বাংলাদেশের জাতীয় খেলা কাবাডির ইতিহাস সম্পর্কে জেনে নিন

প্রিয় পাঠক আপনি কি বাংলাদেশ জাতীয় খেলা কাবাডির ইতিহাস সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে আসুন এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের জাতীয় খেলা কাবাডি’র ইতিহাস এবং কাবাডি খেলার নিয়ম সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
বাংলাদেশের জাতীয় খেলা কাবাডির ইতিহাস
এই আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন কাবাডি খেলার সময়, কতজন খেলোয়াড় নিয়ে কাবাডি খেলতে হয় এবং কাবাডি খেলার উপকারিতা ইত্যাদি।

ভূমিকা

বাংলাদেশের জনপ্রিয় একটি খেলা হচ্ছে কাবাডি। এই খেলা গ্রামাঞ্চলে বেশি দেখা যায়। কাবাডি খেলা হচ্ছে বাংলাদেশের জাতীয় খেলা। অতীতে এ খেলার নাম ছিল হাডুডু খেলা। পরবর্তীতে এই খেলা নাম পরিবর্তন করা হয় এবং এ খেলাকে মর্যাদা দেওয়া হয় বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হিসেবে। কাবাডি খেলা গ্রাম বাংলায় অনেক জনপ্রিয়তা রয়েছে। এ খেলা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বেশ সুনাম অর্জন রয়েছে।


এ খেলার উন্নয়নের জন্য ১৯৭৩ সালে এমোচার কাবাডি ফেডারেশন নামে একটি সংগঠন তৈরি করা হয়। এই সংগঠনটি সার্বিকভাবে কাবাডি খেলার উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে। এছাড়া সংগঠনটি খেলার নিয়ম-কানুন তৈরি করে। বাংলাদেশের প্রথম কাবাডি খেলার আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় ১৯৭৪ সালে। বাংলাদেশের সাথে এই খেলায় প্রথম অংশগ্রহণ করেছিল ভারত।

কাবাডি খেলার ইতিহাস

কাবাডি খেলা উপমহাদেশের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় খেলা। বর্তমানে জনপ্রিয়তা অর্জন করলেও এ খেলা অনেক প্রাচীনতম। প্রাচীনকাল থেকে মানুষ এ খেলা খেলে এসছে। বিভিন্ন অঞ্চলে এই খেলার নাম বিভিন্ন রকম। এ খেলাটি মূলত গ্রাম অঞ্চলের খেলা। সেজন্য এই খেলাকে আঞ্চলিক খেলাও বলা হয়ে থাকে। অঞ্চল ভিত্তিক খেলা হওয়ার কারণে এই খেলা তেমন কোন নিয়ম কারণ ছিল না।

আদিম যুগের মানুষ যখন খাদ্য সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন জায়গায় একসাথে বা দলবদ্ধ হয়ে যেতেন তখন হিংস্র বন্যপ্রাণী থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য যে কৌশল অবলম্বন করতেন সেখান থেকে সূচনা হয়েছিল কাবাডি খেলার। এছাড়াও এই খেলার উৎপত্তি দিয়ে অনেকের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ধারণা মতবাদ শোনা যেত।

কাবাডি খেলার নিয়ম

প্রত্যেক খেলারই একটি নিয়ম আছে এবং সে নিয়ম মেনে খেলতে হয়। কাবাডি খেলাও তার ব্যতিক্রম নয়। কাবাডি খেলাতেও সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনেই খেলতে হয়। এই খেলার যেসব নিয়ম আছে সে নিয়মগুলো হল-
  • কাবাডি খেলায় দুইটি দল অংশগ্রহণ করে। এই দুইটি দলের কোন দল খেলা আগে শুরু করবে তা নির্ধারণ করার জন্য দুইটি দলের অধিনায়ক মিলে রেফারির মাধ্যমে একটি কয়েন দিয়ে টস করে।
  • কাবাডি খেলার জন্য নির্ধারিত মাঠটি লম্বাতে ১২.৫০ এবং চওড়াতে ১০ মিটার হতে হবে।
  • এই খেলা খেলতে সব সময় নির্ধারিত মাঠের মধ্যে অবস্থান করতে হবে।
  • প্রতিটি দলের ১২ জন করে খেলোয়াড় অংশগ্রহণ করবে এবং সাতজন করে খেলোয়াড় সরাসরি খেলবে বা মাঠে নামবে। আর বাকি পাঁচজন অতিরক্ত খেলোয়ার হিসেবে মাঠের বাইরে অবস্থান করবে।
  • কাবাডি খেলার নিয়ম অনুসারে খেলোয়ারদের একটি নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে যে দলের পয়েন্ট বেশি হবে সে দলকে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
  • খেলার নিয়ম অনুসারে যে খেলোয়াড় মাঠের বাইরে চলে যাবে তখন তাকে আউট করে দেয়া হবে। এ খেলায় নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে খেলতে হয়।
  • এক পক্ষের খেলোয়াড় দম নিয়ে বা কাবাডি কাবাডি বলে যদি বিরোধীদলের কোন খেলোয়াড়কে স্পর্শ করে তাহলে সে আউট বলে গণ্য হবে। এভাবে কাবাডি কাবাডি বলে এক নিঃশ্বাসে যতজনকে স্পর্শ করবে আউট বলে গণ্য হবে। প্রত্যেকটি আউট করার জন্য অ্যাপয়েন্ট করে যুক্ত হবে।
  • কোনভাবে যে দল নিয়ে অন্য দলকে স্পর্শ করার চেষ্টা করবে তার দম যদি শেষ হয়ে যায় বিরোধীদলের খেলোয়াড়রা তাকে স্পর্শ করলে সেও আউট হয়ে যাবে।
  • এই দম নেওয়া মধ্য রেখা থেকে শুরু করতে হবে। কাবাডি কাবাডি বলে এক নিঃশ্বাসে বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়দের স্পর্শ করার জন্য একজন করে খেলোয়াড় যেতে পারবে। একসাথে অনেকজন খেলোয়াড় দম নিয়ে বিপক্ষ দলকে স্পর্শ করার জন্য যেতে পারবেনা।

