওর।


এই হাওড়া গেলে দেখতে পাবেন লাল শাপলার অনেক সমাহার। যা দেখলে আপনার মন জুড়িয়ে যাবে। আরেকটি জায়গা হল মেঘালয় এর সীমান্ত ঘেষা জাফলং। এখানে গেলে আপনি দেখতে পাবেন বিভিন্ন রংয়ের পাথর যেমন লাল সাদা কালো ও ধূসর। শীতকালের সিলেটে অন্যতম আরেকটি দর্শনীয় স্থান হলো লালখান। এখানে গেলে আপনি নীল পানির রথ দেখতে পাবেন।

সিলেটের বিখ্যাত জিনিস

সিলেট হলো বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে অবস্থিত একটি জেলা। বাংলাদেশের প্রতিটি বিভাগ এবং প্রতিটি জেলা কোন না কোন জিনিসের জন্য বিখ্যাত হয়ে থাকে। অনুরূপভাবে সিলেট জেলা কমলালেবু চা পাতা এবং সাতকরা আচারের জন্য বিখ্যাত। সিলেটের আরও একটি বিখ্যাত জিনিস তা হলো সাত রঙের চা। সাত রঙের চায়ের খ্যাতি রয়েছে সারা দেশ জুড়ে।

মন্তব্য

সিলেটের দর্শনীয় স্থান গুলো আমার দেখা। জায়গাগুলো আমার অনেক ভালো লেগেছে। আপনি চাইলে সিলেটের দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে আসতে পারেন। প্রিয় পাঠক এই পোস্ট পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার কাছের মানুষ ও বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url