জনতা ব্যাংকের সেবাসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আপনি কি জনতা ব্যাংক লিমিটেড এর সেবা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জনতা ব্যাংকের সেবাসমূহ এবং জনতা ব্যাংকে একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেল মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
জনতা ব্যাংকের সেবাসমূহ
এটি পড়লে আরো জানতে পারবেন জনতা ব্যাংক লিমিটেড এর একাউন্ট চেক করার নিয়ম, জনতা ব্যাংক অনলাইন একাউন্ট, জনতা ব্যাংক কি সরকারি ব্যাংক এবং সেভিংস একাউন্ট এর সুবিধা ইত্যাদি।

ভূমিকা

জনতা ব্যাংক লিঃ বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক। ব্যাংকটি ১৯৭২ রাষ্ট্রপতির ২৬ নং অধ্যাদেশবলে জনতা ব্যাংক নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৫ নভেম্বর ২০০৭ সালে তা জনতা ব্যাংক লিমিটেড এবং ২০২৩ সাল হতে জনতা ব্যাংক পাবলি লিমিটেড কোম্পানী (পিএলসি) নামে পরিচালিত হচ্ছে।

বর্তমানে ৪টি বৈদেশিক সহ ৯২১ টি শাখায় ১২২৮৪ জন জনবল নিয়ে সারা বাংলাদেশে সুনামের সাথে জনতা ব্যাংকের কার্যবলী পরিচালনা করে আসছে।

জনতা ব্যাংকে একাউন্ট খোলার নিয়ম

এখন জনতা ব্যাংক-এ একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করবো। একাউন্ট খোলার জন্য যে ডকুমেন্টগুলে প্রয়োজন হবে যেমন- আপনার ন্যাশনাল আইডি কার্ডের ফটোকপি, আপনার পাসপোর্ট সাইজের ছবি ২টি, নোমিনীর আইডি কার্ড/জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি ও তার একটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি। আমানত হিসাব খুলতে হলে প্রথমে আপনাকে জনতা ব্যাংক-এর নিকটস্থ কোন শাখায় যেতে হবে।


হেল্প ডেস্কে কর্তব্যরত কর্মকর্তাকে একাউন্ট খোলার বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে হবে। তিনি আপনার চাহিদানুসারে হিসাব খোলার নির্দিষ্ট ফরম প্রদান করবেন। কর্তব্যরত কর্মকর্তার সাহায্য নিয়ে ফরমটি যথাযথভাবে পুরণ পূর্বক স্বাক্ষর করে টাকা জমার শ্লিপের মাধ্যমে কাউন্টারে টাকা জমা দিতে হবে। এখন থেকে ব্যাংক চলাকালীন সময়ে আপনি টাকা জমা ও উত্তোলন করতে পারবেন।

জনতা ব্যাংক একাউন্ট চেক করার নিয়ম

জনতা ব্যাংকের একাউন্ট চেক করতে হলে ব্যাংকের নির্দিষ্ট শাখায় গিয়ে কর্তব্যরত কর্মকর্তাকে নিজের পরিচয় ও একাউন্ট নম্বর বলে দিলেই তিনি আপনার চাহিদানুসারে একাউন্টের তথ্য প্রদান করবেন এবং আপনার প্রয়োজন হলে একাউন্টের স্টেটমেন্ট প্রদান করবেন। এটি অবশ্য সময়সাপেক্ষ ব্যাপার, আপনাকে ব্যাংকে যেতে হবে এবং ব্যাংকের কর্মকর্তর সাথে কথা বলতে হবে তবেই আপনি আপনার একাউন্টের তথ্য পাবেন।

অনেকে এটি অনেক ঝামেলা মনে করেন। কিন্তু বর্তমানে অনলাইনের যুগে এই একাউন্ট চেক করা খুবই সহজ। আপনার ব্যবহৃত স্মার্ট ফোনে জনতা ব্যাংকের এপ্লিকেশন ডাউনলোড করে ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে একাউন্টে লগইন করতে হবে। এখান থেকে খুব সহজেই আপনি আপনার চাহিদামত যাবতীয় কার্যাবলী/লেনদেন/একাউন্ট চেক করতে পারবেন।

