মধু খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা - ইসলামে মধু খাওয়ার নিয়ম

প্রিয় পাঠক, আপনি কি মধু খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক তাহলে আসুন আমরা আপনাদের এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে মধু খাওয়ার নিয়ম এবং মধু খাওয়ার উপকারিতা বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। আপনি যদি এই বিষয়ে সম্পূর্ণ জানতে চান তাহলে এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
মধু খাওয়ার নিয়ম
এই আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা আরো জানতে পারবেন মধু খাওয়ার উপযুক্ত সময়, ইসলামে মধু খাওয়ার নিয়ম এবং ওজন কমাতে মধু খাওয়ার নিয়ম ইত্যাদি।

ভূমিকা

মধু আমাদের প্রায় সবারই পছন্দের। মধু একটি সুস্বাদু মিষ্টি খাবার। মধু খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। আমরা যদি পুষ্টিকর খাবারের একটা তালিকা তৈরি করি তাহলে মধু সর্ব প্রথমে থাকবে। প্রতিদিন মধু খেলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ-বালাই দূর করে। শরীরকে সুস্থ্য রাখতে হলে প্রতিদিন অন্তত এক চামচ মধু খেতে হবে।মধু খাওয়ার নিয়ম আমরা কমবেশি সবাই জানি।


কুসুম কুসুম গরম পানির সঙ্গে এক চামচ মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে খেলে শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমতে দেয় না। মধুতে আছে গ্লুকোজ , ফ্রুটস, এনজাইম , সুক্রোজ ইত্যাদি আরো অনেক উপাদান। এই উপাদানগুলো থাকায় মধু খেলে শরীরে সাথে সাথে এনার্জি পাওয়া যায়। এছাড়া মধুতে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এমাইনো অ্যাসিড খনিজ লবণ ইত্যাদি বিদ্যমান।

মধু শরীরের বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে কাজ করে। প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত মধুর ব্যবহার একইভাবে হয়ে আসছে। এর গুণাগুণের কোন তারতম্য নেই। মধু শুধু বড়দের জন্য উপকারী ঠিক তা না এটি শিশুদের জন্যও অনেক উপকারী। শিশুদেরও নিয়ম করে মধু খাওয়ালে শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সহায়তা করে থাকে।

রাতে মধু খাওয়ার নিয়ম

মধুর উপকারিতা সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। মধুর উপকারিতা বেশি পেতে চাইলে নিয়ম অনুযায়ী খাওয়া উচিত। প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে বা খাওয়ার তিন থেকে চার ঘন্টা পর মধু খাওয়া অনেক বেশি উপকার। এতে শরীরের বিভিন্ন রোগ উপশম করে। এক চামচ মধুর সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে সর্দি-কাশিসহ অন্যান্য সমস্যা দূর হয়।

মধু ঘুমের ওষুধ হিসেবে কাজ করে। রাতে ভালো ঘুম হওয়ার জন্য এক চামচ মধু গরম দুধের সাথে মিশে খেতে পারেন তাহলে আপনার ভালো ঘুম হবে।

ইসলামে মধু খাওয়ার নিয়ম

ইসলামে মধু খাওয়ার কথা সুন্দরভাবে উল্লেখ আছে। আমাদের বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মধু খাওয়া পছন্দ করতেন। প্রতিদিন তিনি সকালে খালি পেটে মধু পানিতে মিশিয়ে খেতেন। মহান আল্লাহ তায়ালার কুদরতে মধু প্রায় সকল রোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করে। শরীরকে সুস্থ রাখতে বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা মধু খেয়ে থাকেন।

মধু খাওয়ার উপযুক্ত সময়

মধুর সকালে ও রাতে খাওয়া অনেক উপকারী। সকালে খালি পেটে কুসুম কুসুম গরম পানির সাথে একটা চামচ মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে খেলে শরীরে জমে থাকা চর্বি কমে যায়। রাতে মধু খেলে অনেক বেশি উপকার পাওয়া যায়। খাওয়া ঠিক তিন থেকে চার ঘণ্টা পর বা ঘুমানোর আগে কুসুম কুসুম গরম পানির সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে খেলে শরীরে মেদ বা চর্বি জমতে দেয় না ফলে শরীর সুস্থ্য থাকে।


তাছাড়াও মধু খাওয়ার ধরা বাধা কোন নিয়ম নেই, আপনি যে কোন সময় মধু খেতে পারেন সে ক্ষেত্রে একটু গুণাগুণ কমবেশি হতে পারে। মধু শরীরের জন্য কমবেশি সব রোগেরই ওষুধ হিসেবে কাজ করে তবে চিকিৎসকরা রাতে মধু খাওয়ার পরামর্শ বেশি দিয়ে থাকেন কারণ রাতে মধু খেলে এর কার্যকারিতা বেশি পাওয়া যায়। মধু  নিয়ম মেনে ও উপযুক্ত সময় মেনে মধু খেলে উপকারিতা ভালোই পাওয়া যায়।

