বগুড়া জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ এবং এর ইতিহাস-বগুড়া জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত

প্রিয় পাঠক, আপনি কি বগুড়া জেলার দর্শনীয় স্থানগুলো সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? আসুন আজকে আমরা বগুড়া জেলার দর্শনীয় স্থানগুলো এবং বগুড়া জেলার ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত ও সঠিক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ বিষয়ে জানতে হলে নিচের লেখাগুলি মনযোগ সহকারে পড়ুন।
বগুড়া জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ
এই আর্টিকেলটি পড়লে আপনি আরও জানতে পারবেন- বগুড়া জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত, বগুড়া জেলার প্রাচীনতম নাম, বগুড়া কোন জনপদের অন্তর্ভুক্ত ছিল, বগুড়া জেলার আয়তন কত ইত্যাদি।

ভূমিকা

ভৌগলিক অবস্থানের দিক দিয়ে বগুড়া জেলা বাংলাদেশের উত্তর অঞ্চলে অবস্থিত। এই জেলা রাজশাহী বিভাগের অন্তর্গত একটি জেলা। উত্তরবঙ্গের রাজধানী খ্যাত এ বগুড়া জেলা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে অনেক সমৃদ্ধ। এছাড়া বগুড়া জেলাকে উত্তরবঙ্গের একটি অন্যতম বাণিজ্যিক শহর বলা হয়ে থাকে।


বাংলাদেশের বৃহত্তম জেলাগুলোর মধ্যে বগুড়া জেলা ষষ্ঠস্থানে রয়েছে এবং জনসংখ্যার দিক থেকে পঞ্চম স্থানে। বগুড়া জেলা হচ্ছে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার। এ জেলায় দেখার মত অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। ইতিহাস সমৃদ্ধ এই স্থানগুলো দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি ঐতিহাসিক।

এই দর্শনীয় স্থানগুলো দেখার জন্য দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকরা সব সময় বেড়াতে আসে। বাংলাদেশের যতগুলো সেরা দর্শনীয় স্থান রয়েছে সেগুলোর মধ্যে বগুড়া জেলার মহাস্থানগড় ও একটি। প্রাচীনকালের স্থাপনা এই মাহাস্থানগড় বগুড়া জেলার অন্তর্গত শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত।

ভ্রমন প্রিয় মানুষরা সব সময় দর্শনীয় স্থান খুঁজে বেড়ায় বিশেষ করে তাদের জন্য আমাদের আজকের এ আলোচনা।

বগুড়া জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ

বগুড়া হচ্ছে একটি প্রাচীনতম শহর এবং জেলা। এ জেলায় দেখার মত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান রয়েছে। সে স্থানগুলো হল -

মহাস্থানগড়ঃ

বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন স্থাপনাগুলোর মধ্যে মহাস্থানগড় একটি। বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় এই মহাস্থানগড় অবস্থিত। এটি প্রাচীনকালের পুন্ড্রনগর বা পুন্ড বর্ধন নামে পরিচিত ছিল। মৌয, গুপ্ত, পাল এবং সেন বংশের প্রাদেশিক রাজধানী ছিল এই মাস্থানগড়।

পরবর্তীতে রাজা পাল এই মহাস্থানগড়কে মূল রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন। মহাস্থানগড় হচ্ছে ৪০০০ বছর পূর্বের একটি স্থাপনা। প্রাচীর বেষ্টিত এই স্থাপনাটির মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন সময়ের শাসনামলের নিদর্শন।

খেরুয়া মসজিদঃ

বগুড়া শহর হতে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলায় খন্দকার ট্রোল নামক এলাকায় এই খেরুয়া মসজিদটির অবস্থিত। দেয়ালে করা শিলালিপি দেখে বোঝা যায় জওহর আলী কাঁকসালের পুত্র মির্জা মুরাদ খান ১৯৮২ সালে এ মসজিদটি নির্মাণ করেন।

এই মসজিদে রয়েছে চারটি মিনার, তিনটি গম্বুজ এবং পাঁচটি দরজা। খেরুয়া মসজিদটি ৪৩০ বছর পুরনো একটি মসজিদ।প্রাচীনতম এই মসজিদটিতে মুসল্লিরা এখনো নিয়মিত নামাজ আদায় করে।

