নাগরিক সেবা গ্রহণে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আপনি কি নাগরিক সেবা গ্রহণে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক। আজ আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাকে নাগরিক সেবা গ্রহণে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করব। আপনি যদি এই বিষয় সম্পর্কে জানতে চান এই পোষ্টটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
নাগরিক সেবা গ্রহণে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার
এটি পড়লে আরও জানতে পারবেন সমস্যা সমাধানে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার, নাগরিক সেবা ও ই-কমার্সের সুবিধা এবং ডিজিটাল প্রযুক্তির অন্যান্য আরও ব্যবহার ইত্যাদি।

ভূমিকা

দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের শুরুতে ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মানের লক্ষ্যে রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের ঘোষনা দেন। ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে শুরু হয়েছে। সরকারে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইউনিয়ন পরিষদ পর্যায় থেকে শুরু করে মন্ত্রিপরিষদ পর্যন্ত এই সেবা কাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে।


ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার মূল লক্ষ হচ্ছে জাতি ধর্ম বর্ণ পেশা শ্রেণী নির্বিশেষে সকল মানুষের কাছে খুব সহজে এবং দ্রুত গতিতে সরকারি সেবা পৌঁছে দেওয়া। ডিজিটাইজেশন করার মাধ্যমে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে রাখতে সক্ষম হবে। সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশ ডিজিটাইজেশন হওয়ার সাথে সাথে দেশের নাগরিক এর সুফল ভোগ করতে শুরু করবে।

এ জন্য ইউনিয়ন পরিষদ ও স্থানীয় সরকার এর সকল পর্যায়ে সারাদেশে প্রায় ৭৬০০টি ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়। এ ডিজিটাল সেন্টারগুলো থেকে প্রায় তিনশতাধিক নাগরিক সেবা প্রদান করা হয়। জাতীয় তথ্য বাতায়ন নামক একটি সরকারি সেবা প্লাটফর্ম নির্মাণ করা হয়েছে যেখানে একই যায়গায় বসে দেশের সকল সেবা গ্রহণ করতে পারবেন।

এছাড়াও মোবাইল থেকে ৯৯৯ নম্বর এ কল করে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স সেবা এবং ৩৩৩ নম্বর এ ফোন করে তথ্য বাতায়নের যাবতীয় তথ্য সেবা ও অসহায় মানুষ সরকারী সহায়তা পাচ্ছেন। এগুলো হেল্পলাইনে ফোন করে প্রায় চার হাজার ডাক্তারের কাছ থেকে ৪ লক্ষাধিক মানুষ টেলিমেডিসিনের সাহায্য নিয়েছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে একটি ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তিরিত করেছে সরকার। যার ফলশ্রুতিতে কোভিড-১৯ এ মহামারিতে বিশের অনেক দেশের উন্নয়নে স্থবিরতা নামলেও বাংলাশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা বেগবান রয়েছে। এসময় ঘরে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে দেশের নাগরিক প্রায় সকল সেবা গ্রহণ করতে পেরেছেন।

এই ডিজিটাল সেবা গ্রহণ করে করনাকালীন সময়ে ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়া, অফিস, ব্যাংক, সকল ধরণের সভা সেমিনার, কনফারেন্স সকল কিছুই ঘরে বসেই সম্ভব হয়েছে। বর্তমান সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ হতে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত করার ঘোষণা দিয়েছেন। এলক্ষ্যে সরকার ৪টি ভিত্তি নির্ধারণ করেছেন।

তা হলো স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট এবং স্মার্ট সোইটি। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও আইসিটি বিভাগ কর্তৃক বাস্তবান ও United Nations Development Programme (ইউএনডিপি) এর সহায়তায় পরিচালিত Aspire to Innovate (এটুআই) এর মাধ্যমে নাগরিক সেবা সহজীকরণে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।

ভিশন-২০৪১ স্মার্ট বাংলাদেশের অংশ স্মার্ট সিটি ও স্মার্ট ভিলেজ বিনির্মাণে সার্বিক সহযোগিতা করছে এই এটুআই।

নাগরিক সেবা গ্রহণে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার

বর্তমান যুগ ডিজিটালের যুগ। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষ ঘরে বসে অনেক কিছু করে থাকে। নাগরিক সেবা গ্রহণ ও ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার অনেক বেশি। ডিজিটাল প্রযুক্তির ফলে নাগরিক খুব সহজেই ঘরে বসে বিভিন্ন ধরনের ই-সেবা গ্রহণ করতে পারে। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে নাগরিক যে সকল সেবা গ্রহণ করতে পারে সেগুলো হল-
  • ট্রেড লাইসেন্স সনদ এর আবেদন
  • ওয়ারিশ সনদের আবেদন
  • নাগরিক সনদের আবেদন
  • জাতীয় সনদপত্রের সংশোধন ও প্রত্যয়ন
  • জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন
  • স্বাস্থ্য সেবা
  • কৃষি সেবা
  • শিক্ষা ব্যবস্থা
  • বিভিন্ন ধরনের বিল ও ফি পরিশোধ করা যেমন- বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, ইন্টারনেট, হোল্ডিং ট্যাক্স, জমির খাজনাসহ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি ইত্যাদি।

সমস্যা সমাধানে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা লেগেই থাকে। সরাসরি যে সমস্যাগুলো সমাধান করা অনেক সময় সম্ভব হয় না। ডিজিটাল প্রযুক্তির উন্নতির ফলে বর্তমানে এ সমস্যাগুলো ঘরে বসে সমাধান করা যায়। নাগরিক সেবা গ্রহণে ক্ষেত্রে কোন সমস্যা হলে প্রযুক্তি ব্যবহার করে খুব সহজে এবং অল্প সময়ে সে সমস্যার সমাধান হয়ে থাকে।


ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার দিন দিন এমনভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে যে মানুষ চাইলে যে কোন সমস্যার সমাধান প্রযুক্তির মাধ্যমে করতে পারছে। ডিজিটাল প্রযুক্তি মূলত ইন্টারনেট ভিত্তিক। ইন্টারনেট সুবিধা কাজে লাগিয়ে মানুষ এ সকল সমস্যার সমাধান করে থাকে। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে যে সকল সমস্যার সমাধান হয়ে থাকে সেগুলো হল-
  • ধরুন একজন মানুষ হঠাৎ অসুস্থ হলো তাকে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের কাছ যাওয়া সময় সাপেক্ষ ব্যপার। সে সময় ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঘরে বসে চিকিৎসকের পরামর্শ পাওয়া যাবে।
  • বিদ্যুৎ বিল সহ সকল ধরনের ইউটিলিটি বিল ঘরে বসে পরিশোধ করা যায় সে ক্ষেত্রে উক্ত প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না এবং বিল পরিষদের বিলম্ব হয় না।
  • প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিপদজনক কোন কিছু মোকাবেলা করা খুব সহজ হয়।
  • হঠাৎ করে কাজের প্রয়োজনে কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন হলে সেখানে যাওয়ার জন্য ঘরে বসে অনলাইনে যানবাহনের টিকিট কাটা যায়। তাছাড়া যাতায়াতসহ কাউন্টারে গিয়ে টিকিট কাটার জন্য লাইন ধরে দাঁড়ানোর ঝামেলা থাকে না।
  • ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে অভাবনীয় পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঘরে বসে ভর্তি ফরম পূরণ পরীক্ষার ফলাফল জানা ইত্যাদি খুব সহজ।
  • কৃষি ক্ষেত্র ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ। কৃষি সেবায় পরামর্শ প্রদান এবং বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সমাধান এই প্রযুক্তির মাধ্যমে হয়ে থাকে।
  • ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে আবহাওয়ার খবরও পাওয়া যায়। যেমন ঘূর্ণিঝড় শুরু হওয়ার পূর্ববর্তী আভাস দিয়ে জনগণকে সতর্ক করে।

প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে মানুষের জীবনকে সহজ এবং আরামদায়ক করে তুলেছে। নাগরিক সেবা গ্রহণে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারে শুধু গুরুত্বপূর্ণ না এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষ অল্প সময়ে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান খুঁজে পায়। তাই বলা যায় প্রযুক্তি নাগরিক বা মানব জীবনে আমল পরিবর্তন নিয়ে এসেছে।

নাগরিক সেবা ও ই-কমার্সের সুবিধা

নাগরিক সেবা ও ই কমার্স সুবিধা অনেক। ডিজিটাল প্রযুক্তিগত মাধ্যম ব্যবহার করে নাগরিক সেবা ও ই-কমার্স এর সেবায় যাতায়াতের সময় ও খরচ কমে যায়। অল্প পরিমাণ চার্জের বিনিময়ে কেনাকাটাসহ অন্যান্য সেবা বা সুবিধাগুলো আমরা ভোগ করে থাকি। এই সুবিধাগুলোর কারণে ডিজিটাল প্রযুক্তির নাগরিক ও ই-কমার্স সেবা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নাগরিক সেবা ও ই-কমার্সের সুবিধা গুলো কি কি জেনে নেওয়া যাক-
  • খরচ কমে যায় এবং অল্প খরচে এসব সেবা পাওয়া যায়
  • অল্প সময়ে সেবা পাওয়া যায়
  • সেবা দাতা এবং গ্রহীতার মধ্যে যোগাযোগ সহজ হয়
  • যে কোন জায়গা বা ঘরে বসে পণ্য ক্রয় করা যায়
  • নিজের কোন পণ্য থাকলে সেগুলো সেগুলো ঘরে বসে বিক্রি করা যায়
  • সশরীরে না গিয়েও পণ্য নির্বাচন করা এবং দাম ও মান ইত্যাদি নির্ধারণ করা যায়
  • অল্প খরচে সব ধরনের আধুনিক সেবা গ্রহণ করা যায়
  • ডিজিটাল প্রযুক্তির অন্যান্য আরও ব্যবহার
  • অপরিচিত কোথাও যেতে চাইলে ডিজিটাল প্রযুক্তি গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে খুব সহজেই সেখানে যাওয়া যায়
  • যানবাহনের টিকটি কাটা যায়
  • হোটেল বুকিং দেয়া যায়
  • এছাড়াও করোনার সময় সকলের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি আমলে এনে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিসসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছিল। সেই সময় ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে জুমসহ অন্যান্য এ্যপের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ও অফিসের যাবতীয় সভা সেমিনার ও অন্যান্য কাজ সম্পাদন করা হয়।
  • আর্থিক লেনদেন যেমন এক একাউন্ট থেকে অন্য একাউন্টে, এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে টাকা লেনদেন করা যায় ঘরে বসে নিমেষেই।
  • সকল প্রকার ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করা যায় যেমন- বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, ইন্টারনেট বিল, হোল্ডিং ট্যাক্স ইত্যাদি।

মন্তব্য

উপরোক্ত আলোচনায় নাগরিক সেবা গ্রহণে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন পরিশেষে বলা যায়, ডিজিটাল প্রযুক্তির ফলে আজ বাংলাদেশের নাগরিক খুব সহজেই ঘরে বসে বিভিন্ন ধরনের ই-সেবা গ্রহণ করতে পারছেন। প্রিয় পাঠক এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে এবং যদি উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার পরিবার ও বন্ধুদের সাথে এটি শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url