চিরতা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আপনি কি চিরতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় নক করেছেন। আমরা আপনাকে এই পোস্টের মাধ্যমে চিরতা খাওয়ার উপকারিতা এবং খালি পেটে চিরতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
চিরতা খাওয়ার উপকারিতা
এ পোস্ট পড়লে আপনি আরো জানতে পারবেন চিরতা কতদিন খাওয়া যায়, চিরতা খাওয়ার নিয়ম এবং চিরতা খাওয়ার অপকারিতা ইত্যাদি।

ভূমিকা

চিরতা একটি ঔষধি ভেষজ উদ্ভিদ। এই উদ্ভিদটি ভারতের বিভিন্ন জায়গায় প্রচুর পরিমাণে জন্ম। এটি ভারতে পাওয়া গেলেও প্রথমে আবিষ্কৃত হয় ইউরোপে। চিরতা এখন বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া যায়। চিরতাকে বিভিন্ন জন বিভিন্ন নামে চিনে থাকে। ঔষধি গুণসম্পন্ন এ ভেষজ উদ্ভিদের পাতা ও শিকড় অনেক তিতা কিন্তু এর ফল অনেক মিষ্টি। স্বাদে তিতা হলেও এই ভেষজ উদ্ভিদটি স্বাস্থ্য উপকারিতায় ভরপুর।


প্রাচীনকাল থেকে এই চিরতা বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কেননা এই চিরতায় রয়েছে অনেক মহাঔষধিগুণ। চিরতার আয়ুর্বেদশাস্ত্রে ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। এই পোষ্টে চিরতা খাওয়ার উপকারিতা, অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম সম্বন্ধে আমরা আলোচনা করব।

চিরতা খাওয়ার উপকারিতা

চিরতা একটি ঔষধি গুণসমৃদ্ধ ভেষজ উদ্ভিদ। এর পাতা ও শিকড় স্বাদে অনেক তিতা হলেও এ ভেষজ উদ্ভিদটি স্বাস্থ্য উপকারিতায় ভরপুর। নিম্নে চিরতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ

ক্ষতিকর টক্সিন বের করেঃ চিরতা পাতা খেলে শরীরের ক্ষতিকারক টক্সিন বের করে শরীরকে একেবারে ভেতর থেকে পরিষ্কার রাখে। কেননা ক্ষতিকারক টক্সিন ধীরে ধীরে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি করে। তাই এটিকে শরীর পরিষ্কারক বলা হয়ে থাকে।

শরীরকে জীবাণু মুক্ত করেঃ চিরতা পাতা অ্যান্টিসেপটিক হিসাবে কাজ করে। শরীরকে জীবাণুমুক্ত করে সুস্থ রাখে।

লিভারের সমস্যা দূর করেঃ পানি লিভারের জন্য খুবই উপকারী। যারা লিভারের সমস্যায় ভোগেন তারা প্রতিদিন চিরতার পানি পান করলে ধীরে ধীরে লিভারের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

হজমের সমস্যা দূর করেঃ হজমের সমস্যা থাকলে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হয়। চিরতার পাতা হজমশক্তি বৃদ্ধি করে এসিডিটি, বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে শরীরকে মুক্ত রাখে।

রক্তস্বল্পতা কমায়ঃ রক্তস্বল্পতা কমানোর জন্য চিরতা খুবই কার্যকরী। এতে যে সকল উপাদান রয়েছে সেগুলোর কারণে রক্তশূন্যতা কমিয়ে রক্তের পরিমাণ ঠিক রাখে।

ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখেঃ আমরা জানি চিরতা তিতা সাধ যুক্ত উদ্ভিদ। সেজন্য চিরতা ব্লাডে সুগারকমাতে সক্ষম। এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী।

জ্বর কমায়ঃ আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে জ্বর সর্দি কাশিসহ বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হয়। চার থেকে ৫ দিন চিরতা পাতা সিদ্ধ করে পানি খেলে এই সমস্যা দ্রুত সমাধান হয়ে যায়। জ্বর হলে হাত-পা ব্যথা করে সে ব্যথা দূর হয়ে যায়। ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য দিনে দুইবার খাওয়া উচিত।

