বাদাম তেলের স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলো জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আপনি কি বাদাম তেলের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? আজ এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাকে বাদাম তেলের স্বাস্থ্য উপকারিতা ও বাদামের তেল ত্বকে ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে পুরো পোস্টটি সম্পূর্ণরূপে মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
বাদাম তেলের স্বাস্থ্য উপকারিতা
এটি পড়লে আরো জানতে পারবেন বাদাম তেল কোথায় পাওয়া যায়, চুলের যত্নে বাদামের তেল, ত্বকের যত্নে বাদামের তেল এবং চিনাবাদাম তেলের উপকারিতা ইত্যাদি।

ভূমিকা

বাদাম তেল অত্যন্ত স্বাস্থ্য উপকারি একটি তেল। শক্তিশালী পুষ্টিগুণ থাকার কারণে এই তেলকে শ্রেষ্ঠ তেল বলা হয়ে থাকে। বাদাম তেল টপ ও চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি তেল। এছাড়া এতেলের অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা ও রয়েছে। বাদাম তেলে যেগুলো উপাদান রয়েছে সেগুলো হল প্রোটিন, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, জিংক, আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফাইবার, ভিটামিন এ, ভিটামিন ভিটামিন সি ইত্যাদি।


ত্বক, চুল এবং শারীরিক সুস্থতার জন্য বেছে নিতে পারেন বাদাম তেল। এ তেল একসাথে অনেকগুলো উপকারিতা এনে দিতে পারে। এছাড়াও বাদামের তেল রান্নাবান্নার কাজেও ব্যবহৃত হয়। মানুষের শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সবগুলো এতেলের মধ্যে রয়েছে।

পুষ্টিবিদরা শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখার জন্য প্রতিদিন পরিমাণ মতো বাদাম খাওয়ার পরামর্শ দেন। বাদামের সবগুলো উপাদান এই তেলের মধ্যে থাকায় এতে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে।

বাদাম তেলের স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলো

শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখতে যেগুলো পুষ্টিগুণ প্রয়োজন তার বেশিরভাগ এ বাদাম তেলের মধ্যে রয়েছে। বাদাম তেলের যেসব স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে সেগুলো হলো
  • বাদামের তেলে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বহুবনে বৃদ্ধি করে।
  • স্কিন এবং চর্ম সমস্যা দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় ফাটি এসিড বাদামের তেলের মধ্যে রয়েছে। স্কিনের সমস্যা দূর করার জন্য এটি খুবই কার্যকরী
  • বাদামের তেল শরীরের প্রধান জনিত সমস্যা দূর করে থাকে
  • বাদামের তেলে রিবফ্লাবিন ফসফরাস এবং কপার থাকায় শরীরে শক্তি বৃদ্ধি করে এবং শরীরকে শক্তিশালী করে তোলে।
  • ত্বকের ড্যামেজ হওয়া থেকে রক্ষা করে ভিটামিন ই । বাদামের তেলে ভিটামিন ই প্রচুর পরিমাণে থাকায় এটি ত্বকের জন্য অনেক উপকারী।
  • বাদামের তেলকে প্রাকৃতিক মশ্চারাইজার বলা হয়ে থাকে। এতে কোন ধরনের ক্ষতিকারক কেমিক্যাল থাকে না। সেজন্য এটি ত্বকের মশ্চারাইজার হিসেবে ব্যবহার উপযোগী।
  • বাদামে তেল দিয়ে শরীর ম্যাসেজ করলে সেটির মাংসপেশির জন্য খুব ভালো কাজ দেয়। এছাড়াও এটি মাংসপেশির ব্যথাও দূর করে থাকে।
  • বাদামের তেল কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সক্ষম। যারা দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় ভুগছেন তারা বাদামের তেল খেতে পারেন।
  • মিষ্টি জাতীয় এ বাদামের তেল হার্টের সুস্থতা বজায় রাখার জন্য খুবই উপকারী। এটি ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমে হার্ট সুস্থ রাখে ফলে হার্ট এটাকের ঝুঁকি কমে যায়
  • বাদামের তাইলে আয়রন থাকায় রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে অ্যানিমিয়া সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতেও বাদামের তেলের যথেষ্ট উপকারিতা রয়েছে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এই তেল খুবই উপকারী।
  • বাদামের তেল চুলের যত্নেও অধিক কার্যকরী। এই তেল চুলে ব্যবহার করার ফলে চুলের বিভিন্ন ধরনের ড্যামেজ রোদ করে চুল ঝলমলেও ঘন করে তোলে। চুলের গোড়া শক্তিশালী করে হ্রাস করে।
  • ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম ফসফরাস জিংক ইত্যাদি উপাদান বাদাম তেলের মধ্যে থাকায় এটি খেলে হাড় মজবুত করে এবং হাড়ের সুস্থতা বজায় রাখে।
  • অতিরিক্ত রক্তচাপ শরীরের জন্য বিপদজনক। নিয়মিত বাদামের তেল খেলে অতিরিক্ত রক্তচাপ কমিয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে।