জনতা ব্যাংক অনলাইন একাউন্ট

রাষ্ট্রায়ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাংক জনতা ব্যাংক পিএলসি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে মোবাইল ব্যাংকিং ভিত্তিক এ্যাপস ই-জনতা চালু করেছে। এখন থেকে জনতা ব্যাংকের গ্রাহকগণ ঘরে বসেই তাদের একাউন্ট পরিচালনা করতে পারবেন। ই-জনতা এ্যাপস ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রকার বিল যেমন- ক্রেডিট কার্ড, বিদ্যুৎ বিল, ওয়াসার বিল, গ্যাস বিল, ইন্টারনেটের বিলসহ অন্যান্য বিল প্রদান করা যাবে।

এছাড়াও এ এ্যাপ ব্যবহার করে সকল কোম্পানীর মোবাইল রিচার্জ, বিকাশ, নগদ, রকেটসহ দেশে ব্যবহৃত সকল মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (MFS) এ খরচ ছাড়াই টাকা পাঠানো যাবে। ই-জনতা এ্যাপস ব্যবহার করে BEFT এর মাধ্যমে দেশের সকল ব্যাংকে খরচ ছাড়া এবং RTGS এর মাধ্যমে স্বল্প খরচে তাৎক্ষণিক টাকা পাঠানো যায়।

জনতা ব্যাংকে স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম

স্কুল পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের সঞ্চয়ের মানসিকতা তৈরী এবং সঞ্চয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখার লক্ষ্যে তাদের ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনার জন্য ৬ থেকে ১৮ ছাত্র-ছাত্রীদের একাউন্ট খোলার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এর নির্দেশনা মোতাবেক জনাতা ব্যাংকে স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলার অনুমোদন দেন কর্তৃপক্ষ।

জনতা ব্যাংকে যে কয়েকটি একাউন্ট খোলা যায় তার মধ্যে স্টুডেন্ট একাউন্ট একটি। স্টুডেন্ট একাউন্টের অনেক সুযোগ সুবিধা রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো বৃত্তি পাওয়ার সুবিধা। বাংলাদেশে কয়েকটি ব্যাংক আছে যারা ভালো শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দিয়ে থাকেন।


এই বৃত্তি পাওয়ার জন্য স্টুডেন্ট একাউন্ট খুলতে হয়। জনতা ব্যাংকে কিভাবে স্টুডেন্ট একাউন্ট খুলতে হয় সে বিষয়ে আমরা আলোচনা করব।

স্টুডেন্ট একাউন্ট খুলতে যা প্রয়োজন

  • দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি (শিক্ষক কর্তৃক সত্যায়িত)
  • অভিভাবকের দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি (স্টুডেন্ট কর্তৃক সত্যায়িত)
  • শিক্ষক কর্তৃক সত্যায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচয় পত্রের ফটোকপি
  • জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি
  • নমিনির দুই কপি সত্যায়িত পাসপোর্ট সাইজের ছবি ও এক কপি জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি

স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম

  • স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলার জন্য প্রথমে ব্যাংকে দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে অবহিত করতে হবে।
  • তারপর অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য নির্দিষ্ট একটি ফরম দিবে তা সঠিক ভাবে পূরণ করতে হবে
  • ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় তথ্য সঠিকভাবে দিতে হবে
  • স্টুডেন্ট এবং অভিভাবকের যৌথ স্বাক্ষর দিয়ে সকল কাগজপত্র দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে জমা দিতে হবে।