এলার্জি দূর করেঃ চিরতা এলার্জি দূর করতে সক্ষম। এলার্জি দূর করার জন্য দিনে দুই থেকে তিনবার চিরতার পাতা ভিজানো পানি খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

বমি বমি ভাব দূর হয়ঃ পিত্ত-জ্বর হলে অনেক সময় বমি বমি ভাব হয় বা বমি হয়। চিরতার পাতা এই সমস্যা দূর করতে সক্ষম।

কৃমির উপদ্রব কমায়ঃ পেটে কৃমি হলে ব্যথা করে পেটের উপরের অংশ মোচড়ায, খোদামন্দা হয় এবং খাবারের অরুচি দেখা দেয়। এই সমস্যা দূর করার জন্য আধা চামচ চিরতার গুড়া মধু বা চিনির সাথে মিশিয়ে খেলে কৃমির উপদ্রব কমে যাবে।

পচা ঘা সারায়ঃ যাদের শরীরে পচা ঘা হয়েছে কিন্তু কোন ওষুধের কাজ হচ্ছে না। এক্ষেত্রে আগের দিন চিরতা পাতা গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে সেই পানি দিয়ে ঘা এর জায়গা ধুলে এই পচা ঘা দ্রুত ভালো হয়ে যায়।

খালি পেটে চিরতা খাওয়ার উপকারিতা

চিরতা মানব দেহের জন্য স্বাস্থ্যকরী একটি খাবার। অনেকেই আমরা চিরতার উপকার সম্পর্কে জানিনা বা জানলেও পছন্দ করি না। এখানে আমরা খালি পেটে চিরতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানবো। যেমন-
  • যাদের পেটের সমস্যা আছে তারা নিয়মিত চিরতা খেলে সমস্যা সেরে যাবে এবং এসিডিটির সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
  • প্রতিদিন খালি পেটে চিরতা খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং বদহজম কমে যাবে
  • চিরতা একটি মহা ঔষধিগুণ সমৃদ্ধ একটি খাদ্য যেটি রক্ত পরিষ্কার করতে সবচেয়ে ভালো কার্যকরী
  • যাদের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস আছে তারা প্রতিদিন খালি পেটে চিরতার পানি খেলে রক্তে ব্লাড সুগার কমে যাবে ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসবে
  • যাদের অ্যানিমিয়া সমস্যা আছে এবং রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা অনেক কম তাদের জন্য এই চিরতা খুবই উপকারী এটি খেলে অ্যানিমিয়া সমস্যা দূর হয়ে যাবে
  • এলার্জির সমস্যা খুবই কষ্টদায়ক যারা এই কষ্টে ভুগছেন তারা নিয়ম করে চিরতা পাতা খাবেন তাহলে এলার্জির সমস্যা কমে যাবে
  • সর্দি জ্বর এবং হাঁপানি দূর করতে চিরতার কার্যকারিতা অনেক বেশি
  • চিরতা ক্যান্সার প্রতিরোধে সক্ষম
  • এছাড়াও চিরতার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, চুল পড়া কমায়, রক্ত পরিষ্কার করে এবং রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে

চিরতা খাওয়ার নিয়ম

চিরতা খেলে শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়ে যায় তবে তা সঠিক নিয়মে খেলে। চিরতা যদি নিয়ম মেনে খাওয়া যায় তাহলে শরীরে সমস্যাগুলো ধীরে ধীরে কমতে থাকে। চিরতার যেসব স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে পরিপূর্ণভাবে পাওয়া যাবে শুধুমাত্র নিয়ম করে খেলে। ৬ থেকে ৭ গ্রাম চিরতা কুসুম গরম পানিতে রাতে ভিজিয়ে রেখে প্রতিদিন সকালে সে পানি পান করলে বিভিন্ন ধরনের রোগ নিরাময় হয়।