চুলের যত্নে বাদামের তেল

চুলের যত্নে সকল তেলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ তেল হিসেবে বাদামের তেল বিবেচিত। বাদামের তেল ব্যবহারের ফলে চুল সুস্থ ও প্রানোজ্জ্বল হয়ে উঠবে। এছাড়াও যে চুলের ডগা ফাটা সমস্যা আছে সে চুলের জন্য বাদামের তেল অধিক কার্যকরী। নিয়মিত এ তেল ব্যবহার করলে দ্রুত চুলের ডগা ফাটা সমস্যা দূর হবে।

চুল সিল্কি ও সফট করার জন্য এই তেলের জুড়ি নেই। চুল পড়া কমাতে চাইলে বাদাম তেল মধু এবং ডিমের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করতে হবে তাহলে ধীরে ধীরে চুল পড়া কমে যাবে। চুলের গোড়া মজবুত করার জন্য চুলের গোড়ায় বাদামের তেল লাগিয়ে মেসেজ করতে হবে। তাহলে চুলের গোড়া মজবুত হবে এবং নতুন চুল গজাবে।

এভাবে চুলে তেল মাখলে চুল পরিপূর্ণ পুষ্টি গ্রহণ করতে পারবে। আবার মাথার ত্বকের সুস্থতা বজায় রাখার জন্য বাদামের তেল অনেক উপকারী। চুল ঘন ও ঝলমলে করতে চাইলে নিয়মিত বাদাম তেল ব্যবহার করুন তাহলে ধীরে ধীরে চুল ঘন ও বড় হয়ে উঠবে।

ত্বকের যত্নে বাদামের তেল

বাদাম তেল চুলের এবং স্বাস্থ্যের জন্য যেমন উপকারী তেমনি ত্বকের জন্য এটি খুবই উপকারী একটি তেল। ত্বক ভালো রাখার জন্য বাদামের তেলের উপকারিতাগুলো জেনে নেওয়া যাক-

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিঃ বাদামের তেলে আছে ভিটামিন ই যা সূর্যের ক্ষতিকর রশি থেকে ত্বককে সম্পূর্ণভাবে রক্ষা করতে সাহায্য করে এবং সেই সাথে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। নিয়মিত এ তেল ব্যবহার করলে ত্বকের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে।

ত্বকের কালো দাগ দূর করেঃ বিভিন্ন ধরনের কালো দাগ যেমন চোখের নিচে কালো দাগ, ব্ল্যাকহেডস, এবং অন্যান্য কালো দাগও দূর করে থাকে। বাদাম পেস্ট করে ত্বকের কালো দাগের উপর কিছুক্ষণ লাগিয়ে রাখলে ধীরে ধীরে দাগগুলো কমে যায়।

ত্বকের অন্যান্য সমস্যাঃ বাদাম তেল ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির সাথে সাথে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে থাকে। ত্বক সুস্থ রাখার জন্য প্রতিদিন বাদাম তেল ব্যবহার করলে ত্বকের সুস্থতা বজায় থাকে।

ত্বকের শুষ্কতা ও রুক্ষতাঃ শীতকালে ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যায় এ সময় ত্বকের বাড়তি এবং বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। বাদামের তেল ত্বকের শুষ্কতা ও রুক্ষতা দূর করতে অনেক সহযোগিতা করে থাকে। ত্বকের যত্নে শীতকালে বাদামের তেলের কার্যকারিতা অনেক বেশি।

বাদামের তেল ত্বকে ব্যবহারের নিয়ম

বাদামের তেল ব্যবহারে ধরা বাধা কোন নিয়ম নেই যে কোন ভাবে ব্যবহার করতে পারবেন। তবে ভালো ফল পাওয়ার জন্য কিছু নিয়ম মেনে ব্যবহার করতে হয়। রাতে সরাসরি নাইট ক্রিম এর বিকল্প হিসেবে এ তেল ব্যবহার করতে পারেন। মশ্চারাইজার বা লোশন এর সাথে কয়েক ফোঁটা বাদামের তেল মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন এতে একটু গুনাগুণ বেশি পাওয়া যায়।


কয়েক ফোটা বাদামের তেল এবং সমপরিমাণ গোলাপজল একসাথে মিশ্রণ করেও ব্যবহার করা যায়। সে ক্ষেত্রে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। বাদামের তেল ত্বকে ব্যবহারের ফলে ত্বক সুন্দর ও লাবণ্যময় হয়ে ওঠে।

কাঠবাদাম তেলের উপকারিতা

কাঠবাদামে আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ই। আর আমরা সকলেই জানি ভিটামিন ই আমাদের শরীরের জন্য কত উপকারি। ভিটামিন ই ত্বক ড্যামেজ হওয়া এবং রোদ থেকে রক্ষা করে। তাই শীতের সময় এই বাদাম তেল শরীরে ব্যবহারে ত্বক ড্যামেজ হওয়া থেকে রক্ষা পাবে এবং সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে এবং ত্বকের আদ্রতা ধরে রেখে স্বাস্থ্যউজ্জল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

