বৃষ্টির পানির উপকারিতা ও বৃষ্টির পানির অপকারিতা জেনে নিন

প্রিয় পাঠক আপনি কি বৃষ্টির পানির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আসুন এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আপানাকে বৃষ্টির পানির উপকারিতা ও অপকারিতা এবং বৃষ্টির পানিতে কোন ভিটামিন থাকে এই সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব।
বৃষ্টির পানির উপকারিতা ও অপকারিতা
এই আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন বৃষ্টির পানি দিয়ে গোসল করার উপকারিতা, বৃষ্টির পানি খাওয়া যায় কিনা এবং বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের পদ্ধতি ইত্যাদি।

ভূমিকা

তীব্র গরম যখন শুরু হয় তখন বৃষ্টির জন্য সবাই চেয়ে থাকে। সে সময়ের বৃষ্টি যেন প্রকৃতিকে স্বস্তি ফিরিয়ে দেয়। বৃষ্টির পানিতে ভেজার মুহূর্ত অনেক আনন্দের। বৃষ্টি এবং বৃষ্টির পানিতে ভেজার অনুভূতি যেমন সুন্দর তেমনি বৃষ্টির পানির উপকারিতাও অনেক। বৃষ্টির পানি শরীরে নানা ধরনের উপকার বয়ে আনে। বৃষ্টির পানিতে অ্যালকালাইন নামক একটি উপাদান আছে যা মানব দেহের জন্য খুবই উপকারী।


এই উপাদানটি শরীরের বিভিন্ন রোগ থেকে দেহকে মুক্ত রাখে। বৃষ্টির পানি শরীরে ওষুধের মত কাজ করে থাকে। এছাড়াও বৃষ্টির পানি নিরাপদে পান করা যায়। বৃষ্টির পানি রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয়। সকল ক্ষেত্রে ব্যবহার উপযোগী এই বৃষ্টির পানি। কাপড় পরিষ্কার করার জন্য এ পানি অনেক ভালো কেননা স্বাভাবিক পানির চেয়ে বৃষ্টির পানিতে সাবান এবং ডিটারজেন্ট অনেক বেশি কাজ করে।

অনেকে বৃষ্টির পানিকে সংরক্ষণ করে সারা বছর ব্যবহার করে থাকে। সকল উৎস থেকে সংগ্রহ করা পানির চেয়ে বৃষ্টির পানি অনেক বেশি নিরাপদ বলে আমরা জানি।

বৃষ্টির পানিতে গোসলের উপকারিতা

আমরা জানি বৃষ্টির পানি শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এই পানিতে গোসল করলে শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়ে যায়। বৃষ্টির পানিতে গোসল করলে যে সব উপকারিতা পাওয়া যায় সেগুলো হল-

চুলের সুস্থতা বজায় থাকেঃ বৃষ্টির পানিতে গোসল করলে বা বৃষ্টিতে ভিজলে চুলের জন্য সেটি অনেক উপকারী। চুলের রুক্ষতা দূর করে চুলকে স্বাস্থ্য উজ্জ্বল করে থাকে। এছাড়াও বৃষ্টির পানি চুলের গোড়ার খুশকি দূর করার জন্য খুবই কার্যকরী।

হরমোনের ভারসাম্যঃ হরমোনের ভারসাম্য হীনতা বেশিরভাগ মানুষের মধ্যেই দেখা যায়। নিয়মিত বৃষ্টির পানিতে ভিজলে হরমোনের ভারসাম বজায় রাখার থাকে।

কানের সমস্যা দূর করেঃ বৃষ্টির পানিতে ভেজার ফলে কানের বিভিন্ন ধরনের রোগ ভালো হয়ে যায়। যেমন কানের ইনফেকশন বা কানের ব্যথা। ১০-১৫ মিনিট বৃষ্টির পানিতে ভিজলে এই সমস্যাগুলো দূর হয়ে যায়। তবে বৃষ্টিতে ভেজার পর পুনরায় ভালোভাবে কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করতে হবে।

ত্বকের সমস্যা দূর হয়ঃ বৃষ্টির পানি হচ্ছে নিরাপদ পানি। এই পানি ব্যবহারের ফলে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়ে থাকে।

বৃষ্টির পানিতে কোন ভিটামিন থাকে

বৃষ্টির পানি শরীরের জন্য উপকারী সে বিষয়ে আমরা সকলেই জানি কিন্তু বৃষ্টির পানিতে কি ভিটামিন থাকে সেটা কি আমরা জানি। বৃষ্টির পানিতে ভিটামিন বি১২ থাকে যা সুস্বাস্থ্যের জন্য জরুরী। বৃষ্টির পানিতে এক ধরনের অনুজী এবং অ্যালকালাইন থাকে এর বিপাক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি হয় ভিটামিন বি১২। সেজন্য নিয়ম করে বৃষ্টিতে ভিজলে ভিটামিন বি১২ এর ঘাটতি শরীরে পূরণ হয়ে যায়।