জ্বর হলে সেটা পানিতে দিয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিতে হবে এবং পানি এমনভাবে ফুটাতে হবে যেন তিনভাগ হয়ে যায় সে পানি ঠান্ডা করে খেলে জ্বরের প্রকোপ কমে যাবে। সর্দি কাশি এবং হাঁপানি সমস্যা দূর করার জন্য চিরতার এক চিমটি গুড়া মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে দ্রুত কাজ দিবে।

রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ভিজিয়ে রেখে তারপর সকালে উঠে সে পানি পান করলে পেটের বিভিন্ন রকম সমস্যা দূর হয়ে যাবে। এছাড়া চুল পড়া বন্ধ হওয়ার জন্য চিরতা ভিজিয়ে রেখে পানি খেলে খুব উপকারে আসবে।

চিরতা কতদিন খাওয়া যায়

চিরতার উপকারিতা পাওয়ার জন্য ৮ থেকে ১২ দিনই যথেষ্ট ১৫ দিনও খাওয়া যেতে পারে। এর চেয়ে বেশি খেলে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। চিরতা খুবই তিতা একটি ভেষজ উদ্ভিদ। অতিরিক্ত তিতা জিনিস শরীরের বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করতে পারে। সে ক্ষেত্রে আমরা যতদিন খেলে উপকারিতা পাওয়া যাবে ঠিক ততদিন খাব তার চেয়ে অধিক দিন খাওয়া থেকে বিরত থাকবো।

চিরতা সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নোত্তর

১। প্রশ্ন- চিরতা’র কাজ কি?
উত্তর- চিরতা মানব দেহের বিভিন্ন রোগ নিরাময় করে যেমন- রক্তশুণ্যতা, লিভারের সমস্যা, ডায়বেটিস, হাপানী, জ্বর-শর্দি কাশি ইত্যাদি

২। প্রশ্ন- চিরতা কি ওজন কমাতে সাহায্য করে?
উত্তর- হ্যাঁ, চিরতা ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বের করার ক্ষেত্রে চিরতার জুড়ি নেই।

৩। প্রশ্ন- চিরতা কিভাবে খাওয়া যায়?
উত্তর- রাতে চিরতা পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই পানি পান করা যায় এবং চিরতার গুড়া মধুর সাথে মিশিয়েও খাওয়া যায়।

চিরতা খাওয়ার অপকারিতা

আমরা জানি চিরতা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী একটি খাদ্য। এটি খেলে শরীরের অনেক সমস্যা দূর হয়ে যায় এবং শরীর সুস্থ থাকে। শরীর সুস্থ থাকার জন্য এটির ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমরা কি জানি এর কিছু অপকারিতা রয়েছে। চিরতা খাওয়ার উপকারিতার পরিমাণ অনেক বেশি হলেও চিরতার সামান্য কিছু অপকারিতাও রয়েছে।

যেমন যাদের কিডনি সমস্যা আছে তারা অতিরিক্ত চিরতা খেতে পারবে না খেলে কিডনির বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিবে। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চিরতা খেলে রক্তে ব্লাড সুগার একেবারেই কমে যাবে যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই বিপদজনক। অতিরিক্ত চিরতা খাওয়ার ফলে পেটের মধ্যে গোলযোগ তৈরি হতে পারে। এছাড়া গর্ভাবস্থায় চিরতা খাওয়া যাবেনা।

লেখকের মন্তব্য

আমরা জানি প্রতিটা জিনিস নিয়ম মেনে খেতে হয়। নিয়মের বহির্ভূত সবকিছুই ক্ষতিকর। তাই আমরা যত পুষ্টিগণ সমৃদ্ধ খাবারই হোক না কেন নিয়ম মেনে সেগুলো খাওয়ার চেষ্টা করব। উপরের বিষয়বস্তু বিশ্লেষণের মাধ্যমে আপনারা নিশ্চই চিরতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেয়েছেন। প্রিয় পাঠক আপনি যদি এই পোস্টটি পড়ে ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব এবং পরিবারের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url