কাবাডি খেলার উপকারিতা

খেলাধুলা করলে সব সময় শারীরিক এবং মানসিক ব্যায়াম দুটোই হয়ে থাকে। একজন মানুষকে সুস্থ থাকার জন্য নিয়মিত ব্যায়ামের প্রয়োজন হয়। খেলাধুলার মাধ্যমে শারীরিক ব্যায়াম হয়ে থাকে। কাবাডি এমন একটি খেলা যা শারীরিক ব্যায়ামের একটি মাধ্যম। কাবাডি খেললে যে সকল উপকারিতা হয় সেগুলো হল-
  • একজন মানুষের সুস্থতার জন্য শরীর এবং মন সুস্থ থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন। কাবাডি খেলার মাধ্যমে শরীরের যেভাবে ব্যায়াম হয় সে কারণে শরীর সুস্থ থাকে। আবার খেলাধুলা করলে ভালো হয়ে যায়।
  • কাবাডি খেলার মাধ্যমে বিভিন্ন রকমের শারীরিক ব্যায়াম হয় যার ফলে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
  • নিয়মিত কাবাডি খেললে শরীরের এনার্জি বৃদ্ধি পায় এবং শারীরিক সুস্থতা বজায় থাকে।
  • দেহ গঠনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে খেলাধুলা। সেজন্য নিয়মিত খেলাধুলা করা শিশু ও কিশোরদের জন্য অত্যন্ত জরুরী।
  • খেলাধুলা করলে শুধু শরীর ভালো থাকে না বরং মানসিক চাপ কমাতেও সাহায্য করে। কারণ খেলাধুলা করলে মন প্রফুল্ল থাকে যা মানুষের চাপ থেকে দূরে রাখে।
  • সময় কাটানোর সঠিক মাধ্যম হচ্ছে খেলাধুলা। কাবাডি খেলার মাধ্যমে সময় সুন্দরভাবে কাটানো সম্ভব হয়।

কাবাডি খেলা সম্পর্কিত কয়েকটি প্রশ্ন এবং উত্তর

প্রশ্নঃ কাবাডি খেলা বাংলাদেশের কত সালে জাতীয় খেলার মর্যাদা লাভ করে?

উত্তরঃ ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের আবার এই খেলা জাতীয় খেলার মর্যাদা লাভ করে। জাতীয় মর্যাদা লাভ করার পূর্বেও এ খেলার যথেষ্ট জনপ্রিয়তা ছিল বাংলাদেশ।

প্রশ্নঃ কাবাডি খেলা কে আবিষ্কার করেন?

উত্তরঃ দক্ষিণ এশিয়ার জনপ্রিয় খেলাধুলার মধ্যে একটি হলো কাবাডি। সম্পূর্ণ দক্ষিণ এশিয়ায় এর প্রচলন থাকলেও এ খেলার আবিষ্কার বা উৎপত্তি হয় ভারতের পাঞ্জাবে। মহাভারতের ইতিহাসে উল্লেখ্য যে অভিমুন্য তার শত্রুপক্ষের চক্রভেদ করার ব্যর্থ প্রচেষ্টায় ধারণা থেকে এ খেলার সৃষ্টি হয়। এই খেলার আরো একটি উৎপত্তি ধারণা করা হয় যে আদম যুগের মানুষ বন্যপ্রাণী হতে নিজেদের রক্ষা করার জন্য যে কৌশল তৈরি করেছিলেন সেখান থেকেই এই খেলার সৃষ্টি।

প্রশ্নঃ কাবাডি কত সময়ের খেলা?