জনতা ব্যাংক কি সরকারি ব্যাংক

জনতা ব্যাংক লিঃ বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং দেশের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম। তাই মানুষ নির্দিধায় ও সাচ্ছন্দে এ ব্যাংকে টাকা জমা রাখতে পারে। এ ব্যাংকের ঋণের সুদের হার কম হওয়ায় সকল শ্রেণী পেশার মানুষজন এখান থেকে ঋণ নিয়ে কৃষি কাজ, মৎস্য চাষ, গরু মোটাতাজাকরণ, দুগ্ধ খামারসহ অন্যান্য ছোট-বড় ব্যবসা করে দেশের আর্থিক উন্নয়ন সাধন করে। এছাড়াও জনতা ব্যাংক বিভিন্ন সেবামূলক কাজ পরিচালনা করে থাকে।

সেভিংস একাউন্ট এর সুবিধা

বর্তমান সময়ে আমাদের প্রতিটি মানুষেরই ব্যাংক একাউন্ট থাকা প্রয়োজন। ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য অনেকেই চিন্তা করেন যে কোন একাউন্ট খোলা ভালো হবে। আজ আমরা সে বিষয়ে আলোচনা করব। টাকা সঞ্চয় করার জন্য সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাওয়া যায় সেভিংস একাউন্টে। দেশের বেশিরভাগ মানুষই সেভিংস একাউন্ট ব্যবহার করে থাকে।


কারণ এই একাউন্ট খুলতে খুব বেশি ঝামেলা হয় না। খুব সহজেই সেভিংস একাউন্ট খোলা যায়। যারা মাসিক আয় করে এবং মাসিক বেতনভুক্ত তাদের জন্য সেভিংস একাউন্ট খুবই লাভজনক। অন্যান্য একাউন্টের মত সঞ্চয়ের টাকার নির্দিষ্ট পরিমাণ মুনাফা সুবিধাও রয়েছে।

সেভিংস একাউন্টের আরও একটি বড় সুবিধা হল এই একাউন্ট চালু রাখার জন্য একাউন্টে খুব বেশি ব্যালেন্স রাখতে হয় না। যেকোনো ধরনের ব্যাক্তি এ একাউন্ট খুব সহজেই খুলতে পারবেন। একাউন্ট খুলতে খুবই কম টাকা ডিপোজিট করতে হয়।

কারেন্ট একাউন্ট এর সুবিধা

কারেন্ট একাউন্টে সবচেয়ে বড় সুবিধা হল নিয়মিত একাধিকবার লেনদেন করা যায়। কারেন্ট একাউন্ট ব্যাবহার হয়ে থাকে কোন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের নামে। কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান তৈরি করার জন্য এই একাউন্ট চালু করা হয়। যে কোন সময় টাকা উত্তোলনের মাধ্যমে ব্যবসায়িক নগদ চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় একাউন্টের মাধ্যমে।

কারণ এ একাউন্টে সম্পূর্ণ লেনদেনের সুবিধা রয়েছে। লেনদেনের স্বাধীনতা থাকার কারণে ব্যাংক থেকে কোন সুদ কারেন্ট একাউন্টধারীকে প্রদান করা হয় না। কারেন্ট একাউন্টে মোটা অংকের টাকা লেনদেন করা হয়। কারেন্ট একাউন্টে মূলত যে সুবিধা দিয়ে থাকে।

সেটি হল ইচ্ছামত লেনদেনের সুবিধা (যতবার বা যত ইচ্ছা টাকা তুলতে বা জমা দিতে পারবেন) যা অন্য কোন একাউন্টে পাওয়া যায় না। বড় বড় প্রতিষ্ঠান এবং কোম্পানিগুলো এই একাউন্টের মাধ্যমে নিরাপদে টাকা লেনদেন করতে পারে।

প্রতিবেদকের বক্তব্য

উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে জনতা ব্যাংক পাবলিক লিমিটেড কোম্পানী এর সেবাসমূহ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেয়েছেন। প্রিয় পাঠক এ আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হন এবং আপনার যদি ভালো লাগে তাহলে দয়া করে আপনি আপনার কাছের মানুষ ও বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url