অবিবাহিত মেয়েদের মাসিক বন্ধ হওয়ার কারন - অবিবাহিত মেয়েদের মাসিক বন্ধ হলে করণীয়

 প্রিয় পাঠক, আপনি কি অবিবাহিত মেয়েদের মাসিক বন্ধ হওয়ার কারন সম্পর্কে খুঁজে পাননি? আসুন আজ আমরা আপনাকে এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে অবিবাহিত মেয়েদের মাসিক বন্ধ হওয়ার কারন ও অবিবাহিত মেয়েদের মাসিক বন্ধ হলে করণীয় কি এ বিষয়ে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

অবিবাহিত মেয়েদের মাসিক বন্ধ হওয়ার কারন
এই আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন মাসিক বন্ধ হলে কি করবেন, বন্ধ মাসিক চালু করার ঘরোয়া উপায়, মাসিক হওয়ার ট্যাবলেট এর নাম এবং কি করলে মাসিক নিয়মিত হবে।

ভূমিকা

মেয়েদের অনিয়মিত মাসিক বর্তমানে খুবই পরিচিত একটি সমস্যা। ১৪% থেকে ২৫% মহিলাদেরই অনিয়মিত মাসিক চক্র থাকে। প্রত্যেক অবিবাহিত বা বিবাহিত মেয়েদের নিয়মিত মাসিক হওয়া খুবই জরুরী। অনিয়মিত মাসিক শরীরে বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করে। অনিয়মিত মাসিক বলতে আমরা বুঝি ২৫ দিনের আগে এবং ৩৫ দিনের পরে হওয়া। মাসিক নিয়মিত না হওয়া বা বন্ধ হওয়া দুশ্চিন্তার কারণ বিশেষ করে অবিবাহিত মেয়েদের ক্ষেত্রে।


কিন্তু চিকিৎসকরা অবিবাহিত মেয়েদের মাসিক নিয়মিত না হওয়া বা মাসিক বন্ধ হওয়া একটি সাধারণ ব্যাপার মনে করেন। তারা বলেন মাসিক শুরু হওয়ার প্রথম কয়েক বছর এরকম সমস্যা হতেই পারে এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অবিবাহিত মেয়েদের শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে মাসিক বন্ধ হয়ে থাকে যেমন- ডিম্বাশয়ের ত্রুটির কারণে অপুষ্টি শারীরিক স্থুলতা ইত্যাদি।

অবিবাহিত মেয়েদের মাসিক বন্ধ হওয়ার কারন

মাসিক বন্ধ হওয়া বা বেশি হওয়া এই দুটো সমস্যাকে আমরা অনিয়মিত মাসিক বলে থাকি। অবিবাহিত মেয়েদের শরীরে বিভিন্ন সমস্যার কারণে মাসিক বন্ধ হয়ে যেতে পারে। অবিবাহিত মেয়েদের মাসিক বন্ধ হওয়ার সে কারণগুলো জানা আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরী। কারণগুলো হলো-

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমঃ পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম সংক্ষেপে (POS) বলে এটি মহিলাদের একটি হরমোন জনিত ব্যাধি। পিরিয়ড হওয়ার পর থেকে মেনোপজ এর সময় পর্যন্ত এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম রোগের কারণে মেয়েদের পিরিয়ডের বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হয়। বিশেষ করে মাসিক বন্ধ হওয়া এবং অতিরিক্ত হওয়া।

ওজন বৃদ্ধি বা কম হওয়াঃ অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির কারণে অবিবাহিত মেয়েদের মাসিক বন্ধ হয়ে যেতে পারে। অনুরূপভাবে ওজন অতিরিক্ত হ্রাস পেলেও মাসিক বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

রক্তস্বল্পতাঃ রক্তস্বল্পতা মাসিক বন্ধ হওয়ার আরেকটি কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শরীরে পরিমাণমতো রক্ত না থাকার কারণে সময় মতো মাসিক হয় না বা মাসিক বন্ধ হয়ে যায়।

মানসিক চাপঃ মাসিক মস্তিষ্ক থেকে নিয়ন্ত্রিত হয় সেজন্য অতিরিক্ত মানসিক চাপ মাসিক বন্ধ হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ একটি কারণ। মানসিক চাপ বৃদ্ধির কারণে হরমোন ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে সেজন্য অতিরিক্ত মাসিক বা মাসিক বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

হরমোনের সমস্যাঃ হরমোনের সমস্যা মাসিক বন্ধ হওয়ার অন্যতম আরও একটি কারণ। হরমোনের অসামঞ্জস্যতা থাকলে মাসিকের সমস্যা তৈরি হয় এবং হরমোনের সমস্যা বাড়লে মেয়েদের ছেলেদের মত চুল গজায় ওজন বেড়ে যায় এবং থাইরয়েডের সমস্যা হতে পারে।

ডিম্বাশয় এর অপরিপক্কতাঃ অল্প বয়স্ক মেয়েদের ডিম্বাশয় অপরিপক্ক থাকে ফলে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের তারতম্য হয়। সে কারণে অবিবাহিত মেয়েদের মাসিক বন্ধ হয়ে যায়।