উত্তরঃ কাবাডি খেলার নিয়ম অনুসারে খেলোয়ারদের মধ্যে নির্দিষ্ট একটি নিয়ম বেঁধে দেওয়া হয়। এ নিয়ম অনুসারে পুরুষদের জন্য ২৫ মিনিট এবং মহিলা খেলোয়াড়দের জন্য ২০ মিনিট করা হয়েছে।

কাবাডি খেলায় খেলোয়াড় সংখ্যা কতজন

কাবাডি খেলায় দুটি দল অংশগ্রহণ করে।কাবাডি খেলায় অংশগ্রহণের জন্য উভয় দলের খেলোয়াড় নিতে হয় ১২ জন করে। প্রত্যেক দলের সাতজন করে খেলোয়াড় মাঠে নামে এবং বাকি পাঁচজন খেলোয়াড় অতিরিক্ত খেলোয়াড় হিসেবে মাঠের বাইরে অবস্থান করে। এই পাঁচজন খেলোয়াড়কে অতিরিক্ত বিকল্প খেলোয়াড় হিসেবে রাখা হয়। এই খেলাটি খেলতেও যেমন আনন্দের তেমনি দেখতে অনেক আনন্দ পাওয়া যায়।

কাবাডি খেলার সময়

কাবাডি খেলা বাংলাদেশে অনেক জনপ্রিয় খেলা। এই জনপ্রিয়তায় কারণে এই খেলা দেশের জাতীয় খেলা হিসেবে মর্যাদা পেয়েছে। খেলোয়াররা কাবাডি খেলা যেকোনো সময়ে খেলে থাকে। তবে এই খেলা বেশিরভাগ সময় কোন উৎসব বা পার্বনে খেলে থাকে। এ খেলা মূলত কিশোর এবং প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে ও মেয়েরা খেলে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন সময় প্রতিযোগিতামূলকভাবে দেশ-বিদেশে বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ খেলে হয়ে থাকে।


কাবাডি খেলা যেহেতু গ্রাম অঞ্চলের খেলা সেহেতু এ খেলাটি গ্রামের বিভিন্ন উৎসব বা অনুষ্ঠানে হয়ে থাকে। এটি গ্রাম অঞ্চলের খেলা হলেও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্র বহু জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে এবং বহু দেশের সাথে কাবাডি খেলে অনেক সুনাম ও অর্জন করেছ। একটু ধীরে হলেও এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের জাতীয় এবং জনপ্রিয় খেলা কাবাডি।

বাংলাদেশের জাতীয় খেলা কাবাডি নিয়ে প্রতিবেদন

কাবাডি খেলা হচ্ছে বাংলাদেশের জাতীয় খেলা। এই খেলার অধিক সম্পর্কে জানতে হলে দূরে তাকাতে হবে বহু বছর পেছনে। কাবাডি খেলার উৎপত্তি হয়েছিল ভারতীয় উপমহাদেশে। এ উপমহাদেশে প্রচলন অনেক বেশি। এর উৎপত্তি ভারতে হলেও বাংলাদেশ এর যথেষ্ট জনপ্রিয়তা রয়েছে কারণ এটি বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হিসেবে পরিচিত।

কাবাডি খেলার আরেক নাম হল হা-ডু-ডু। বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় কাবাডি খেলা কে হা-ডু-ডু খেলা হিসেবে চিনে থাকে। তবে হা-ডু-ডু এবং কাবাডি খেলার মধ্যে সামান্য কিছু পার্থক্য বিদ্যমান। যেমন হা-ডু-ডু খেলার তেমন বিধিবদ্ধ কোন নিয়ম নেই অপরদিকে কাবাডি খেলা সম্পূর্ণ নিয়মতান্ত্রিকভাবে খেলতে হয়।

১৯৭২ সালে কাবাডি খেলাকে জাতীয় খেলার মর্যাদা দেওয়া হয়। এ খেলার উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালে এমোচার কাবাডি ফেডারেশন গঠিত হয় যেটি সার্বিকভাবে কাবাডি খেলার উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে। এই খেলা ধীরে ধীরে বাংলাদেশের জনপ্রিয়তার বাইরে আন্তর্জাতিকভাবেও অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

বাংলাদেশের ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য এই খেলাটির যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। কারণ এই খেলাটি প্রাচীনকাল থেকে বর্তমানকাল পর্যন্ত সবার কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খেলা।

লেখকের শেষ কথা

প্রাচীনকাল থেকে বর্তমানকাল পর্যন্ত বহু বছর ধরে এই খেলা প্রচলিত আছে। দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলার যথেষ্ট জনপ্রিয়তা রয়েছে। কাবাডি খেলা বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী খেলাও বটে। ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য আমাদের প্রত্যেকেরই কাবাডি খেলা ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে। প্রিয় পাঠক, আপনার যদি এই আর্টিকেলটি ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব এবং পরিবার পরিজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url