মিষ্টি কুমড়ার বীজ খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
প্রিয় পাঠক, আপনি কি মিষ্টি কুমড়ার বীজ খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে আসুন এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে এ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এই সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে হলে সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
এই আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন মিষ্টি কুমড়ার বিচি খেলে কি হয়, মিষ্টি কুমড়ার বিচি কোথায় পাওয়া যায় এবং এর দাম কত ইত্যাদি।
ভূমিকা
মিষ্টি কুমড়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা সবাই জানি কিন্তু মিষ্টি কুমড়ার বীজের যে অনেক উপকারিতা আছে সেটা কি আমরা জানি? আমরা অনেকেই জানিনা এতে কি পরিমাণ পুষ্টিগুণ আছে এবং শরীরের জন্য তা কতটা উপকারী। মিষ্টি কুমড়ার বীজে যে সকল উপাদান রয়েছে সেগুলো শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী।
আরো পড়ুনঃ মেথি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকরিতা
মিষ্টি কুমড়ার বীজে যেগুলো পুষ্টি উপাদান রয়েছে সেগুলো হল- জিংক, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, ভিটামিন কে, ভিটামিন বি, প্রোটিন, ফাটি অ্যাসিড, ইত্যাদি ছাড়াও আরো অনেক উপাদান। পুষ্টিবিদরা গবেষণা করে বলেছেন প্রতিদিন মিষ্টি কুমড়ার বীজ খেলে শারীরিক সুস্থতা বজায় থাকে এবং এটি শরীরের বিভিন্ন সমস্যা ও ক্ষতিকর প্রভাব দূর করতে সক্ষম।
মিষ্টি কুমড়া যতটা উপকারী একটি সবজি তেমনি তার বীজও অনেক উপকারী। সেজন্য আমরা মিষ্টি কুমড়া খাওয়ার পর মিষ্টি কুমড়ার বীজগুলো ফেলে না দিয়ে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করব যাতে সেগুলো সব সময় খাওয়া যায়।
মিষ্টি কুমড়ার বীজ খাওয়ার উপকারিতা
মিষ্টি কুমড়ার বীজে নানা ধরনের পুষ্টিগুণে ভরপুর থাকার কারণে এটিকে আমরা সুপার ফুড বলে থাকি। মিষ্টি কুমড়ার বীজে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে শরীরকে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। এটি খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায় সেগুলো হল-
অনিদ্রা দূর করেঃ আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষেরই প্রধান সমস্যা হল অনিদ্রা। পরিমিত ঘুম মস্তিষ্ককে শান্ত রাখে এবং মানসিক চাপ থেকে মুক্ত রাখে। যারা দীর্ঘদিন ধরে অনিদ্রায় ভুগছেন তারা নিয়ম করে মিষ্টি কুমড়ার বীজ খেতে পারেন তাহলে অনিদ্রা দূর হবে এবং পরিমিত ঘুম হবে। কেননা মিষ্টি কুমড়ার বীজে রয়েছে সেরোটোনিন।
হার্ট সুস্থ রাখেঃ যে সকল উপাদান হার্ট সুস্থ রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সে সবগুলো উপাদান মিষ্টি কুমড়ার বীজে পাওয়া যায়। হার্ট সুস্থ রাখতে এটি খুব উপকারী একটি বীজ।
ক্ষতিকর কোলেস্টোরেল কমায়ঃ শরীরে ক্ষতিকর কোলেস্টোরেল বৃদ্ধি পেলে শরীরে ঘটে যেতে পারে বিভিন্ন ধরনের মারাত্মক সমস্যা। মিষ্টি কুমড়ার বীজ শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টোরেল কমিয়ে শরীরকে সুস্থ্য রাখতে সক্ষম।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে তারা নিয়ম করে এই বীজ খেলে উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করবে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ রক্তের শর্করা পরিমাণ কমিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করে কুমড়ার বীজ।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ মিষ্টি কুমড়ার বীজে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ মিষ্টি কুমড়ার বীজে ফাইবার ও প্রোটিন থাকায় পেটে ক্ষুধার পরিমাণ কমে যায় ফলে ওজন বাড়তে দেয় না এবং নিয়ন্ত্রণে রাখে।