অতিরিক্ত শারীরিক ব্যায়ামঃ অতিরিক্ত শারীরিক ব্যায়ামও একটি অবিবাহিত মেয়েদের মাসিক বন্ধ মূল কারণ।

অবিবাহিত মেয়েদের মাসিক বন্ধ হলে করণীয়

মাসিক বন্ধ হলে করণীয়  কি এটি সবার আগে জানা জরুরী।মাসিক বন্ধ হওয়াকে আ্যমনোরিয়া বলা হয়। এই আ্যমনোরিয়া থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মেয়েদের দৈনন্দিন জীবন ব্যবস্থায় কিছু পরিবর্তন আনতে হবে যেমন ধরুন পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়া, শারীরিক কার্যকলাপ ঠিক রাখা, হরমোনজনিত সমস্যা ঔষধ বা থেরাপির মাধ্যমে দূর করা , মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকা, পরিমাণমতো পানি পান করা. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা , তেল চর্বিযুক্ত খাবার না খাওয়া, শারীরিক ব্যায়াম ও বিশ্রামের ভারসাম্য বজায় রাখা, শরীরে ভিটামিন, প্রোটিন ও আমিনো ফ্যাটি এসিডের মাত্রা ঠিক রাখা এবং চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া।

বন্ধ মাসিক চালু করার ঘরোয়া উপায়

বন্ধু মাসিক চালু করার কিছু ঘরোয়া উপায় আছে । তবে যারা জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল, লাইজেশন, বা জন্মনিয়ন্ত্রণে ইনজেকশন গ্রহণ করেন তারা এই উপায় গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন।


কুসুম কুসুম গরম পানি বা দুধঃ মাসিক বন্ধ হয়ে গেলে কুসুম কুসুম গরম পানি অথবা দুধ খেলে বন্ধ থাকা মাসিক খুব তাড়াতাড়ি চালু হয়ে যাবে। সকালে খালি পেটে একগ্লাস কুসুম কুসুম গরম দুধ বা পানি এবং রাতে খাওয়ার আধা ঘন্টা পরে কুসুম কুসুম গরম পানি অথবা দুধ পান করলে এ সমস্যা দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।

পাকা পেঁপে ও আনারসঃ বন্ধ মাসিক চালু করতে দুটি ফল যেমন পাকা পেঁপে ও আনারস খুব দ্রুত কাজ করে। সকালে ও রাতে এক বাটি করে পাকা পেঁপে ও আনারস খেলে খুব তাড়াতাড়ি বন্ধ মাসিক চালু হয়ে যাবে।

কাঁচা হলুদঃ কাঁচা হলুদ হল একটি মসলা জাতীয় দ্রব্য কিন্তু প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত এটি বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসায় ব্যবহার হয়ে থাকে। এটি হরমোনের ব্যালেন্স ঠিক রাখে ফলে মাসিক নিয়মিত হয়। মাসিক নিয়মিত হলে তারপর এগুলো খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে।

এলোভেরাঃ অ্যালোভেরার গুনাগুন অনেক, যা বলে শেষ করা যাবে না। চুল ও ত্বকের যত্নের পাশাপাশি এলোভেরা মাসিক নিয়মিত করার অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন খালি পেটে এক চামচ এলোভেরার রস মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে মাসিকের সমস্যা দূর হয়ে যায়। এলোভেরা হরমোন ঠিক রাখতে সাহায্য করে। মাসিক শুরু হয়ে গেলে অ্যালোভেরা খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে কারণ এই সময়ে এলোভেরার কারণে জরায়ুর সংকোচন হতে পারে।

আদা, জিরা ও দারুচিনিঃ আদা, জিরা ও দারুচিনি এই মসলা জাতীয় দ্রব্য বন্ধ মাসিক চালু এবং মাসিক নিয়মিত করতে খুবই কার্যকরী। এগুলো ভরা পেটে খেতে হবে এবং এগুলোর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। পিরিয়ডের সময় ব্যথা হলে এগুলো ব্যথা নাশক ওষুধের মত কাজ করে।

মাসিক হওয়ার ট্যাবলেট এর নাম

শরীরের সব কিছু ঠিকঠাক থাকলেও অনেক সময় নিয়মিত মাসিক হয় না। নিয়মিত মাসিক না হলে বসে না থেকে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং পরামর্শ অনুযায়ী মাসিক হওয়ার ট্যাবলেট বা ওষুধ খেতে হবে। তবে অবিবাহিত মেয়েদের মাসিক বন্ধ সঠিক কারণ কি এগুলো ঔষুধ প্রয়োগ করতে হবে। কি কি ট্যাবলেট খেলে মাসিক নিয়মিত হবে তা নিচে দেওয়া হল-
  • নরমেন্স
  • ইথিনোর
  • মেনোজিয়া
  • মেনোরাল
  • রিমেনস ইত্যাদি।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক , আপনি উপরের বিষয়বস্তু পড়ে মেয়েদের মাসিক কি কারনে বন্ধ হয় এ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেয়েছেন বলে আমার মনে হয়। এই পোস্টটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার কাছের মানুষ এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url