নিয়মিত খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ বিষয়ে জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আপনি কি খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক তাহলে আসুন আমরা আপনাদের এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ এবং খেজুর ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। আপনি যদি এই বিষয়ে সম্পূর্ণ জানতে চান তাহলে এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
নিয়মিত খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ
এই আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা আরো জানতে পারবেন সকালে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা, খেজুর খাওয়ার উপযুক্ত সময় এবং খেজুর খাওয়ার অপকারিতা ইত্যাদি।

ভূমিকা

আমরা প্রতিনিয়ত শরীরের সুস্থতা নিয়ে ভাবনায় থাকি। শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখার জন্য যে সকল খাবার বা ফল খাওয়া প্রয়োজন সে সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। বিভিন্ন ধরনের খাদ্য বা ফল আছে যেগুলো খেলে শরীর সুস্থ থাকে। শরীরের সুস্থতা বজায় রাখার জন্য আমরা যে সকল পুষ্টিকর ফল খেয়ে থাকি সেগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে খেজুর। খেজুর অত্যন্ত সুস্বাদু এবং পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি ফল।


খেজুরের মধ্যে রয়েছে নানা ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা যা শরীরকে সম্পূর্ণ সুস্থ করার জন্য অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ। খেজুরে রয়েছে ৮০ভাগ চিনি জাতীয় উপাদান। খেজুর কে সবসময় চিনির বিকল্প হিসেবে খাওয়া যায়। এছাড়া অন্যান্য যে উপাদান রয়েছে সেগুলো হলো কোন খনিজ সমৃদ্ধ বোরণ, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, সেলেনিয়াম, আয়রন এবং জিংকসহ আরো অন্যান্য উপাদান।

এর উপাদান গুলো থাকায় নিয়মিত খেজুর খেলে শারীরিক দুর্বলতা দ্রুত কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও শরীরের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করতে খেজুর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

খেজুর খাওয়ার উপকারিতা

খেজুর আমাদের সবার পছন্দের সুস্বাদু ও সুমিষ্ট জাতীয় একটি ফল। এই ফলটির যেমন রয়েছে স্বাদ তেমনি রয়েছে এর নানা ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা। নিয়মিত খেজুর খেলে শরীরে নানা রকম উপকারিতা লক্ষ্য করা যায়। সে উপকারিতা গুলো হলো-

ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ রোধ করেঃ ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখার জন্য খেজুর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হিসেবে কাজ করে। যাদের ত্বকে অল্প সময়ে বার্ধকের ছাপ পরে তারা নিয়মিত খেজুর খেলে এই সমস্যা দ্রুত দূর হয়ে যাবে। এছাড়াও ত্বকের আদ্রতা, উজ্জ্বলতা এবং লাবণ্য ধরে রাখতে খেজুর অতুলনীয়।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় রক্তের শর্করার মাত্রা স্থির রাখে যারা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই প্রয়োজন। এছাড়া খেজুর একটি আন্টি অক্সিডেন্টের উৎস হওয়ায় ডায়াবেটিস চিকিৎসায় সাহায্য করে থাকে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ খেজুরে রয়েছে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম যা যা শরীরের রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। প্রতিদিন নিয়ম করে খেজুর খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকার পাশাপাশি শরীরের অন্যান্য সমস্যা দূর হবে।

কোলেস্টোরেলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ প্রতিদিনের খাদ্য অভ্যাসের কারণে আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। যা হার্টের জন্য খুবই ক্ষতিকর। নিয়মিত খেজুর খাওয়ার ফলে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমিয়ে কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক রাখে ফলে হার্ট সুস্থ থাকে।

রক্তশূন্যতা দূর করেঃ রক্তশূন্যতা দূর করতে অত্যন্ত কার্যকরী খেজুর। খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন যা রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং রক্তশূন্যতা দূর করে। সুস্থ মানুষের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ রক্ত থাকা প্রয়োজন তা না হলে শরীর ধীরে ধীরে অচল হয়ে পড়বে।

আর এ সমস্যা দূর করতে হলে প্রতিদিন রাতে কয়েকটি খেজুর পানিতে ভিজিয়ে সকালে সেই পানি পান করলে এই সমস্যা দ্রুত দূর হয়ে যাবে। এছাড়াও হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করতে চাইলে দুধের সাথে খেজুর মিশিয়ে খেতে হবে তাহলে সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