বৃষ্টির পানির উপকারিতা ও অপকারিতা

বৃষ্টির পানি শরীরে নানা ধরনের উপকার করে। বৃষ্টির পানিতে যে উপাদান আছে সেটি শরীরসহ চুলের জন্য ভীষণ উপকারী। বৃষ্টির পানি যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমন এর কিছু অপকারিতা রয়েছে। এ পোষ্টের মাধ্যমে আমরা বৃষ্টির পানির উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব।

বৃষ্টির পানির উপকারিতা

বৃষ্টির পানিকে আমরা বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানি বলে জানি। এই পানি বিশুদ্ধ হওয়ার কারণে এর কিছু উপকারিতা রয়েছে। সেগুলো হল-

হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ বৃষ্টির পানিতে অ্যালকালাইন নামক একটি উপাদান আছে যা পেটের এসিডিটি কমিয়ে হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে খুবই কার্যকরী। প্রতিদিন দুই থেকে তিন চামচ সংরক্ষণ করে রাখা বৃষ্টির পানি পান করলে পেটের অন্যান্য সমস্যা ও দূর হয়ে যায়।

ক্যান্সারে কোষ বৃদ্ধিতে বাধাঃ ক্যান্সার একটি মরণঘাতী রোগ। আমাদের প্রত্যেকের শরীরে এই ক্যান্সারের কোষ বিদ্যমান থাকে। এই কোষ বৃদ্ধি পেলে এই মরনঘাতি রোগ শরীরে বাসা বাঁধে। বৃষ্টির পানিতে অ্যালকালাইন PH থাকার ফলে ক্যান্সারের কোষগুলো বৃদ্ধি হতে বাধা তৈরি করে। ফলে এই মরণ ঘাতি রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

চর্মরোগ দূর করেঃ বৃষ্টির পানি চর্মরোগ দূর করতে খুবই সহায়ক। বৃষ্টির পানিতে গোসল করলে চর্মরোগসহ ঘামাচি শরীরে ফুসকুড়ি ওঠা এবং অন্যান্য সমস্যা দূর করে থাকে।

কানের ইনফেকশনঃ কানের ইনফেকশন বা ব্যথাজনিত সমস্যা দূর করার জন্য বৃষ্টির পানি সবচেয়ে বেশি কার্যকরী। এ রোগের ক্ষেত্রে বৃষ্টির পানির কার্যকারিতা অনেক বেশি লক্ষ্য করা যায়।

ভিটামিন বি ১২ঃ বৃষ্টির পানিতে ভিটামিন বি১২ থাকায় এটি শরীরে এর অভাব পূরণ করে থাকে। বৃষ্টির পানিতে থাকা অ্যালকালাইন এবং ব্যাকটেরিয়ার বিপাকের মাধ্যমে এই ভিটামিন বি১২ তৈরি হয়। এই ভিটামিন শরীরের জন্য অনেক প্রয়োজনীয়।

ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিঃ ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য নিয়মিত বৃষ্টির পানি দিয়ে মুখ ধুলে এর ভালো ফলাফল লক্ষ্য করা যায়। তবে উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির সাথে সাথে ব্রণ ফুসকুড়ি ইত্যাদি দূর করে থাকে।

চুলের যত্নেঃ বৃষ্টির পানি চুলে ব্যবহার করলে চুল নরম এবং উজ্জ্বল হয়। এছাড়াও চুলের গোড়ায় যে সকল সমস্যা দেখা দেয় যেমন খুশকি দূর করা, চুলের গোড়া শক্ত এবং চুল পড়া কমে যায়।

ক্লান্তি ও অবসাদ দূর করেঃ বৃষ্টির পানিতে গোসল করলে শরীর ঝরঝরে হয়ে যায় ফলে ক্লান্তি ও অবসাদ দূর হয়। এছাড়াও এই পানি শরীরের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে শরীরকে সুস্থ সবল এবং সচল রাখতে সহায়তা করে।

বৃষ্টির পানির অপকারিতা

বৃষ্টির পানি নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানি বলে সাধারন মানুষ বিবেচনা করলেও গবেষকরা বর্তমানে বৃষ্টির পানিকে সম্পূর্ণভাবে নিরাপদ মনে করছেন না। তারা সকল জায়গার বৃষ্টির পানি নিয়ে গবেষণা করেছেন এবং সে গবেষণায় বৃষ্টির পানিতে ক্ষতিকারক (PFAS) নামক রাসায়নিক পাওয়া গেছে। সেজন্য তারা এ পানিকে সম্পূর্ণ নিরাপদ বলছেন না।

