বিশ্ব ব্যাংকের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

প্রিয় পাঠক আপনি কি বিশ্ব ব্যাংকের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলী সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে এই আর্টিকেলটি অবশ্যই আপনার জন্য। আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে বিশ্ব ব্যাংকের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলী সম্পর্কে এবং বিশ্ব ব্যাংক গঠনের উদ্দেশ্য কি এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব।
বিশ্ব ব্যাংকের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলী
এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
এই আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানবেন বিশ্ব ব্যাংক কখন প্রতিষ্ঠিত হয়, বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের কার্যক্রম এবং বিশ্ব ব্যাংকের অঙ্গ সংগঠন কয়টি ইত্যাদি।

ভূমিকা

এখন বিশ্ব ব্যাংকের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলী সম্পর্কে আলোচনা করবো। বিশ্ব ব্যাংক হচ্ছে আন্তর্জাতিক একটি আর্থিক সংস্থা। বিশ্ব ব্যাংক উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে সে দেশগুলির সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশ্বব্যাংকের মূল লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য হলো গোটা বিশ্বের দরিদ্র বিমোচন করা। ১৮৯টি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে বিশ্ব ব্যাংক আন্তর্জাতিক সংস্থা। বিশ্ব ব্যাংক উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ঋণ ও অনুদান প্রদানের মাধ্যমে উন্নয়ন কর্মকান্ড নিয়ে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে।


উন্নয়নশীল দেশগুলোর দরিদ্র বিমোচন করে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের মাধ্যমে উন্নত করেউন্নত রাষ্ট্রের পরিণত করাই বিশ্ব ব্যাংকের লক্ষ্য। বিশ্ব ব্যাংক উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থায়ন, গবেষণামূলক, পরামর্শ কার্যক্রমের জন্য বিভিন্নভাবে সহায়তা করে থাকে। এ বিশ্ব ব্যাংকের দুটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলো হল ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক ফর রিকনস্ট্রাকশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট (IBRD) দ্বিতীয়টি ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েশন (IDA)।

IBRD মূলত মধ্যম আয়ের যেগুলো দেশ সেই দেশগুলোকে ঋণ প্রদান করে। IDA উন্নয়নশীল এবং দরিদ্র দেশগুলোকে সরস্বত্বে ঋণ প্রদান করে। এছাড়াও এই দেশগুলোকে ট্রাস্টি (TRUSTEE) হিসাবে অনুদান পেতে সহায়তা করে। তাই বিশ্ব ব্যাংকের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলী সম্পর্কে সকলেরই জানা প্রয়োজন।

বিশ্ব ব্যাংক কখন প্রতিষ্ঠিত হয়

বিশ্ব ব্যাংকের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলী ও এটি কখন প্রতিষ্ঠিত হয় তা আমাদের জানা প্রয়োজন। ১৯৪৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর এই আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থা বা বিশ্ব ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্ব ব্যাংকের সদর দপ্তর অবস্থিত। আইবি আরডি ও আইডিএ ছাড়াও বিশ্বব্যাংকের আরো তিনটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান আছে এগুলো হলো-
  • ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন- এটি বিভিন্ন দেশের বেসরকারি খাতে ঋণ প্রদান করে এবং কারিগরি বিষয়ে সহায়তা দিয়ে থাকে।
  • ইন্টারন্যাশনাল সেন্ট্রাল ফর সেটেলমেন্ট অফ ইনভেস্টমেন্ট
  • মাল্টিলেটারাল ইনভেস্টমেন্ট গ্যারান্টি এজেন্সি

বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের কার্যক্রম

বিশ্ব ব্যাংকের একটি সদস্য দেশ হলো বাংলাদেশ। ১৯৭২ সালে বিশ্ব ব্যাংকের সদস্য ভুক্ত হয় বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসে বিশ্ব ব্যাংকের সে সময়ের প্রেসিডেন্ট রবার্ট মাকনামারার সাথে বৈঠক করেন। তার কিছুদিন পর সে বছরের অক্টোবর মাসে প্রথম বিশ্ব ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া শুরু হয়। এরপর থেকে পর্যায়ক্রমে বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে বাংলাদেশ ঋণ নিতেই থাকে। পানি সরবরাহ খাতে, যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে এছাড়াও অন্যান্য খাতে ঋণ নিতে থাকে।

বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে বাংলাদেশের দুটি প্রকল্প তৈরি হয় সেগুলো হল বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক নির্মাণ। এছাড়াও বিশ্ব ব্যাংক ব্যবসা-বাণিজ্য খাতে কারিগারি ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করে থাকে। কিন্তু পরবর্তীতে বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতু তৈরিতে কোনরকম কোন আর্থিক সহায়তা করেননি। পদ্মা সেতু সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে সম্পন্ন করা হয়েছে। বিশ্ব ব্যাংক থেকে পদ্মা সেতু নির্মাণ করার জন্য কোন সহায়তা না পেয়ে অনেক বড় ধাক্কা পেয়েছিল বাংলাদেশ।


তখন সেই ব্যাংকের চিন্তাভাবনা ছিল বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পের ঋণ দেওয়ার সময় তারা চিন্তা ভাবনা করে দিবে। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এবং বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে দ্বারা পুনরায় সহায়তা প্রদান করে। নিচে আমরা বিশ্ব ব্যাংকের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলী নিয়ে আলোচনা করবো-