ক্যান্সার প্রতিরোধঃ খেজুর হচ্ছে অত্যাধিক পুষ্টিকর একটি ফল যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ বৃদ্ধি করতে সক্ষম একই সাথে এটি ক্যান্সারের মতো মরণঘাতী রোগ প্রতিরোধ সাহায্য করে। প্রতিদিন নিয়ম করে খেজুর খেলে ক্যান্সারের কোষ ভিত্তিতে বাধা তৈরি করে এ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খেজুর।

হাড় মজবুত করেঃ হাড় মজবুত করার জন্য পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম থাকা প্রয়োজন। খেজুরে রয়েছে পর্যাপ্তপরিমাণে ক্যালসিয়াম যা হারকে মজবুত করে এবং শক্তিশালী করে।

সংক্রমণ রোধ করেঃ আমাদের শরীরে প্রতিনিয়ত সংক্রমণজনিত রোগ হয়ে থাকে। এই সংক্রমণ রোধ করতে খেজুর অত্যন্ত কার্যকরী একটি ফল। এটি খেলে সর্দি-কাশি এবং ঠান্ডা জনিত সকল সমস্যা দূর হয়ে যায়।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে খেজুর যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। যারা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত খেজুর খেলে এই সমস্যা তাড়াতাড়ি দূর হয়ে যাবে।

শিশুদের শারীরিক সুস্থতায়ঃ শিশুদের শারীরিক সুস্থতার জন্য খেজুর অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপাদান। শিশুদের নিয়মিত খেজুর খাওয়ালে শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি দৈহিক বিকাশেও সাহায্য করবে। কারণ একটি শিশুর শারীরিক সুস্থতার সাথে দৈহিক বিকাশ ও প্রয়োজন পড়ে।

সকালে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা

সুমিষ্টি ও সুস্বাদু এই ফলটিতে রয়েছে নানা ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা। এই ফলটি নিয়মিত খেলে শরীরে মিলবে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ। সকালে খালি পেটে খেজুর খেলে এর পরিপূর্ণ পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়।
  • প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেজুর খেলে শরীরের প্রচুর পরিমাণে এনার্জি তৈরি হবে যা শরীরকে সচল এবং সচল রাখতে সাহায্য করবে।
  • সকালে খেজুর খেলে শুধু শরীর সচল থাকে না তার সাথে মস্তিষ্ক সচল হয়ে ওঠে।
  • খেজুরে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, আয়রন, ফাইবার, প্রোটিন সহ আরো অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা শরীরকে শক্তিশালী করে তোলে।
  • খেজুরের মধ্যে ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকায় পেটের ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  • খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন সেজন্য সকালে খালি পেটে খেজুর খেলে শরীরের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পায়।
  • খেজুর সর্দি-কাশি তে উপশম করে । ঘুমানোর আগে কয়েকটি খেজুর পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে ঘুম থেকে উঠে সে পানি পান করলে সর্দি কাশি খুব তাড়াতাড়ি দূর হয়ে যাবে।
  • প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুটো করে খেজুর খেলে মস্তিষ্ক সচল রাখার সাথে সাথে স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

খেজুর ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা

বিশেষজ্ঞের মতে খেজুর সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে খেলে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তাই আসুন খেজুর ভিজিয়ে রেখে খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায় তা জেনে নেয়া যাক-
  • নিয়মিত ভিজিয়ে রাখা খেজুর খেলে অনেক উপকার হয়। ভিজিয়ে রাখার ফলে খেজুরে থাকা ট্যানিন বা ফাইটিক এসিড বের হয়ে যাওয়ার ফলে পুষ্টিগণ সহজে শোষিত হয় এবং ভিজিয়ে রাখা খেজুর সহজেই হজম হয়। তাই প্রতিদিন নিয়ম করে রাতে ভিজিয়ে রাখা খেজুর খাওয়া যেতে পারে।
  • সকালে ভিজিয়ে রাখা খেজুর খেলে তা অনেক সময় ধরে পেটকে ভরিয়ে রাখার ফলে সারাদিন শরীর ও মন সতেজ থাকে। অতএব প্রতিদিন সকালে ৩ থেকে ৪টি রাতে ভেজানো খেজুর খাওয়া শরীরের জন্য ভালো।
  • আপনি কি শরীরের বেশী ওজন নিয়ে চিন্তিত? তাহলে আপনার জন্য খেজুর একটি উৎকৃষ্ট খাবার। খেজুরে অধিক পরিমাণে ফাইবার আছে, এ ফাইবার আপনার ক্ষুধা কমিয়ে দেয় এবং আপনাকে অতিরিক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত রাখে। আর তাই আপনি যদি আপনার শরীরের ওজন কমাতে চান তাহলে রাতে ৮ থেকে ১০ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখা খেজুর সকালে খালি পেটে খেতে পারেন।

