ত্বীন ফল খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আপনি কি ত্বীন ফল খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে আসুন এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে ত্বীন ফল খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা এবং ত্বীন ফলের চারা কোথায় পাওয়া যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে চাইলে সম্পন্ন আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ত্বীন ফল খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
এটি পড়লে আরো জানতে পারবেন ত্বীন ফল অর্থ কি, ত্বীন ফলের ও গাছের দাম, ত্বীন ফল চাষ পদ্ধতি, এবং ত্বীন ফল নিয়ে হাদিস ইত্যাদি।

ভূমিকা

মরুভূমির বুকে জন্ম নেয়া সুস্বাদু এবং রসে ভরা যে ফলটি তার নাম হলো ত্বীন। পবিত্র কুরআন শরীফে ত্বীন ফলের কথা সুন্দরভাবে উল্লেখ করা রয়েছে। কুরআনে ১১৪ টি সূরার মধ্যে ৯৫ তম সূরা নাম হলো ত্বিন। এই ত্বীন ফলের নামে আল্লাহ তায়ালা একটি সূরা নাযিল করেছেন কুরআনের মধ্যে। ত্বিন ফলকে বরকতময় একটি ফল বলা হয়ে থাকে।
 

ত্বীন ফলের আরেকটি নাম আছে সেটি হল ডুমুর।এই ফল খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি রয়েছে ঔষধি গুণ। এই ত্বীন ফলকে বিভিন্ন রোগের মহা ঔষধ বলা হয়। অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এই ফলটি নানা রঙের হয়ে থাকে।

এ ফলে যে সব পুষ্টি উপাদান রয়েছে সেগুলো হলো-পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক, কপার, আইরন, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে ইত্যাদি। এতে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান আছে অথচ সে তুলনায় ফ্যাট এবং ক্যালোরি কম রয়েছে।

তিন ফল খাওয়ার উপকারিতা

সর্বাধিক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই ফলটি খেতে যেমন সুস্বাদু ও মজাদার তেমনি অনেক উপকারী। এখানে আমরা ত্বীন ফলের উপকার সম্পর্কে জানব-

রক্তস্বল্পতা দূর করেঃ রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া প্রায় মানুষের মধ্যে দেখা যায়। ত্বীন ফলে আয়রন থাকায় রক্তস্বল্পতা দূর করতে খুবই কার্যকরী। প্রতিদিন ফল খেলে রক্তস্বল্পতা ধীরে ধীরে কমে যায়। ফলে অ্যানিমিয়া সমস্যা দূর হয়ে থাকে।

দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করেঃ সুস্বাদু ও সুমিষ্ট এই ত্বীন ফল চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে খুবই কার্যকরী কেননা এই ফলে আল্লাহ সম্পূর্ণ নেয়ামত রয়েছে।

হাড় মজবুত করেঃ বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের শরীরে হাড়ের সমস্যা দেখা দেয়। প্রতিদিন ত্বীন ফল খেলে হাড়ের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে হাড় মজবুত করতে সহায়তা করে। এছাড়াও ত্বীন ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম যা হাড়ের ক্ষয় রোধ করতে সহায়তা করে।

অশ্ব বা পাইলস রোগ নিরাময় করেঃ অশ্ব বা পাইলস রোগ খুবই পীড়াদায়ক একটি রোগ। এই পীড়াদায়ক থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রতিদিন ত্বীন ফল খেতে পারেন। তাহলে এই সমস্যা সহজেই দূর হয়ে যাবে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ ত্বীন ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। পটাশিয়াম থাকার কারণে রক্তচাপ সবসময় নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমে যায়।


ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ আল্লাহর তায়ালার সম্পন্ন নেয়ামত পরিপূর্ণ এই ফলটি ক্যান্সার সহ বিভিন্ন মরণ ব্যধি রোগ থেকে শরীরকে মুক্ত রাখে।

ওজন কমায়ঃ শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত চর্বি কমাতে ত্বীন ফলের গুরুত্ব অত্যাধিক। শরীরের চর্বি কমানোর মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে ত্বীন ফলের গুরুত্ব অপরিসীম। এছাড়াও যাদের অতিরিক্ত ওজন তারা নিয়ম করে ত্বীন ফোন খেলে ধীরে ধীরে ওজন কমতে সাহায্য করবে।

হার্টের ঝুঁকি কমায়ঃ ত্বীন ফল হার্ট সুস্থ রাখার জন্য খুবই কার্যকরী একটি ফল। প্রতিদিন ত্বীন খাওয়ার ফলে হার্ট সুস্থ থাকে এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে যায়।

মেয়েদের ঋতুস্রাবের সমস্যা দূর করেঃ ঋতুস্রাবের সময় অতিরিক্ত রক্ত স্রাব হলে কাঁচা ত্বীন ফলের রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে এ সমস্যা দূর হয়ে যায়।

পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর করেঃ পেটের বিভিন্ন রোগ যেমন ডায়রিয়া আমাশা ক্ষুধামন্দা ইত্যাদি সমস্যা থাকলে প্রতিদিন কাঁচা এক চামচ ত্বীন বার ডুমুরের রস খেতে হবে। তাহলে ধীরে ধীরে সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

ত্বকের উজ্জ্বলতাঃ ত্বীন ফল খাওয়ার সাথে সাথে মুখে ব্যবহার করা যায়। এই ফলটি ব্লেন্ড করে মুখে ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় এবং লাবণ্যময়ী হয়ে ওঠে। এছাড়াও ত্বকের ব্রণ , মেসতা দূর করতেও খুবই কার্যকরী।

চর্ম রোগের ঔষধঃ চর্ম রোগের মহা ঔষধ হিসেবে কাজ করে সর্বাধিক গুনাগুন সম্পন্ন এই ত্বীন ফল। এটি বেটে শরীরের উপর লাগিয়ে রাখলে চর্ম রোগের খুব ভালো সমাধান পাওয়া যায়। কবিরাজি ওষুধ হিসেবে কাজ করে থাকে এই ফল।

শারীরিক দুর্বলতা দূর করেঃ দুর্বল শরীর কর্মক্ষমতাকে দাবিয়ে রাখে এবং মাথা ঘুরা সহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। ত্বীন ফলে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান এবং ভিটামিন। নিয়মিত ত্বীন ফল খেলে শারীরিক দুর্বলতা দূর করে শরীরকে পরিপূর্ণভাবে সুস্থ সবল এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

ডায়াবেটিসের সমস্যঃ ত্বীন ফলের রস ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ওষুধ হিসেবে কাজ করে। খালি পেটে ত্বীন ফলের রস খেলে ডায়াবেটিস ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রনে চলে আসে।

গলা ব্যথা উপশম করেঃ ত্বীন ফল গলা ব্যথা দূর করতে অত্যন্ত কার্যকরী। এই ফলটি যেমন গলা ব্যথা দূর করে তেমনি চিরতরে গলা ব্যথাকে দূর করতে এর কার্যকারিতা বহু গুণ। আবার যাদের টনসিলের সমস্যা আছে সে সমস্যা ও দূর হয়ে যায় তিন ফল খেলে।

ত্বকের বয়সের ছাপ দূর করেঃ বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ত্বকের বিভিন্ন ধরনের দাগ বা ছাপ তৈরি হয়। নিয়মিত তিন ফল খেলে বা মুখে তিন ফল ব্যবহার করলে ত্বকের বয়সের ছাপ পরতে দেয় না হলে ত্বকের তারুণ্য বজায় থাকে।

ত্বীন ফল খাওয়ার নিয়ম

বিভিন্ন ধরনের ফল মিক্স করে ড্রাই ফুড তৈরি করা হয় সেগুলোর মধ্যে ত্বীন ফলো থাকে। মধুর সাথে মিশিয়ে এই দিন ফল খাওয়া হয়ে থাকে। পাকা এবং শুখিয়ে ত্বীন ফল খাওয়া যায়। ত্বীন ফল চামড়া ও বিচি সহ খেতে হয় এতে করে ভালো উপকার পাওয়া যায়। কাঁচা ত্বীন ফল বিভিন্নভাবে রান্না করেও খাওয়া যায়। 

দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষণ করতে চাইলে কয়েক দিন রোদে শুকিয়ে তারপর সংরক্ষণ করতে হবে। ত্বীন ফল খাওয়া শরীরের জন্য নানা উপকারী। এর ফল যদি নিয়ম করে খাওয়া যায় তাহলে শরীরে বিভিন্ন পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করে।

ত্বীন ফল সম্পর্কিত কয়েকটি প্রশ্ন এবং উত্তর


প্রশ্নঃ ত্বীন ফলের বাংলা নাম কি?

উত্তরঃ ত্বীন ফলের আরবি নাম ত্বীন এবং এই ফলকে বাংলাদেশ ডুমুর বলে চেনে থাকে থাকে।

প্রশ্নঃ ত্বীন ফল বেশি খেলে কি হয়?