মধু খাওয়ার উপকারিতা

মধু খাওয়ার গুণাগুণ ও উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। শরীরকে সুস্থ সবল রাখতে মধু খাওয়া অত্যন্ত জরুরী। মধু শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে শরীরকে সতেজ রাখতে সহায়তা করে। আসুন আমরা মধু খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেই-
হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ মধু হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। মধুতে থাকা ডেক্সটিন রক্তে মিশে তাৎক্ষণিক ক্রিয়া শুরু করে। যাদের পেটের সমস্যা লেগেই থাকে তাদের জন্য মধু অনেক উপকারী।

ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ মধু ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। খালি পেটে এক চামচ খাঁটি মধু খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়ার মত সমস্যা দূর হয়ে যায়।

রক্তস্বল্পতায়ঃ হিমোগ্লোবিন কম থাকার কারণে শরীরে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। মধু শরীরের হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে সাহায্য করে ফলে রক্তস্বল্পতা দূর হয়।

সর্দি কাশিতেঃ মধু সর্দি কাশি উপশম করে । সর্দি বা কাশি হলে এক চামচ মধু খেলে খুবই দ্রুত এর সুফল পাওয়া যায়।

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ প্রতিদিন সকালে মধু খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। মধু চিনির বিকল্প হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। চিনি খাওয়ার কারণে ওজন বৃদ্ধি পায় ফলে চিনির পরিবর্তে মধু খাওয়া অনেক ভালো।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তারা নিয়ম করে মধু খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আসে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ মধু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ত্বকের পরিচর্যায়ঃ ত্বকের পরিচর্যায় মধু একটি কার্যকরী উপাদান। ত্বকের বিভিন্ন রকম দাগ দূর করে ত্বক উজ্জ্বল করে তোলে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ নিয়ম করে মধু খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ফলে বিভিন্ন রোগ থেকে শরীরকে মুক্ত রাখা যায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে মধু খুবই কার্যকরী উপাদানের মধ্যে একটি।

অনিদ্রা দূর করেঃ যাদের স্বাভাবিকভাবে ঘুম হয় না এবং ঘুমের সমস্যা আছে তারা নিয়ম করে মধু খেতে পারেন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে দুই চামচ মধু পানিতে মিশিয়ে খেলে ভালো ঘুম হয়। প্রতিদিন যদি নিয়ম করে খাওয়া হয় তাহলে অনিদ্রা দূর হয়ে যাবে, এটি ঘুমের ওষুধের মত কাজ করে।

পাকস্থলী সুস্থ রাখতেঃ পাকস্থলী সুস্থ রাখতে হলে প্রতিদিন নিয়ম করে পরিমাণ মতো মধু খেতে হবে। মধু খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় ফলে পেটে গ্যাস জমতে দেয় না সেজন্য পাকস্থলী সুস্থ থাকে।

হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট দূর করেঃ মধুর সাথে সম সমপরিমাণ আদা ও গোলমরিচের গুঁড়া মিশিয়ে খেলে হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট দূর হয়ে যায় ফলে ফুসফুস সুস্থ থাকে। তাই যাদের হাঁপানি বা স্বাসকষ্ট আছে তারা নিয়ম করে মধু খাবেন।

দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করেঃ মধু দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধির জন্য অনেক ভালো কাজ করে। পরিমাণ মতো গাজর নিয়ে রস করে তার সাথে মধু মিশিয়ে খেলে দৃষ্টিশক্তি দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

ওজন কমাতে মধু খাওয়ার নিয়ম

ওজন কমাতে মধু সবচেয়ে বেশি কার্যকরী। কুসুম কুসুম গরম পানির সাথে মধু মিশিয়ে খেলে ওজন বৃদ্ধি হতে দেয় না। সকালে খালি পেটে কুসুম কুসুম গরম পানির সাথে লেবুর রসসহ এক চামচ মধু মিশিয়ে নিয়মিত খেলে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। আবার রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মধু মিশিয়ে খেলে একই উপকার পাওয়া যায়। যারা অতিরিক্ত ওজন নিয়ে চিন্তা করছেন তারা এই নিয়ম করে মধু খেয়ে দেখবেন খুব দ্রুত ওজন কমে গেছে।

মধুর শরীরে কোন প্রকার চর্বি জমতে দেয় না। অনেকে মনে করে থাকে মধু খেলে ওজন বৃদ্ধি পায় কিন্তু এটা তাদের ভুল ধারণা। চিকিৎসকরা বলেন নিয়মিত মধু খেলে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। মধু একটি প্রাকৃতিক উপাদান এর গুণাগুণ অনেক বেশি এবং এর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই।

মন্তব্য

উপরের আলোচনায় আমরা মধু খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেয়েছি। প্রিয় পাঠক, এই পোস্টটি পড়ে আপনার যদি ভালো লাগে তাহলে আপনি আপনার বন্ধু ও কাছের মানুষদের সাথে দয়া করে শোয়ার করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url