পরশুরাম প্রাসাদঃ

বাংলার প্রাচীন সভ্যতার আরো একটি অন্যতম নিদর্শন পরশুরামের প্রাসাদ বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। প্রাচীনতম এই নিদর্শনটি মহাস্থানগড়ের সীমানার মধ্যে অবস্থিত। রাজা পরশুরামের নাম অনুসারে এই প্রাসাদের নাম রাখা হয়।

রাজা পরশুরাম ছিলেন এখানকার সর্বশেষ হিন্দু রাজা। এ প্রসাদের পাশে জিওত কুন্ড নামক একটি কূপ আছে। লোক-কথায় প্রচলিত আছে এই কূপের পানির সাহায্যে মৃত সৈনিকদের জীবিত করতেন রাজা পরশুরাম।

গোকুল মেদঃ

বগুড়া জেলার আরো একটি ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান হল বকুল মেদ। এটি বগুড়া সদর থানায় আওতাধীন গোকুল গ্রামে অবস্থিত। এই স্থানটি বেহুলা লক্ষিন্দারের বাসর ঘর অনেক নামে পরিচিত। এটি বগুড়া শহর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার এবং মহাস্থান গর থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

ভাসু বিহারঃ

বাংলাদেশের আরো একটি প্রাচীনতম প্রত্ন তান্ত্রিক নিদর্শন হলো ভাসু বিহার। ভাসু বিহার বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ থানার বিহার ইউনিয়নে অবস্থিত। সেখানকার স্থানীয় লোকজনভাসু বিহার নরপতির ধাপ নামে চেনে। এখানে রয়েছে দুইটি বৌদ্ধ বিহার এবং একটি ক্রুশাকৃতি মন্দির। এই বিহারগুলো পোড়া ইট দিয়ে তৈরি।

বিহার ধাপঃ

বিহার ধাপ বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বিহার ইউনিয়নে অবস্থিত। এই গ্রামের পূর্ব-পশ্চিম এবং দক্ষিণ এই তিন দিকে নাগর নদী প্রবাহিত। স্থানীয়দের কাছে এই স্থানটিকে তোতারাম পন্ডিতের বাড়ি নামে পরিচিত।

রানী ভবানীর বাপের বাড়িঃ

বগুড়া জেলার সান্তাহার উপজেলায় খতিয়ান গ্রামে রানিভবানীর বাপের বাড়ি অবস্থিত। রানী ভবানীর বাবার নাম ছিল জমিদার আত্মারাম চৌধুরী। সংস্কার ও সংরক্ষণের অভাবে দর্শনীয় এই স্থানটি এখন প্রায় ধ্বংসের পথে।

বগুড়া জেলার ইতিহাস

ইতিহাস অনুসন্ধান করলে জানা যায় বগুড়া জেলা ছিল একটি প্রাচীনতম নগর। এই জেলাটির নাম প্রাচীনকালে ছিল পুন্ড্রবর্ধন। মৌর্য যুগে বগুড়া জেলার নাম পুন্ড্রবর্ধন রাখা হয়। প্রাচীনকালে রাজশাহী বিভাগ ও পুন্ড্রবর্ধন অন্তর্ভুক্ত ছিল। ৯ থেকে ১২ শতাব্দী পর্যন্ত হিন্দু সেন রাজাদের দ্বারা এই নগরের শাসনকার্য পরিচালনা হতো।


পরবর্তীতে ১৩ শতাব্দীর দিকে এর শাসন ক্ষমতা মুসলমানদেরকাছে চলে যায়। ১০০ বছর পর্যন্ত সেন বংশের লোকেরা সামান্ত প্রধান হিসেবে শাসনকার্য পরিচালনা করতো। কিন্তু সে সময় তারা অনেক হিংসাত্মক হয়ে ওঠে। গৌড়ের রাজা বাহাদুর শাহ তাদের ব্যবহারে রাগান্বিত হয়ে সেখান থেকে বিতাড়িত করে।