খেজুর খাওয়ার উপযুক্ত সময়

খেজুর খাওয়ার নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। আপনি যখন ইচ্ছা খেতে পারেন। একজন সুস্থ্য মানুষ প্রতিদিন ৪ থেকে ৬টি খেজুর খাওয়া অস্বাভাবিক নয় তবে পেটের সমস্যা না থাকলে বা হজম করতে পারলে তিনশ গ্রাম খেজুর এক সাথেই খাওয়া যেতে পারে। উল্লেখ্য, যত ভালো কিছুই হোকনা কেন পেটের সমস্যা থাকলে তা খাওয়া উচিৎ নয়।

খেজুর ফাইবার সমৃদ্ধ একটি খাদ্য বা ফল যা মানুষের ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে। এজন্য রাতে ঘুমানের আগে ২ থেকে ৪ টি খেজুর খেতে পারেন। খেজুর শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংশ করে, পেট পরিষ্কার করে, লিভার ও হার্ট সুস্থ্য রাখে। তাই প্রতিদিন সকালে নিয়ম করে ভেজানো খেজুর খেতে পারেন।

শুকনো খেজুর খাওয়ার উপকারিতা

প্রতিটি শুকনো খেজুরে ২০ থেকে ২৫ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম। আপনারা জানেন যে ম্যাগনেসিয়াম মানুষের শরীরের উচ্চ রক্তচাপ কমায়। রক্তে হিমোগ্লোবিন কম থাকলে প্রতিদিন নিয়ম করে খেজুর খেতে পারেন। কারণ শরীরের আয়রণের ১১% খেজুর খাওয়ার ফলে সমন্বয় হয়। যাদের রক্তস্বল্পতার সমস্যা রয়েছে তারা খেজুর খেতে পারেন।

দুধ ও খেজুর খাওয়ার উপকারিতা

দুধ শরীরের জন্য উপকারী ও পুষ্টিকর একটি পানীয়। আর পুষ্টিগুণে ভরপুর খেজুরে আছে অধিক পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ। আর তাই কুসুম কুসুম গরম দুধ ও খেজুর এক সাথে মিশিয়ে খাওয়া শরীরের জন্য অধিক পরিমাণে উপকারী। আর এ জন্য প্রতিদিন রাতে নিয়ম করে গরম ১ গ্লাস দুধে খেজুর মিশিয়ে খেয়ে ঘুমালে কোষ্ঠকাঠিন্য দুর, দৃষ্টিশক্তি উন্নত হওয়াসহ শরীরের অনেক সমস্যার সমাধান হবে।

খেজুর খাওয়ার অপকারিতা

খেজুর খাওয়ার অনেক উপকারিতা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে খাওয়ায় কিছুটা নিয়ম মেনে চলা উচিত। খেজুর অধিক মিষ্টি জাতীয় একটি ফল তাই ডায়াবেটিস রোগীদের খেত্রে এ খেজুর খাওয়ায় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এছাড়াও যে সকল মানুষের দেহে অধিক পরিমাণে পটাশিয়াম উপস্থিত তারা খেজুর খাওয়ায় সতর্ক থাকবেন।

জেনে রাখা ভালো বেশী পরিমাণে খেজুর খাওয়ার ফলে হজমের সমস্যার পাশাপাশি পেটের নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাই অতিরিক্ত খেজুর খাওয়া থেকে বিরত থাকুন কারণ অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয়।

লেখকের মন্তব্য

খেজুর একটি অধিক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি ফল। এটি খেতে অনেক সুস্বাদু অনেক মিষ্টি। খেজুরের পুষ্টিগুণ পেতে চাইলে প্রতিদিন নিয়ম করে ৩ থেকে ৪ খেজুর খেতে পারেন। প্রিয় পাঠক এই আর্টিকেল পড়ে আপনার যদি ভালো লাগে বা উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url