উত্তর ঃত্বীন ফল বেশি খেলে পেতে থাকা উন্নত পুষ্টি উপাদান শরীর কি সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এবং ওজন বাড়তে সহায়তা করে।

ত্বীন ফল অর্থ কি

ত্বীন ফলের অর্থ হচ্ছে ডুমুর। এটি ডুমুর জাতীয় সুস্বাদু ও রসালো একটি ফল। এর ইংরেজি নাম হচ্ছে Dride fig এবং বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Ficus carica এই ফলকে আবার হিন্দি, মারাঠি, উর্দু ও ফার্সি ভাষায় আনজির বলা হয়ে থাকে। বর্তমানে এটি দেশের বিভিন্ন জায়গায় চাষ করা হচ্ছে। এই ফলের চাহিদা রয়েছে প্রচুর এবং ব্যবসায় খুব লাভজনক।

আকৃতিতে এই ফলটি কাক ডুমুরের চেয়েও একটু বড়। এই ফলটি অনেকেরই পছন্দের তালিকায়। কারণ এই ফলটি খেতে খুবই মিষ্টি। এছাড়াও এই ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ। এই ফলের প্রায় ৮০০ প্রজাতি রয়েছে।

ত্বীন ফলের চারা কোথায় পাওয়া যায়

ডুমুরের চেয়েও আকারে বড় এই ফলটি ত্বীন ফল নামে পরিচিত। এই এ ফলের গাছটির চারা মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানি হয়ে থাকে বাংলাদেশে। চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে দেশেও এখন হচ্ছে বাণিজ্যিক চারা উৎপাদন। ভালো চারা তৈরি করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে গুটিকলম পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে চারা গুলো যেমন ভালো হয় তেমনি ফলও ভালো ধরে।

ত্বীন ফলের বীজ থেকে ভালো চারা না হওয়ার কারণে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকে। থেকে আমদানি হলেও এখন ত্বীন ফলের চারা গাজীপুরের শ্রীপুরে পাওয়া যায়। এছাড়া দেশের বাইরে এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে এবং অস্ট্রেলিয়ায় এর চারা পাওয়া যায়।

ত্বীন ফলের দাম এবং গাছের দাম কত

অনেকে প্রশ্ন করেন ত্বীন ফলের দাম এবং গাছের দাম নিয়ে। এই পোষ্টের মাধ্যমে আমরা ফলের দাম এবং গাছের দাম নিয়ে আলোচনা করব।

ত্বীন ফলের দাম

ত্বীন ফল বেশির ভাগ দেশের বাইরে থেকে আমদানি হয়ে আসে। সে ক্ষেত্রে এর আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য দাঁড়ায় প্রতি ১ কেজিতে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা এবং ৫০০ গ্রামের জন্য খরচ হয় ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা। কিন্তু বাংলাদেশে যারা এ ফল চাষ করে তারা প্রতি কেজিতে দাম নেয় ১০০০ হাজার টাকা এবং ৫০০ গ্রামে নেয় ৫০০ টাকা।

গাছের দাম কত

জায়গা বা ফলের ভিত্তিতে ত্বীন ফলের গাছের দাম আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। যেমন
  • মালয়েশিয়ান ত্বীন গাছের দাম ৮০০ টাকা
  • মিশরীয় ত্বীন গাছের দাম ১০০০ টাকা
  • দেশে যেগুলো গাছ বিক্রি হয় তার দাম ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা।

ত্বীন ফল চাষ পদ্ধতি

ফলের বীজ থেকে যে চারা তৈরি হয় সেগুলো থেকে গাছ এবং ফলন ভালো হয় না। ফলন ভালো পাওয়ার জন্য এবং মাতৃগুণ সম্পন্ন চারা উৎপাদন করার জন্য গুটিকলম পদ্ধতি ব্যবহার করতে হয়। গুটি কলম থেকে চারা তৈরি করে সেটি চাষ করলে চার থেকে পাঁচ মাসের মধ্যে ফল পাওয়া যায়। টবের মধ্যেও এই ত্বীন ফলের গাছ চাষ করা যায়। তবে এক বছর বা তার কিছু সময় পর এর মাটি কিছুটা পরিবর্তন করতে হয়।

ত্বীন ফল নিয়ে হাদিস

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) যে দুটি ফল পছন্দ করতেন তার মধ্যে একটি হল ত্বীন ফল। এই ফলের নামে কুরআনে সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ আছে এবং কুরআনে ১১৪ টি সূরার মধ্যে ৯৫ তম সুরা এটি। সূরা ত্বিনের প্রথম আয়াতে যে দুটি ফলের কথা উল্লেখ আছে সে দুটি ফল হল ত্বীন ও জয়তুন। এটি আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর খুবই পছন্দের একটি ফল ছিল। এই দুটি ফলের গাছকে মোবারক গাছ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছিল।

মন্তব্য

ত্বীন ফল হচ্ছে অত্যন্ত বরকতময় একটি ফল। এই ফলে আল্লাহর অসংখ্য নিয়ামত রয়েছে এবং এ ফলের নামে আল্লাহ তায়ালা সূরা নাযিল করেছেন। আমাদের মহানবী (সাঃ) এই ফলটি অনেক পছন্দ করতেন। আপনারা যদি না খেয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই এটি খেয়ে দেখবেন এটি খেতে খুব সুস্বাদু একটি ফল।

প্রিয় পাঠক আপনার যদি এই পোস্টটি পড়ে ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনদের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url