বাতের ব্যথা দূর করেঃ বাতের ব্যথা প্রায় প্রত্যেকটি বয়স্ক মানুষের সহ্য করতে হয়। নিয়ম করে প্রতিদিন মিষ্টি কুমড়ার বীজ খেলে এই ব্যথা উপশম হয়।
ত্বক ও চুলের জন্য উপকারীঃ এ বীজ শুধুমাত্র শরীরের সুস্থতা বজায় রাখে না বরং এটি ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্যও ঠিক রাখে।
মিষ্টি কুমড়ার বীজ খাওয়ার নিয়ম
আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন না মিষ্টি কুমড়ার বীজ কিভাবে খেতে হয় বা খাওয়ার নিয়ম কি। এখানে আমরা মিষ্টি কুমড়ার বীজ খাওয়ার নিয়ম নিয়ে আলোচনা করব-
- সাধারণত আমরা পাকা মিষ্টি কুমড়ার বীজ খেয়ে থাকি
- এ বীজগুলো মিষ্টি কুমড়া থেকে ছাড়িয়ে ভালোভাবে ধুয়ে রোদে শুকাতে হয় তারপর চুলায় প্যান বসিয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হয় এবং তারপর খেতে হয়
- মিষ্টি কুমড়ার বীজ বিভিন্ন ধরনের রান্নার রেসিপির সাথে খাওয়া যায়
- এই বীজগুলো খালি চিবিয়েও খেতে পারবেন এবং কোন ফল বা সালাদের সাথে মিক্সড করে খেতে পারবেন
- সকালের নাস্তার সাথে এই বীজগুলো খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়
- এছাড়াও আপনি এগুলো সংরক্ষণ করতে চাইলে এয়ারটাইট বক্সে সংরক্ষণ করতে পারেন
মিষ্টি কুমড়ার বিচি খেলে কি হয়
সুস্থ্য শরীর কে না চায়। শারীরিক সুস্থ্যতা আল্লাহ তায়ালার সবচেয়ে বড় নেয়ামত। মিষ্টি কুমড়ার বিচি খেলে কি হয় এ সম্পর্কে ধারণা বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে নেই। এই বীজে যে সকল পুষ্ট উপাদান আছে সে সবগুলো উপাদানই শারীরিক সুস্থতার জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।
আরো পড়ুনঃ চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
সেজন্য যদি নিয়মিত মিষ্টি কুমড়ার বিচি খাওয়া হয় তাহলে শরীরে এই পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি কমে যাবে। ফলে শরীরের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পাবে এবং শরীর সচল থাকবে। মিষ্টি কুমড়ার বিচি অনেকে পছন্দ করে সেজন্য খায় আবার অনেকেই এর পুষ্টিগুণ জেনে সেগুলো পাওয়ার জন্য খায়।
মিষ্টি কুমড়ার ক্ষতিকর দিক
এতক্ষণ আমরা মিষ্টি কুমড়ার বীজের উপকারিতা সম্পর্কে জানলাম। মিষ্টি কুমড়ার বীজে যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি সামান্য ক্ষতিকর দিক রয়েছে সেগুলো হলো-
হজমের সমস্যা তৈরি করেঃ যাদের পেটের সমস্যা আছে বা হজমের সমস্যা আছে তাদের অতিমাত্রায় মিষ্টি কুমড়ার বীজ খাওয়া উচিত নয়। এতে করে হজমের সমস্যাসহ পেটের অন্যান্য সমস্যা বাড়তে পারে।
অতিমাত্রায় রক্তচাপ কমায়ঃ মিষ্টি কুমড়ার বীজ যেমন উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সক্ষম তেমনি বেশি খেলে নিম্ন রক্তচাপ হতে পারে।
ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রেঃ ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে খুবই উপকারী এই মিষ্টি কুমড়ার বীজ। কিন্তু এটি অধিক পরিমাণে খেলে রক্তে শর্করা অতিরিক্ত কমিয়ে ডায়াবেটিস রোগীর জন্য বিপদজনক হতে পারে।
মিষ্টি কুমড়ার বীজ সম্পর্কিত কয়েকটি প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্নঃ মিষ্টি কুমড়ার বিচি খেলে কি হয়?