পরবর্তীতে বগুড়া জেলার নামকরণ করেন সুলতান গিয়াস উদ্দিন বলবনের দ্বিতীয় পুত্র নাসির উদ্দিন বগরা অনুসারে। তিনি সে সময় বগুড়া জেলার শাসনকর্তা হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। ১৮২০ সালের দিকে উত্তর অঞ্চলে মাত্র তিনটি জেলা ছিল রাজশাহী, রংপুর এবং দিনাজপুর। ১৮২১ সালের দিকে কয়েকটি থানা নিয়ে পৃথকভাবে বগুড়া জেলা গঠিত হয়।

বগুড়া জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত

বগুড়া জেলাকে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বলা হয়। এই বগুড়া জেলাকে দইয়ের জন্য বিখ্যাত বলা হয়। সুস্বাদু দইয়ের নাম বললে উঠে আসে বগুড়ার কথা। এই দই খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি অনেক মজাদার। বাংলাদেশের অন্য কোন জায়গায় বগুড়ার মত সুস্বাদু দই পাওয়া যায় না। এছাড়াও এখানে রয়েছে অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান

এই স্থানগুলোর কারণেও বগুড়া জেলে একটি বিখ্যাত জেলা। বাংলাদেশে কয়েকটি সেরা দর্শনীয় স্থানের মধ্যে একটি বগুড়া জেলায় অবস্থিত যার নাম মহাস্থানগড়। প্রাচীনতম এই স্থানটিকে প্রায় মানুষই চিনে থাকেন এবং ভ্রমণ করার জন্য দূর দূরান্ত থেকে পর্যটক প্রতিদিন ভীড় করে।

মহাস্থানগড় ছাড়াও আরো কয়েকটি দর্শনীয় স্থান রয়েছে যেমন গোকুল মেদ, পরশুরামের প্রাসাদ, নাটোরের রানী ভবানীর বাপের বাড়ি, খেরুয়া মসজিদ ইত্যাদি। স্থানগুলোর কারণেও বগুড়া জেলা বিখ্যাত কেননা এর স্থানগুলো বগুড়া জেলায় অবস্থিত।

বগুড়া জেলা সম্পর্কিত কয়েকটি প্রশ্ন এবং উত্তর

প্রশ্নঃ বগুড়া জেলার ইতিহাস কি

উত্তরঃ বগুড়া জেলা ১৮২১ সালে নয়টি থানা নিয়ে গঠিত হয়েছিল তার পূর্বে এ জেলা অন্যান্য জেলার অন্তর্গত ছিল।

প্রশ্নঃ বগুড়া জেলার প্রাচীনতম নাম কি

উত্তরঃ বগুড়া জেলার প্রাচীনতম নাম হচ্ছে পন্ড্রবর্ধন।

প্রশ্নঃ বগুড়া কোন জনপদের অন্তর্ভুক্ত ছিল

উত্তরঃ বগুড়া পন্ড্র জনপদের অন্তর্ভুক্ত ছিল। রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর এবং বগুড়া জেলাকে কেন্দ্র করে ১৫ জনপথ গড়ে উঠেছিল।

প্রশ্নঃ বগুড়া জেলা কত বর্গ কিলোমিটার

উত্তরঃ বগুড়া জেলা ২৮৯৮. ২৫ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে অবস্থিত।

বগুড়া জেলার আয়তন কত

বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গে রাজশাহী বিভাগের অন্তর্গত এবং অন্যতম বাণিজ্যিক শহর হচ্ছে এই বগুড়া জেলা। বগুড়া জেলার মোট আয়তন ২৮৯৮. ২৫ বর্গ কিলোমিটার। সর্বমোট ১২টি উপজেলা নিয়ে বগুড়া জেলা গঠিত। বগুড়া জেলা বাংলাদেশের কয়েকটি বৃহত্তম জেলাগুলোর মধ্যে এর অবস্থান ষষ্ঠ। উত্তরাঞ্চলে মোট ১৬ টি জেলা আছে এই জেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনসংখ্যা বেশি বগুড়া জেলায়।

লেখকের মন্তব্যে

এই আর্টিকেল পড়ে আপনি নিশ্চই বগুড়া জেলার দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন। এ জেলার জায়গাগুলো আপনি চাইলে ঘুরে আসতে পারেন। আমি আপনাকে এতটুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি বগুড়ার সে স্থানগুলোতে গেলে আপনি নিরাশ হবে না। প্রিয় পাঠক, এই পোস্ট পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার কাছের মানুষ ও বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url