গবেষকদের মতামত যেমন-ই হোক না কেন বৃষ্টির পানিতে উপকারিতা রয়েছে। বৃষ্টির পানি আমাদের নানা প্রয়োজনে লেগে থাকে। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে রাখলে অনেক কাজে আসে। আবার যেগুলো অঞ্চলে পানির অনেক সংকট তারা এ বৃষ্টির পানি দিয়ে সবকিছু করে থাকে।

বৃষ্টির পানি স্পর্শ করা সুন্নত

বৃষ্টির পানি স্পর্শ করা সুন্নত কিনা এ বিষয়ে আমরা অনেকেই ধারণা রাখতে পারি না। বৃষ্টির পানি স্পর্শ করা সুন্নত কারণ বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা হচ্ছে আল্লাহর রহমতের এক একটি ধারা। বৃষ্টির পানি নিয়ে বর্ণিত একটি হাদিস হল-

আনাস (রাঃ) বলেন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে থাকাকালীন বৃষ্টির নামলে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তার পোশাকের কিছু অংশ উন্মোচন করে শরীরে বৃষ্টির পানি স্পর্শ করায়। স্পর্শ করানোর কারণ জিজ্ঞেস করলে বলেন এই বৃষ্টির ধারাগুলো মহান আল্লাহ তা'আলা বা তার রবের কাছ থেকে এসেছেন রহমত হয়ে সে কারণে বৃষ্টির পানি স্পর্শ করা সুন্নত।

আমাদের দেশে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয় তাই আমরা মন থেকে ইচ্ছা করলেই আল্লাহ তা'আলার রহমত এর ধারা স্পর্শ করে সুন্নাতের আমল হতে পারে।

বৃষ্টির পানি কি খাওয়া যায়

বৃষ্টির পানি খাওয়া কতটা নিরাপদ এ বিষয়ে আমাদের অনেকেরই মনে প্রশ্ন জাগে। আসুন এ বিষয়ে আমরা কিছুটা আলোচনা করি। বৃষ্টির পানি যেহেতু বিশুদ্ধ ও নিরাপদ সেহেতু বৃষ্টির পানি নিঃসন্দেহে খাওয়া যায়। এই পানিতে অ্যালকালাইন নামক উপাদান আছে যা হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে।

পেটের সমস্যার সমাধানে করার জন্য নিয়ম করে প্রতিদিন দুই থেকে তিন চামচ সংরক্ষণ করে রাখা বৃষ্টির পানি খেতে পারেন তাহলে পেটের সমস্যা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে। এছাড়া বৃষ্টির পানি পান করলে শরীরের অন্যান্য সমস্যারও সমাধান হয়ে যায়। কেননা বৃষ্টির পানি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কাজ করে।

বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ পদ্ধতি

বৃষ্টির পানি অনেক ক্ষেত্রে সংরক্ষণ করার প্রয়োজন হতে পারে বিশেষ করে যে এলাকাগুলোতে পানির সংকট বেশি বা খরার প্রবণতা বেশি। সেখানে বৃষ্টির প্রাণী সংরক্ষণ করা বেশি জরুরী। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের কয়েকটি পদ্ধতি নিচে আলোচনা করা হলো-
  • প্রথমত যে কারণে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ প্রয়োজন তার উপর ভিত্তি করে পানি সংরক্ষণের পাত্র নির্বাচন করতে হবে
  • অল্প পরিমাণ পানি হলে যে কোন বালতি বা ছোট ড্রামে সেটি সংরক্ষণ করতে পারেন
  • বেশি পরিমাণ পানি হলে বড় ট্যাংক যেমন ১০০০০ লিটার পরিমাণ ট্যাঙ্কে সংরক্ষণ করতে পারেন
  • এছাড়াও মাটির কিনারায় শৌল শিরা নির্মাণ করে রাখলে সেখানে অনেক পানি সংরক্ষণ করা যায় যা চাষাবাদ করার জন্য আহরণ করা যায়।

মন্তব্য

বৃষ্টির পানির অনেক উপকারিতা রয়েছে কারণ এ পানি নিরাপদ, স্বাস্থ্যসম্মত এবং বিশুদ্ধ। বৃষ্টির পানি খেতে চাইলে সংরক্ষণের পদ্ধতি অনুসারে সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন। প্রিয় পাঠক এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু এবং আত্মীয় স্বজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url