উত্তরঃ মিষ্টি কুমড়ার বিচিতে যেগুলো পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ উপাদান আছে এ বিচি খেলে সবগুলো উপাদান পাওয়া যায় যা শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজন।
প্রশ্নঃ মিষ্টি কুমড়ার বীজ খেলে কি মোটা হয়?
উত্তরঃ অন্যান্য বীজের তুলনায় কুমড়ার বীজের ক্যালরি অনেকটাই কম সেজন্য পরিমাণমত মিষ্টি কুমড়ার বীজ খেলে ওজন বৃদ্ধি পায় না বরং নিয়ন্ত্রণে থাকে।
প্রশ্নঃ মিষ্টি কুমড়ার বীজের দাম কত?
উত্তরঃ ১০০ গ্রাম মিষ্টি কুমড়ার বীজ কিনতে হলে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা খরচ হবে।
প্রশ্নঃ মিষ্টি কুমড়ার বীজ কোথায় উৎপাদন হয়
উত্তরঃ মিষ্টি কুমড়ার বীজ রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো, চীন এবং ভারত এগুলো দেশে উৎপান হয়। তবে বেশিরভাগ উৎপাদন হয় চীন এবং ভারতে।
কুমড়ার বিচি কোথায় পাওয়া যায়
কুমড়ার বিচির গুণাগুণ জানার পরে এগুলো কেনার জন্য প্রশ্ন করে থাকেন যে, কুমড়ার বিচি কোথায় পাওয়া যায়। তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক-
আপনি যদি সরাসরি কুমরার বিচি পেতে চান তাহলে যে কোন মুদি দোকানে বা সুপার শপে খোঁজ করবেন। সুপার শপ এবং মুদি দোকানে কুমড়ার বিচি পাওয়া যায়। এছাড়া আপনি যদি মিষ্টি কুমড়া কিনে বিচি পেতে চান সে ক্ষেত্রে আপনি পাকা দেখে মিষ্টি কুমড়া কিনে তারপর কুমড়া থেকে বিচি গুলো ছাড়িয়ে ভালোভাবে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে বা হালকা করে ভেজে সংরক্ষণ করতে পারেন।
আবার অনলাইনে বিভিন্ন পেজে ড্রাই ফুড হিসেবে এগুলো বিক্রি করে থাকে আপনি চাইলে সেখান থেকেও নিতে পারবেন। তবে কুমড়ার বিচি কেনার আগে অবশ্যই দেখে শুনে বুঝে এবং গুণগতমান বিচার করে কিনবেন অন্যথায় খারাপ জিনিস পেতে পারেন।
মিষ্টি কুমড়া বিচির দাম কত
মিষ্টি কুমড়ার বীজ হচ্ছে যতগুলো সুপার ফুড আছে সেগুলোর মধ্যে এটি একটি। এটি অধিক গুণসম্পন্ন একটি খাদ্য। এই সুপার ফুডের গুণগত মান এবং যোগানের ভিত্তিতে এর দামের কিছুটা তারতম্য হতে পারে। কেননা ভালো জিনিসের দাম সবসময় একটু বেশিই হয় এবং চাহিদার তুলনায় যোগান বেশি হলে সে ক্ষেত্রে দাম একটু কম হয়। সচরাচর যে দামে বিক্রি হয় তা তুলে ধরা হলো-
- ১০০ গ্রাম = ১০০ থেকে ১৫০ টাকা
- ২০০ গ্রাম= ২০০ থেকে ৩০০ টাকা
- ৫০০ গ্রাম= ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা
- ১০০০ গ্রাম বা এক কেজি= ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা
শেষ কথা
উপরের বিষয়বস্তু আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, মিষ্টি কুমড়ার বীজ শরীরের জন্য অনেক উপকারী একটি খাদ্য। যা আমাদের প্রতিটি মানুষেরই সুস্থ্যতা বজায় রাখার জন্য নিয়মিত খাওয়া উচিত। প্রিয় পাঠক, আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধুদের এবং কাছের মানুষদের সাথে শেয়ার করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url