বিশ্ব ব্যাংকের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলী

বিশ্ব ব্যাংক হলো আর্থিক সহায়তা প্রদানকারী একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। বিশ্ব ব্যাংকের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলীগুলি তুলে ধরা হলো। এটি আর্থিক সহায়তা ও অনুদান প্রদানের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামো উন্নয়ন করা এ ব্যাংকের মূল উদ্দেশ্য। বিশ্বব্যাপী দরিদ্র বিমোচন করে জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে এই ব্যাংক।

মূল উদ্দেশ্য হলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থাকে নমনীয় বা সহজতর করা এবং পুঁজির বিনিয়োগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোকে ঋণ দিয়ে সে দেশগুলোর জীবনযাত্রা মান উন্নয়ন করা বিশ্ব ব্যাংকের মূল উদ্দেশ্য। সেজন্য দরিদ্র দেশগুলোকে ঋণ প্রদান করার মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা করে।

বিশ্বব্যাংকের কার্যাবলীঃ বিশ্ব ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রথম দিকে শুধু ইউরোপীয় দেশগুলোকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করত। কিন্তু পরবর্তীতে এ ব্যাংক এর সেবা ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে বিশ্বের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোকেও সহায়তা প্রধান শুরু করে। বিশ্বের মধ্যে অন্যান্য সংস্থা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে সেগুলোর মধ্যে বিশ্ব ব্যাংক অন্যতম। এর কার্যক্রম প্রসারের লক্ষ্যে তিনটি সংগঠনের উপর দায়িত্ব দেন। সে তিনটি সংগঠন হলো-
  • ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন
  • ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন
  • দাম মাল্টিন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট ওয়ারেন্ট এজেন্সি
এই সংগঠনগুলি নির্বাহী পরিচালক পরিষদের সাহায্যে যে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে সেগুলো হল-
  • উন্নয়নশীল দেশগুলোর আর্থিক উন্নয়নের জন্য ঋণ প্রদান করা
  • দরিদ্র দেশগুলোকে দরিদ্র বিমোচন ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য আর্থিক সহায়তা ও পরামর্শ প্রদান করা
  • যুদ্ধবিধ্বস্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে অর্থনৈতিক অবকাঠামোর পুনর্নির্মাণে জন্য ঋণ দিয়ে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা
  • স্বল্পোন্নত বা উন্নত দেশগুলো অনুদান এবং আর্থিক সহায়তা দিয়ে তাদের উন্নয়ন সাধিত করা।
  • বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশের প্রকল্প নির্মাণের জন্য বিশ্ব ব্যাংক ঋণ দিয়ে থাকে
  • উন্নয়নশীল দেশগুলোকে উন্নয়ন কর্মকান্ড অব্যাহত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ উপদেশ সহ কারিগরি সাহায্য প্রদান করা।

বিশ্ব ব্যাংকের অঙ্গ সংগঠন কয়টি

বিশ্ব ব্যাংকের অঙ্গ সংগঠন মোট পাঁচটি। যে পাঁচটি অঙ্গ সংগঠন নিয়ে বিশ্বব্যাংক গঠিত সেগুলো নিচে দেওয়া হল-
  • ইন্টারন্যাশনাল ব্যাঙ্ক অফ রিকনস্ট্রাকশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট সংক্ষেপে(IBRD)। ১৯৪৫ সালে ২৭ ডিসেম্বর সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৪৬ সালের জুন থেকে। এই সংগঠনের এই মোট সদস্য সংখ্যা ১৮৫। বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান কার্যাবলী(IBRD) দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে
  • ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি সংক্ষেপে(IDA) ১৯৬০ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়gIDA অন্য একটি নাম হল-Soft Lown Window
  • ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন সংক্ষেপে(IFC) ১৯৬০ সালের ২০ শে জুলাই IFC প্রতিষ্ঠিত হয়g
  • মাল্টি ল্যাটেরাল ইনভেস্টমেন্ট গ্যারান্টি এজেন্সি সংক্ষেপে(MIGA) এই সংগঠনটি ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়
  • ইন্টারন্যাশনাল সেন্ট্রাল ফর সেটেলমেন্ট ইনভেস্টমেন্ট ডিসপিউটস সংক্ষেপে(ICSID)

বিশ্ব ব্যাংক গঠনের উদ্দেশ্য কি

বিশ্ব ব্যাংক মূলত নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর উন্নয়নের জন্য ঋণ প্রদান করে আর্থিক সহায়তা করা মূল উদ্দেশ্য। পাঁচটি সংগঠন নিয়ে এ বিশ্ব ব্যাংক গঠিত যার মূল উদ্দেশ্য হলো বিশ্বব্যাপী দারিদ্রতা দূর করার লক্ষ্যে ঋণ দিয়ে আর্থিক সহায়তার প্রদান করা। এছাড়া বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আর্থিক ও উন্নয়ন এবং কারিগরি বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। বিশ্বের মধ্যে বৃহত্তম এই ব্যাংকটি অনুন্নত দেশগুলোকে আর্থিক অনুদান দিয়ে থাকে। বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান দায়িত্ব এবং উদ্দেশ্য হলো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বিভিন্নভাবে আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে উন্নয়ন নিশ্চিত করা।

১৮৯ সদস্য বিশিষ্ট এ ব্যাংকটি জনপ্রিয়তার সাথে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। বিশ্ব ব্যাংক গঠনের আরো একটি উদ্দেশ্য হলো জীবনযাত্রার মানেরও উন্নয়ন সাধনা করা। এই বিশ্ব ব্যাংক বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের অগ্রগতিকে উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঋণ প্রদানে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে আসছে।

শেষ কথা

আশা করি বিশ্ব ব্যাংকের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলী সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেয়েছেন। প্রিয় পাঠক আপনি যদি এই পোস্টটি পড়ে ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব এবং পরিবারের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url