কাঠবাদামে ফ্যাটি এসিড থাকার কারণে যেকোন চর্মরোগ দুর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কাঠবাদামে ভিটামিন ই ছাড়াও রয়েছে ভিটামিন এ, ডি, বি১, বি২ এবং ভিটামিন বি৬। এগুলো চুলের জন্য অনেক উপকারী যা চুলের গোড়া মজবুত করে, চুলকে সফট ও সিল্কি করে তোলে।

চিনাবাদাম তেলের উপকারিতা

মাটির নিচে যে বাদাম উপাদান হয় সেটি হচ্ছে চিনা বাদাম। অন্যান্য বাদামের তুলনায় এই বাদাম আমাদের সবার কাছে অনেক পরিচিত। অন্যান্য বাদামের মতই চিনা বাদামের ও স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। চীনা বাদামে স্বাস্থ্য উপকারিতা থাকার কারণে এর তেল অনেক উপকারিতা রয়েছে। চীনা বাদামের তেলের উপকারিতা জেনে নেওয়া যাক-

ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ চিনাবাদামে ফাইবার নামক উপাদান রয়েছে যা পেটের ক্ষুধা কমিয়ে অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে। চিনা বাদাম তেল বা চর্বি জাতীয় খাবার হওয়া সত্বেও ওজন অতিরিক্ত বৃদ্ধি করে না বরং ওজন কমিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখে।

হজম শক্তি বৃদ্ধি করেঃ হজম শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য চিনা বাদামের তেল যথেষ্ট কার্যকরী। এ তেল ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির সাথে সাথে ভালোভাবে হজম প্রক্রিয়া চালু রাখে। খাদ্য সঠিকভাবে হজম করতে পারলে শরীরের বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

হাড়ের জন্য উপকারীঃ চীনা বাদামের তেল হাড়ের জন্য অনেক উপকারী। হাড়ের বিভিন্ন জয়েন্টের ব্যথা ও বাতের ব্যথা দূর করার জন্য এই তেলের প্রয়োজনীয়তা অনেক। এ তেল দিয়ে ব্যথার স্থানে মেসেজ করলে ব্যথা ধীরে ধীরে কমে যায়।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেঃ চিনা বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম। এটি শরীরে ম্যাগনেসিয়াম এর চাহিদা পূরণ করার সাথে সাথে রক্তচাপ ও কমাতে পারে। গবেষকরা বিভিন্নভাবে গবেষণা করে বলেছেন ম্যাগনেসিয়াম রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।

চিনা বাদাম ত্বক ও চুলের জন্য উপকারীঃ অন্যান্য বাদামের তেলের মতই চিনাবাদামের তেল ত্বক ও চুলের জন্য অনেক উপকারী। ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য চিনা বাদামের তেল নিয়মিত ব্যবহার করতে হবে।

হাটের সুস্থতায়ঃ চিনা বাদামের তেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাটি এসিড যেটি হাটের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ফাটি আসিড ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত এই তেল খেলে হাটের সুস্থতা বজায় রেখে হার্ট এটাকের ঝুঁকি কমিয়ে নিয়ে আসবে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ পুষ্টিহীন শরীরে রোগ জীবাণু সবসময় আঁকড়ে ধরে। কিন্তু চীনা বাদামের তেলে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি থাকায় এটি খেলে শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয়ে যায় ফলে রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতাও বেড়ে যায়।

বাদাম তেল কোথায় পাওয়া যায়

বাদাম তেলের স্বাস্থ্য উপকারের কথা আমরা জানলাম কিন্তু এ তেল কোথায় পাওয়া যায় এ সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা।এই তেল কোথায় পাওয়া যায় এ সম্পর্কে আমরা কিছুটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। বাদাম তেল যেকোনো সুপার শপে বা শপিংমলে পাওয়া যায়। এছাড়া মুদিখানার দোকানে এ তেল পাওয়া যায় আবার ফেসবুক পেজের মাধ্যমে অনলাইনের যারা সেল করে করে সেখান থেকে পাওয়া যায়।

বাদামের তেল কেনার সময় অবশ্যই দেখে শুনে কিনবেন কেননা বাজারে বিভিন্ন ধরনের ভেজাল জিনিস বের হচ্ছে। ভেজাল বাদামের তেলে উপকারের তুলনায় বেশি ক্ষতিকর।

মন্তব্য

উপরোক্ত আলোচনায় বাদাম তেলের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা পেয়েছেন পরিশেষে বলা যায়, বাদাম তেল শরীরের উপকারী একটি তেল। প্রিয় পাঠক এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে এবং যদি উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার পরিবার ও বন্ধুদের সাথে এটি শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url